জাতীয়
শীতে জনজীবনে স্থবিরতা, বাড়ছে শীত জনিত রোগ
ডেস্ক রিপোর্ট: মাঘ মাসের শুরুতে রাজধানীতে হঠাৎ শীত বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে রাজধানীসহ সারদেশ ।শৈত্যপ্রবাহে জনজীবনে স্থবিরতা, বাড়ছে ঠান্ডা জনিত রোগীর সংখ্যা । শীতের তীব্রতা বাড়ায় কষ্টে পড়েছে শ্রমজীবি সাধারণ মানুষ এবং বৃদ্ধ ও শিশুরা।ঢাকা,ভোলা রাজশাহী, টাঙ্গাইল,যশোর ও কুষ্টিয়া অঞ্চলসহ রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।এই শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে পারে।আকাশ অস্থায়ীভাগে আংশিক মেঘলাসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে।ঠান্ডা জনিত রোগে সবচেয়ে বেশী আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা । এঅবস্থায় চিকিৎকরা শিশুকে সবসময় গরম কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।
বিশেষ করে দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে ঘন কুয়াশার সঙ্গে হাড় কাঁপানো শীত পড়ছে। অনেক এলাকায় দিনের বেলায় গাড়ি চলছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। ফেরি চলাচলেও বিঘ্ন ঘটছে।
পঞ্চগড় সংবাদদাতা জানান, জেলায় শুরু হয়েছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। সাত দিন ধরে তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। বৃষ্টির মতো কুয়াশা পড়ছে। বইছে হিমেল হাওয়া। শীতবস্ত্রের অভাবে বেশি কাহিল হয়ে পড়েছে শিশু ও বৃদ্ধরা। গত দুদিনে সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। গরিব ও অভাবী লোকজন কাজকর্ম করতে না পারায় পরিবার নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। পঞ্চগড় হিমালয়ের কাছে হওয়ায় এ জেলায় শীতের তীব্রতা এবার সবচেয়ে বেশি। এ দিকে ঘন কুয়াশায় আলুসহ শীতকালীন সবজির আবাদ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ জেলায় কোনো আবহাওয়া অফিস নেই। তবে বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার তথ্যমতে, রাতে তাপমাত্রা ৮ থেকে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। শিশুদের জন্য বাড়তি সতর্কতা নিয়েও শেষ রক্ষা হচ্ছে না। সর্দি, কাশি লেগেই থাকছে। গত দুই দিনে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নতুন করে ৫১টি শিশু শীতজনিত রোগে ভর্তি হয়েছে।
কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা জানান, ঘন কুয়াশা ও কনকনে ঠাণ্ডায় কুড়িগ্রামের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এ জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত রাত থেকে ঘন কুয়াশা ও উত্তরের হিমেল হওয়ায় জেলায় ঠাণ্ডার প্রকোপ বেড়ে গেছে। পথ-ঘাট কুয়াশার চাদরে ঢেকে থাকায় দিনের বেলায়ও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে যানবাহন। শনিবার সকাল থেকে সূর্যের দেখা না যাওয়ায় কাজে যেতে পারছে না নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ। বেশি বিপাকে পড়েছে চরের শিশু ও বৃদ্ধসহ সাধারণ মানুষ। বোরো মওসুম শুরু হলেও কনকনে ঠাণ্ডায় মাঠে কাজ করতে পারছে না কৃষকরা।
নীলফামারী সংবাদদাতা জানান, শৈত্যপ্রবাহে কাহিল হয়ে পড়েছে নীলফামারীর মানুষ। বুধবার থেকে শুরু হওয়া ঘন কুয়াশার সাথে উত্তরের হিমেল বাতাস আর কনকনে ঠাণ্ডায় জবুথবু হয়ে পড়েছে এখানকার লোকজন। তীব্র শীতের কারণে তারা কাজে যেতে পারছে না।
তীব্র শীতে বেশি বেকায়দায় পড়েছেন ডিমলা উপজেলার তিস্তা নদীসংলগ্ন ২২টি চর এলাকার ভূমিহীন মানুষ। শীতবস্ত্রের অভাবে দিনভর খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন তারা। চার দিন ধরে চলা শৈত্যপ্রবাহ আর ঘন কুয়াশায় গতকাল দুপুর পর্যন্ত সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। দিনেও কুয়াশার কারণে ভারী যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। সৈয়দপুর বিমানবন্দরের আবহওয়া অফিসে গতকাল নীলফামারী জেলার সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ দিকে শীতের তীব্রতার কারণে শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। আর এই রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু ও বৃদ্ধ বয়সীরা। সরকারিভাবে শীতবস্ত্রের বরাদ্দ এসেছে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। ফলে এগুলো বিতরণ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনকে।
বগুড়া সংবাদদাতা জানান, গত কয়েক দিনে কাহালুতে মৃদু শৈত্যপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। হঠাৎ গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির পর শীতের তীব্রতা বেড়ে গেছে। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। ব্যবসাবাণিজ্যে নেমে এসেছে স্থবিরতা। বৈরী আবহাওয়ায় চাতাল শ্রমিকসহ শ্রমজীবী মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। বয়স্ক ও শিশুরা ডায়রিয়াসহ শীতজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কাহালু হাসপাতালে এ ধরনের রোগীর ভিড় বেড়ে গেছে। মানুষ খড়-কুটা জ্বালিয়ে শীত থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করছে। শৈত্যপ্রবাহে কৃষকের আলু ক্ষেত লেটব্রাইট মড়কে আক্রান্ত হচ্ছে। বোরো ধানের বীজতলায় চারা হলুদবর্ণ ধারণ করে পচে যাওয়ার পাশাপাশি শীতকালীন শাকসবজির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
লালমনিরহাট সংবাদদাতা জানান, কনকনে শীত আর হিমেল হাওয়ায় উপজেলার জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। রংপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গতকাল রংপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবার দুপুরেও সূর্যের দেখা মেলেনি। পুরো আকাশ ছিল কুয়াশায় ঢাকা। অনেককে খড়কুটো জালিয়ে শীত নিবারণ করতে দেখা গেছে। প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় বের হচ্ছে না কেউ। পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর কুতুবুল আলম জানান, ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে জরুরি ভিত্তিতে শীতবস্ত্র চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। বিলুপ্ত ছিটমহলগুলোতে এ পর্যন্ত ১৭০০ পিস শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে।
ময়মনসিংহ সংবাদদাতা জানান, দুই দিনের হঠাৎ বৃষ্টির পর বেড়েছে শীতের তীব্রতা। কমেছে তাপমাত্রা। জবুথবু হয়ে পড়েছে উপজেলার মানুষ। তীব্র শীতে সাধারণ মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। বাড়ছে শীতজনিত রোগ। ঠাণ্ডায় শিশু ও ছিন্নমূল খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। কর্মজীবী মানুষ অনেকটাই ঘরবন্দী হয়ে পড়েছে। মাঠে বোরো চাষের জমি তৈরির কাজও ব্যাহত হচ্ছে। হতদরিদ্র মানুষকে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। অনেকে ভিড় জমাচ্ছে পুরনো কাপড়ের দোকানে। প্রচণ্ড শীতে শিশু ও বৃদ্ধরা সর্দি-কাশিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতিদিনই হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বাস-ট্রেনসহ বিভিন্ন যানবাহনে যাত্রীসংখ্যা কমেছে।
পটুয়াখালী সংবাদদাতা জানান, কয়েক দিন ধরে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশায় উপজেলার জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। গতকাল সকাল থেকে ঠাণ্ডা বাতাসের সাথে হিমেল হাওয়া বইছে। এতে শীতের তীব্রতা বেড়ে গেছে। ঘন কুয়াশায় দিনের অধিকাংশ সময় সূর্য দেখা যাচ্ছে না। হাড় কাঁপানো শীতে কাহিল হয়ে পড়ছে বৃদ্ধ, নর-নারী ও শিশু-কিশোর। নিউমোনিয়া, সার্দি, কাশি, জ্বর, আমাশায়সহ নানা শীতজনিত রোগ দেখা দিয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে শীতকাপড়ের চাহিদা বেড়ে গেছে। বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে সিডর ও আইলাবিধ্বস্ত পায়রা পারের মেন্দিয়াবাদ গ্রামের মানুষ। লোকজন খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে।
পিরোজপুর সংবাদদাতা জানান, শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে উপকূলের জনজীবন। গত বৃহস্পতিবার বৃষ্টি হওয়ায় শীতের তীব্রতা আরো বৃদ্ধি হয়েছে। ঘন কুয়াশায় বেলা ১০-১১টা পর্যন্ত সূর্য ঢেকে থাকায় কনকনে শীতে জনজীবন ব্যাহত হচ্ছে। ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় সব চেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন জেলেরা। বয়স্ক ও শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে শীতজনিত বিভিন্ন রোগে। এ জন্য সরকারি- বেসরকারি হাসপাতালে গত দুই দিনে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। শীতের কারণে শনিবার এ অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল কম।
ভোলা সংবাদদাতা জানান, জেলার মনপুরায় তীব্র শীতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। তারা হলেনÑ সেরাজুল হক (৮৫), নুরুল হক (৭০) ও অভিনাশ নন্দি (৮৮)। শনিবার ভোরে উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের চরফয়েজ উদ্দিন ও মনপুরা ইউনিয়নে তাদের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া শীতজনিত রোগে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে চার শিশু।
দিনাজপুর সংবাদদাতা জানান, তিন দিন ধরে দিনাজপুরে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ চলছে। উত্তরের হিমেল বাতাসের সাথে ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে পথঘাট। কনকনে শীতে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দিনাজপুরের আকাশ কুয়াশার চাদরে ঢাকা মেঘাচ্ছন্ন, সারা দিনেও সূর্যের দেখা মিলেছে না। সব যানবাহন অনেক বেলা পর্যন্ত হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। তীব্র শীতের কারণে হাটবাজার রাস্তাঘাটে মানুষের উপস্থিতি কম। তীব্র শীতের কারণে দিনমজুর শ্রমিকদের জীবন জীবিকা থমকে গেছে।
ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা জানান, গত দুই দিনে জেলায় শীত জেঁকে বসেছে। শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে ছিন্নমূল মানুষ এবং শিশু ও বৃদ্ধরা। ঘন কুয়াশায় জেলার বিভিন্ন সড়কে যানবাহন হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। তীব্র শীতে গ্রামাঞ্চলের ছিন্নমূল মানুষ সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে। মানুষ আগুন জ্বালিয়ে শীত থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। শীতবস্ত্রের দামও বেড়ে গেছে। বিভিন্ন সংগঠন, ব্যবসায়ী, দানশীল ব্যক্তি কম্বল ও শীতবস্ত্র বিতরণ করছে।