দেশজুড়ে
সীতাকুণ্ডের ইকোপার্ক বন্ধের পথে
সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি:
দেড় মাস আগেও ইকোপার্ক যেখানে ছিল হাজারো দর্শনার্থীর পদভারে মুখরিত। কিন্তু এখন সেখানে পিনপতন নিঃস্তব্দতা। টানা অবরোধ আর হরতালের কারণে সেখানে হতাশা নেমে এসেছে ইজারাদার ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে।
সরেজমিনে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ফকিরহাট এলাকায় অবস্থিত ইকোপার্ক ও বোটানিক্যাল গার্ডেন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার একমাত্র সরকারি পর্যটন স্পট ইকোপার্ক ও বোটানিক্যাল গার্ডেনে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় থাকত সবসময়। একমাস পূর্বে যেসব স্থানের দোকানদারদের ব্যবসা ছিল জমজমাট, ইজারাদারের মুখে ছিল হাসি, বিভিন্ন পেশাজীবীদের ছিল চাঞ্চল্যতা সেখানে এখন নীরবতা ও চরম হতাশা বিরাজ করছে। পুরো পার্কটি এখন পর্যটকশূন্য। এতে প্রবেশ মুখে টিকিট কাউন্টারের কর্মী ও দোকানীরা একেবারেই অলস বসে আছেন। দর্শনার্থী না থাকায় মূল গেইটের পাশেই সুদৃশ্য পদ্মপুকুর ও তার অদূরেই কবি নজরুলের সুদর্শন মুরালটিকেও যেন অসহায় মনে হয়। আর পাহাড় চূড়ায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতি বিজড়িত ঝর্ণাটি অবিরাম ঝড়ে পড়লেও যেন এই অপরূপ দৃশ্য দেখার জন্য যেন কেউ নেই।
বন বিভাগের কর্মকর্তা উজ্জ্বল কান্তি মজুমদার জানান, এখানে পাহাড়ের বুকে রয়েছে চিত্তাকর্ষক সহস্রধারা ঝর্ণা, দেশি-বিদেশি প্রজাতির জেনেটিক পুল, বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ বেত, গুল্ম ভেষজ বাগন, জীব বৈচিত্র আবাস্থল, ছাত্র-শিক্ষক গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি। ১৪৫ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে, গর্জন, ধারমারা, ডেউয়া, হলুদ, গুটগুটিয়া, বাঁশপাতা, বহেরা, জারুল, পলাশ, ডুমুর, সোনালু, শিমুল, চাপালিশ, বুরা, আমলকি, হরতকি ইত্যাদি। পাহাড়ী আঁকা-বাঁকা পথে সবুজের ওই সমারোহ দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে অল্প সময়েই। অন্তত যান্ত্রিক-কর্মব্যস্ত জীবন থেকে মুক্তির স্বাদ পেতে ইকোপার্ক যে কোন ভ্রমণপিপাসু মানুষের প্রথম পছন্দের স্থান হতেই পারে। তাছাড়া ইকোপার্কের অদূরের রয়েছে পৌরাণিক স্মৃতি বিজড়িত হিন্দু মহাতীর্থ চন্দ্রনাথ ধাম-বীরুপাক্ষ। তাই পার্কে আসা অধিকাংশ দর্শনার্থীই পাহাড় চূড়ায় শত বছরের প্রাচীন মঠ-মন্দিরও দর্শন করে। তাছাড়া প্রায় ২ হাজার একর এলাকা জুড়ে অবস্থিত ইকোপার্ক ও বোটানিক্যাল গার্ডেনটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিগত ১৭ জানুয়ারি ২০০১ সালে উদ্বোধন করেন।
তিনি আরো জানান, বর্তমানে এখানে তিনিসহ মাত্র ২ জন নিরাপত্তা প্রহরী রয়েছে। তাই কোন ঘটনা ঘটলে থানা পুলিশকে খবর দিতে হয়। উঁচু-নিচু পাহাড় আর জঙ্গল হওয়ায় এখানে ছিনতাইয়ের কোন ঘটনা ঘটলে লোকবল কম থাকায় সামাল দেয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। এতে দর্শনার্থীরা নিরাপত্তার অভাবে আসতে চায় না।
পার্কের বর্তমান ইজারাদার সাহাবুদ্দিন জানান, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম মুগ্ধ হয়ে লিখেছিলেন বিখ্যাত সঙ্গীত ‘আকাশে হেলান দিয়ে পাহাড় ঘুমায় ঐ’। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ফুলে ফুলে ভরা এত সুন্দর জায়গা দেখতে অনেক মানুষই দেশ-বিদেশ থেকে আসেন। এজন্য তারা ২০১৪-১৫ইং জুন পর্যন্ত পার্কটি ইজারা নিয়েছেন ২৫ লাখ টাকায়। কিছুদিন আগেও ছিল দর্শনার্থীদের পদভারে মুখরিত কিন্তু এখন হরতাল আর টানা অবরোধের কারণে দৈনিক ৪০/৫০জন দর্শনার্থীও আসছে না। এতে লাভ তো দূরের কথা, কর্মচারীদের বেতনসহ সব মিলিয়ে দৈনিক প্রায় ২০ হাজার টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। দেশের এইরূপ অবস্থা চললে হয়তো-বা ১/২ মাসের মধ্যে পার্কটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
স্বপরিবারে পার্কে বেড়াতে আসা স্থানীয় দর্শনার্থী খালেদা আক্তার জানান, তিনি কুমিল্লার বাসিন্দা হলেও স্বামীর চাকরির কারণে সীতাকুণ্ডে বসবাস করছেন। তাই ছুটির দিনে ইকোপার্কে বেড়াতে এসেছেন। কয়েকমাস পূর্বে তিনি এখানে দেখেছিলেন হাজার হাজার মানুষের ভিড়। কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও পার্কে নিরাপত্তা নাজুক হওয়ায় দূরদূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা আসছে না।
অন্যদিকে বিভিন্ন স্পটে বসা ভ্রাম্যমাণ দোকানিরা জানান, এখানে দোকান বসাতে কোন খরচ লাগে না। প্রচুর দর্শনার্থীর আগমনের ফলে লাভও বেশি। কিন্তু হরতাল ও টানা অবরোধের কারণে ব্যবসা একেবারে বন্ধের পথে। আর এই অবস্থায় চলতে থাকলে হয়তো না খেয়ে থাকতে হবে। তাই তাদের অভিমত দুই রাজনৈতিক দল যদি আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি শান্ত না করে তাদের মত দেশে অনেক মানুষ না খেয়ে মরবে। তারা আশা করেন, হরতাল-অবরোধ বন্ধ হোক, মানুষ নিরাপদে চলাফেরা করুক-তাহলেই আবার দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠবে সীতাকুণ্ডের ইকোপার্ক।