Connect with us

দিনাজপুর

২০১৪-১৫ অর্থবছর হিলিস্থলবন্দরের রাজস্ব আহরনে ঘাটতি ১২৬ কোটি টাকা

Published

on

রাসেল হাসান , হাকিমপুর প্রতিনিধি :

গত ২০১৪-১৫ ইং অর্থবছরে হিলিস্থলবন্দরের রাজস্ব আহরনে ঘাটতির পরিমান দাড়িয়েছে ১২৬ কোটি ৩৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। পুরো অর্থবছরে রাজস্ব আহরনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন ছিল ১৫৬ কোটি ৮৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এর বিপরীতে বছর শেষে আহরন হয়েছে ৩০ কোটি ৫৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

বন্দর দিয়ে অধিক শূল্কযুক্ত পন্যের আমদানি কঠিনভাবে কমে যাওয়ার কারনে রাজস্ব আহরনে ধ্বস নেমেছে বলে জানান কাষ্টমস কতৃপক্ষ। তবে ব্যাবসায়ীরা বলছেন বন্দর দিয়ে পন্য আমদানিতে কাষ্টমসের জটিলতাসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক হয়রানির কারনে অধিক শুল্কযুক্ত পন্যের আমদানি কমেছে।

হিলিস্থলশুল্কষ্টেশন কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, গত ২০১৩-১৪ইং অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্তক হিলি স্থলবন্দরকে বেঁধে দেওয়া রাজস্ব আহরনের লক্ষমাত্রা ছিল ১৫৭ কোটি ৫৪ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। এর বিপরিতে বছর শেষে আহরন হয় ১৫৮ কোটি ৯৯ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। সে মোতাবেক ২০১৪-১৫ অর্থবছরে হিলিস্থলবন্দরের রাজস্ব আহরনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয় ১৫৬ কোটি ৮৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা। সে হিসেব মোতাবেক অর্থবছরের প্রথম জুলাই মাসে ১১ কোটি ৪২ লাখ ৪৮ হাজার টাকার বিপরীতে আহরন হয়েছে ২ কোটি ৫২ লাখ ৫ হাজার টাকা। আগষ্ট মাসে ২১ কোটি ৪৫ লাখ ৭২ হাজার টাকার বিপরীতে আহন হয়েছে ৪ কোটি ১৩ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। সেপ্টেম্বর মাসে ১৭ কোটি ৫৯ লাখ ৯৬ হাজার টাকার বিপরীতে আহরন হয়েছে ৪ কোটি ১৬ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। অক্টোবর মাসে ৫ কোটি ৯৩ লাখ ৭০ হাজার টাকার বিপরীতে আহরন হয়েছে ১ কোটি ৫৫ লাখ ৬ হাজার টাকা। নভেম্বর মাসে ১৭ কোটি ৫০ লাখ ৩৬ হাজার টাকার বিপরীতে আহরন হয়েছে ১ কোটি ৫৩ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। ডিসেম্বর মাসে ১৫ কোটি ৪১ হাজার ২১ হাজার টাকার বিপরীতে আহরন হয়েছে ১ কোটি ৯৬ লাখ ৭১ হাজার টাকা। জানুয়ারি মাসে ১৫ কোটি ১৫ লাখ ২৪ হাজার টাকার বিরপীতে আহরন হয়েছে ১ কোটি ৯৯ লাখ ৯১ হাজার টাকা। ফেব্রুয়ারী মাসে ৭ কোটি ৯৫ হাজার ৩৮ হাজার টাকার বিপরীতে আহরন হয়েছে ১কোটি ৯১ হাজার ৭ হাজার টাকা। মার্চ মাসে ১৯ কোটি ৪৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকার বিপরীতে আহরন হয়েছে ১ কোটি ৫৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এপ্রিল মাসে ১৭ কোটি ৭০ লাখ ৮৬ হাজার টাকার বিপরীতে আহরন হয়েছে ৩ কোটি ৫৪ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। মে মাসে ৩ কোটি ৬৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকার বিপরীতে আহরন হয়েছে ২ কোটি ৬২ লাখ ৯২ হাজার টাকা। জুন মাসে ৩ কোটি ৬২ লাখ ৪০ হাজার টাকার বিপরীতে আহরন হয়েছে ৩ কোটি ৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।

হিলিস্থল বন্দরের আমদানিকারক শাহিন মন্ডল জানান, হিলিস্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানিকৃত একই পন্য এর মধ্যে একটি হয়তো সাধারন মানের পন্য আসলো এটাতেও যে পরিমান শুল্ক আদায় করা হচ্ছে ও যে মুল্যের উপর শুল্ক আদায় করা হচ্ছে। আবার একই পন্য একটু ভালো মানের আসলে সেটাতেও একই পরিমান শুল্ক আদায় করা হচ্ছে। আর একটি বিষয় হিলিস্থলবন্দরের ক্ষেত্রে হচ্ছে যে একই পন্য হিলিতে যে মুল্যে শুল্কায়ন করা হচ্ছে সেপন্য বেনাপোলে ও চিটাগাং বন্দরে আরেকভাবে শুল্কায়ন করা হচ্ছে। ওইসব বন্দরে শুল্কায়ন মুল্য অনেক কম হয় এবং সেখানে পন্যভেদে পন্যের মানভেদে শুল্কায়ন মুল্য নির্ধারন করা হয়। অথচ আমাদের হিলিস্থলবন্দরে পন্যের মানভেদে পন্যের শুল্কায়নমুল্য নির্ধারনের কোন সুযোগ সুবিধা নেই। এছাড়াও কাষ্টমসের সিদ্ধান্তের দির্ঘসুত্রিতা এসব কারনে আমদানিকারকরা ধিরে ধিরে হিলিস্থলবন্দর ব্যবহারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।

বাংলাহিলি কাষ্টমস সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক শাহিনুর রেজা শাহিন বলেন, হিলিস্থলবন্দর দিয়ে ফল আমদানিতে গাড়ির চাকা অনুযাযি একটি স্লাব নির্ধারন করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর প্রতিবন্ধকতা করে দিয়েছে। এছাড়াও বন্দর দিয়ে পন্য আমদানিতে বিজিবির একটি আতংক ও ভয় আমদানিকারকদের মধ্যে রয়েছে যে তারা রাস্তার মধ্যে গাড়ি আটক করে হয়রানি করে। ফলের গাড়ি আটক করে কার্টূন খুলে মাপামাপি করেন এসব কারনে আমদানিকারকরা নিরুৎসাহিত হয়ে অন্য বন্দরে চলে যাচ্ছে। এসব কারনে হিলিস্থলবন্দর দিয়ে আমদানি রফতানি কার্যক্রম কমে গেছে এবং রাজস্ব আহরন অর্ধেকে নেমে এসেছে। এসব প্রতিবন্ধকতা যদি দুর করা যায় তাহলে হিলিস্থলবন্দর দিয়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক রাজস্ব আহরন হবে বলে আমরা মনে করি।

বাংলাহিলি কাষ্টমস সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক আব্দুর রহমান লিটন বলেন, বিগত অর্থবছর গুলোতে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত তেকে তাজা ফল, মাছ, বিভিন্ন ধরনের ফেব্য্রিকস, পার্টস, শুটকি মাছসহ অধিক শুল্কযুক্ত পন্য আমদানি হতো। বর্তমানে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পন্য আমদানির ক্ষেত্রে কাষ্টমস কর্তপক্ষসহ বিভিন্ন প্রশাশনিক জটিলতা এবং কাষ্টমস কর্মকর্তাদের এক এক বন্দরের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম নীতি অনুসরন করার কারনে এবং আমদানিকৃত পন্যের ওপর লোড দিয়ে শুল্কায়ন করার কারনে অনেক আমদানিকারকরা হিলি স্থলবন্দর দিয়ে অধিকতর শুল্ক আরোপযুক্ত পন্য গুলির আমদানি বন্ধ রেখেছেন। যার ফলে বন্দরের রাজস্ব আহরন কম হচ্ছে। তবে একই নিয়ম নীতির মাধ্যমে সকল বন্দরকে পরিচালনা করা হলে বন্দর দিয়ে যেমন শুল্কযুক্ত পন্যের আমদানি বাড়বে তেমনি বন্দরের আমদানি রপ্তানি বানিজ্য কার্যক্রম আরো গতিশীল হবে। সেই সাথে বন্দর থেকে সরকারের রাজস্ব আহরনের পরিমান আরো বেড়ে যাবে বলে তিনি মনে করেন।

হিলিস্থল শুল্কষ্টেশনের সহকারী কমিশনার (এসি) মো.সাইফুর রহমান জানান, গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মুলত আমাদের এই হিলি শুল্কষ্টেশনে রাজস্ব আহরনে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছিল ১৫৬ কোটি টাকা। এর বিপরিতে আমরা মাত্র ৩০ কোটি টাকা রাজস্ব আহরন করতে পেরেছি। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম পরিমান রাজস্ব আহরন করতে পেরেছি তার জন্য দায়ি হলো যেসব পন্যের আমদানিতে অধিক শুল্ক আরোপ রয়েছে সেসব পন্যের আমদানি গত অর্থবছরে এই বন্দর দিয়ে কম হয়েছে অন্যান্য অর্থবছরের তুলনায়। বর্তমানে এই বন্দর দিয়ে চাল, গম, পিয়াঁজ, খৈল এ জাতীয় পন্য এবং যে পন্যগুলোর উপরে সাধারনত শুল্কআরোপ নেই এই ধরনের পন্যগুলিই এ বন্দর দিয়ে বেশী আমদানি হচ্ছে। যার ফলে রাজস্ব আহরন কমে এসেছে।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *