Connect with us

বিচিত্র সংবাদ

পাওয়া যাবে ভূমিকম্পেরও পূর্বাভাস

Published

on

earthquake-alermঅনলাইন ডেস্ক: বিজ্ঞানীদের একাংশ বলছেন, হ্যাঁ। আর সেই পূর্বাভাস দেওয়া যাবে কলকাতায় বসেই। ‘দেবতার গ্রাস’ এড়ানো যায় না। কিন্তু দাবি, সেই ‘গ্রাসে’র পূর্বাভাস দেওয়া এখন সম্ভব হচ্ছে। তা সে দেশেই হোক বা প্রতিবেশী দেশে। ঠাওর করা যাচ্ছে এই রাজ্যে বসেই। বায়ুমণ্ডলের একটি স্তরের চরিত্র-বিচার করে ‘বিধির বিধান’ আগেভাগেই জেনে ফেলা যাচ্ছে! তা কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তার তাণ্ডব কতটা এলাকা জুড়ে চলতে পারে, তা-ও আগাম ঠাওর করা যাচ্ছে। বাসুকি কোথায়, কোন সময়ের মধ্যে মাথা নাড়া দেবে, তা অনেক ক্ষেত্রেই বলে দেওয়া যাচ্ছে। বিজ্ঞানীদের দাবি, বায়ুমণ্ডলের একটা স্তর ‘আয়নোস্ফিয়ার’-এ তড়িৎ-কণা বা আধানের তারতম্য বিচার করে বড় ভূমিকম্প কোথায়, কত দিনের মধ্যে হতে যাচ্ছে, তার পূর্বাভাস দেওয়া যাচ্ছে। বড় ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে যার সাফল্যের হার ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ। বড় ভূমিকম্পের পূর্বাভাস পেতে ভূ-বিজ্ঞান মন্ত্রকের অধীন কলকাতার ‘ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্স’ (আইসিএসপি)-এর উদ্যোগে কলকাতা, মেদিনীপুর, মালদহ, কালিম্পং ও কোচবিহার সহ রাজ্যের পাঁচটি জায়গায় বসানো হয়েছে অত্যন্ত কম কম্পাঙ্কের রেডিও তরঙ্গ মাপার ‘ভেরি লো ফ্রিকোয়েন্সি (ভিএলএফ) রেডিও সিগন্যাল রিসিভার’। কয়েক বছরের মধ্যে দেশে এমন আরও ২৫/৩০টি ‘ভিএলএফ রিসিভার’ বসতে চলেছে। এ ব্যাপারে কতটা সাফল্য এসেছে কলকাতার এই সংস্থার? বায়ুমণ্ডলের আয়নোস্ফিয়ার নিয়ে গবেষণারত পদার্থবিজ্ঞানী সুজয় পালের দাবি, ‘‘রাজ্যে বসানো পাঁচটি ভিএলএফ রিসিভারের মাধ্যমে ২০০৪ সালে সুমাত্রা, ২০১১ সালে পাকিস্তান আর এ বছর নেপালের মতো বড় ভূমিকম্পের পূর্বাভাস পাওয়া গিয়েছিল। গত কয়েক বছরে ভারতে বা প্রতিবেশী দেশে বড় ভূমিকম্পের অন্তত ৫০ থেকে ৬০ শতাংশের পূর্বাভাস সঠিক ভাবে দেওয়া গিয়েছে।’’ গত ৩০/৪০ বছরে বিশ্বের যে সব জায়গায় বড় বড় ভূমিকম্পগুলো হয়েছে, সেই সব জায়গাতেই কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক দিন আগে রাত বা সন্ধ্যার আকাশের রং অদ্ভুত রকমের লাল বা কমলা হয়ে গিয়েছিল। যেন ধ্বংসের আলো! ওই রং বিশ্লেষণ করে পূর্বাভাস দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। চেষ্টা হচ্ছে তিন ধরনের কম্পাঙ্কের রেডিও তরঙ্গের চেহারা-চরিত্র বাছ-বিচার করেও। ভেরি লো (কম্পাঙ্ক-মাত্রা তিন থেকে তিরিশ কিলো হার্ৎজ), এক্সট্রিমলি লো (কম্পাঙ্ক-মাত্রা তিনশো হার্ৎজ থেকে তিন কিলো হার্ৎজ) ও আলট্রা লো ফ্রিকোয়েন্সি (কম্পাঙ্ক-মাত্রা তিন থেকে তিনশো হার্ৎজ) রেডিও সিগন্যাল। অত্যন্ত কম কম্পাঙ্কের এই রেডিও তরঙ্গগুলো মাটিতে দশ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দূরে যেতে পারে। সমুদ্রের তলায় ভূকম্প হলে রেডেও সিগন্যালগুলো ছড়ায় আরও বেশি দূরে। জিপিএস সিগন্যাল মনিটর করেও চেষ্টা চলছে পূর্বাভাসের। তা ছাড়াও উষ্ণ প্রস্রবণ থেকে যে নিষ্ক্রিয় র‌্যাডন গ্যাস বেরয়, তা মেপেও ভূকম্পের পূর্বাভাস দেওয়ার চেষ্টা চলছে। আইসিএসপি-র পদার্থবিদ সুজয়বাবু জানাচ্ছেন, ‘‘ভূকম্পের কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক দিন আগে পৃথিবীর ওপরে বায়ুমণ্ডলের প্রায় শেষ স্তর- আয়নোস্ফিয়ারের সবচেয়ে নীচের স্তরে (ভূপৃষ্ঠের ৬০ থেকে ৯০ কিলোমিটার ওপরে) রেডিও সিগন্যালগুলোর মধ্যে একটা অদ্ভূত রকমের ‘পাগলাটে আচরণ’ বা বিশৃঙ্খলা দেখতে পাওয়া যায়। বেড়ে যায় বিদ্যুৎ-চমকের ঘটনাও। আয়নোস্ফিয়ারের ওই এলাকাটিকে বলে ‘ডি রিজিওন’। সূর্য ওঠা থেকে শুরু করে ডোবা পর্যন্ত ওই ‘ডি রিজিওনে’ আয়নোস্ফিয়ারের এক ঘন সেন্টিমিটারে দশ থেকে বড়জোর এক হাজারটি করে ইলেকট্রন কণিকা থাকে। কিন্তু দেখা গিয়েছে, ভূকম্পের কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক দিন আগে ‘ডি রিজিওনে’র প্রতি ঘন সেন্টিমিটারে সেই ইলেকট্রনের সংখ্যা দশ গুণ বেড়ে যায়। ভূ-স্তরের টেকটোনিক প্লেটগুলোর মধ্যে সঙ্ঘর্ষের জন্য
আধানের তারতম্য হয়। এটাকেই বলে ‘সিসমিক অ্যানোম্যালি’। যেখানে রেডিও সিগন্যালগুলোর মধ্যে দারুণ বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। কলকাতার বিজ্ঞানীরা ওই বিশৃঙ্খল রেডিও সিগন্যালগুলোকে ধরেই ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়ার ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ সফল হয়েছেন। বিশিষ্ট রুশ বিজ্ঞানী সের্গেই পুলিনেট্‌সের দাবি, তিনি পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে সাফল্য পেয়েছেন ৬৫ শতাংশ।’’ আইসিএসপি-র অধিকর্তা সন্দীপ চক্রবর্তী সহ কলকাতার বিজ্ঞানীদের গবেষণা পত্র প্রকাশিত হয়েছে ‘নেচার-ইন্ডিয়া’, ‘জার্নাল অফ ইন্টারন্যাশনাল জিও-ফিজিক্যাল রিসার্চ’ ও ‘ন্যাচারাল হ্যাজার্ডস অ্যান্ড আর্থ সিস্টেম সায়েন্স’-এর মতো বিশিষ্ট বিজ্ঞান জার্নালে। তাঁর কাজের জন্য এ বছরই বেলজিয়ামের ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ রেডিও সায়েন্স বা ‘উরসি’ সুজয়বাবুকে দিয়েছে ‘সেরা যুব বিজ্ঞানী’র সম্মান।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *