Connect with us

দিনাজপুর

অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ; হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবাঞ্চিত ঘোষনা

Published

on

downloadহিলি প্রতিনিধি: প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে বাস্তবায়নাধীন হাকিমপুর উপজেলার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির সামাজিক উন্নয়নে গৃহিত বিভিন্ন প্রকল্পে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.আজাহারুল ইসলাম অনিয়ম ও দুর্নীর্তির মাধ্যমে কোটি টাকার মতো আতœসাত করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে হাকিমপুরে অবাঞ্চিত ঘোষনা করেছে উপজেলা আওয়ামীলীগ ও সকল সহযোগী সংগঠনগুলো। এছাড়াও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সকল অনুষ্ঠান বয়কটের ঘোষনা দিয়েছে তারা।

প্রধানমন্ত্রী কতৃক উপজেলার আদিবাসীদের জন্য বরাদ্দের টাকা আতœসাতের বিষয়ে ব্যাবস্থা গ্রহনের জন্য গত মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিতভাবে অভিযোগ প্রদান করেন হাকিমপুর উপজেলা আদিবাসী সমাজ উন্নয়ন সমবায় কমিটির নেতৃবৃন্দ। এর আগে গতশুক্রবার রাত সাড়ে ৯টায় হিলির সিপিরোডস্থ নবারুন ক্লাব ও পাঠাগার প্রাঙ্গনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিভিন্ন অনিয়ম ও দুনীতির বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহনের জন্য হাকিমপুরবাসী সাংবাদিক সন্মেলন করেন।

অভিযোগে জানা যায়, হাকিমপুর উপজেলার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির সামাজিক উন্নয়নে গত ২০১২-১৩ অর্থবছরে বৃহৎআকারে আয়বর্ধনমুলক প্রকল্প গ্রহন করা হয়। যাতে প্রশিক্ষন কেন্দ্রের জন্য অবকাঠামো নির্মান (সেমি পাকা ভবন), কেন্দ্রের সাথে তত্বাবধায়কের থাকার ঘর, মহিলা ও পুরুষ টয়লেট, টিউবয়েল স্থাপন, প্রশিক্ষন কেন্দ্রের জন্য ফার্নিচার ক্রয়, প্রশিক্ষন কেন্দ্রের জন্য ১০টি সেলাই মেশিন ক্রয়, প্রশিক্ষক ২জন ও ১জন কর্মচারীর নুন্যতর এক বছরের বেতন, প্রশিক্ষনার্থীদের ভাতা ও প্রশিক্ষনের উপকরন, প্রশিক্ষন শেষে প্রশিক্ষনার্থীদের জন্য সেলাইমেশিন ক্রয় বাদ ক্ষুদ্র রিন, প্রশিক্ষন কেন্দ্রে বিদ্যুৎ সংযোগ, আনুসাঙ্গিক ব্যায় বাবদ ১১লাখ ৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। যার কোন কাজ এখন পর্যন্ত সম্পাদন করা হয়নি।

গত২০১৩-১৪ অর্থবছরে গাভী পালন প্রকল্প গ্রহন করা হয়, যাতে ৬টি গাভী ক্রয়, গাভীর জন্য পূর্ন সেড নির্মান, প্রকল্পস্থানে তত্বাবধায়কের থাকার ঘর টিউবয়েল ও স্বাস্থ্যসন্মত ল্যান্ট্রিন নির্মান, গাভীর খাদ্য ক্রয়, নেপিয়ার ঘাসের প্লট প্রস্তুত, বায়োগ্যাস প্লান্ট নির্মান, পানি সরবরাহের জন্য বৈদ্যুতিক মটর ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি ক্রয়, গরুপালনের সহিত সংশ্লিষ্ট ২জন শ্রমিকের নুন্যতম দুই বছরের মজুরী ও আনুষাঙ্গিক ব্যায় বাবদ ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত ২০১২-১৩, ১৩-১৪ওই দুই অর্থবছরের কোন কাজ করা হয়নি। যার পুরো টাকায় তিনি আতœসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়।

চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে উপজেলার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির সামাজিক উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হয় যার মধ্যে, শিক্ষাবৃত্তি, হতদরিদ্র ২৫জন পুরুষের মাঝে রিক্য্রা/ভ্যান বিতরন, হতদরিদ্র ২০টি পরিবারের মাঝে সেমিপাকা স্বাস্থ্যসন্মত ২০টি ল্যান্ট্রিন নির্মান, সুপেয় নিরাপদ পানির ২০টি নলকুপ স্থাপন (গোড়াপাকাকরনসহ), ২টি মন্দিরের সংস্কার, মাসব্যাপী ৫০জন পুরুষ ও মহিলাদের হস্ত শিল্প প্রশিক্ষন, প্রশিক্ষন উপকরন হিসেবে বাঁশ ও বেত ক্রয়, প্রশিক্ষন প্রদানের জন্য প্রশিক্ষকের বেতন, প্রশিক্ষন শেষে দক্ষতা অর্জনকারী ৪০ জনকে ৩হাজার টাকা করে অনুদান প্রদান ও আনুষাঙ্গিক ব্যায় বাবদ ১৮লাখ ৬৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। যার মধ্যে এখন পর্যন্ত কাওকে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়নি, হতদরিদ্র ২৫জন পুরুষের মাঝে নিন্মমানের রিক্য্রা/ভ্যান বিতরন করা হয়, হতদরিদ্র ২০টি পরিবারের মাঝে সেমিপাকা স্বাস্থ্যসন্মত ২০টি ল্যান্ট্রিন নির্মান, সুপেয় নিরাপদ পানির ২০টি নলকুপ স্থাপন (গোড়াপাকাকরনসহ), ২টি মন্দিরের সংস্কার কাজ অত্যান্ত নিন্মভাবে সম্পূর্ন করা হয়, এছাড়াও ৩০দিন ব্যাপী হস্তশিল্প প্রশিক্ষন হওয়ার কথা থাকলেও মাত্র ৬দিন তাদের প্রশিক্ষন দেওয়া হয়। এভাবে চলতি অর্থবছরের বেশ কিছু অর্থ আতœসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

বাংলাহিলি খাসমহল হাট ও বাজারের বিভিন্ন দোকান ঘর লিজ, দোকান ঘর নির্মান ও সংস্কার কাজের জন্য তার সঙ্গে দেখা না করে কাজ করলে তিনি নিজে এসে সে ঘর ভেঙ্গে দিয়ে যান পরে তার সাথে দেখা করে টাকা দিলে পরের দিনই আবারও সে ঘরের নির্মান কাজ শুরু হয়। এছাড়াও জমি খারিজ, পুকুর লিজ, খাস জমি বিতরন, গুচ্ছগ্রাম তৈরি, হাট বাজার লীজ, এছাড়াও চল্লিশ দিনের কর্মসূচী, এডিপি হতে বিভিন্ন ভুয়া প্রকল্প, অফিসার ক্লাবে ভুয়া প্রকল্প, বিভিন্ন ঠিকাদারী কাজ, মোবাইল কোর্ট, নিলাম, বিভিন্ন জাতীয় দিবসে বিশাল চাদাসহ আরো বেশ কিছু বিষয় আছে যেগুলোতে সে প্রকাশ্যে টাকা দাবী করে, যে টাকা দেয় তার কাজ হয়, টাকা দিতে অনিহা করলে তার কাজ হয়না, আরো উল্টো তাকে বিপদে ফেলে। উনি এসব বিভিন্ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে প্রায় কোটি টাকার মতো অনিয়ম দুনীর্তি করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার এসব কর্মকান্ডের ফলে সরকারের উন্নয়ন কাজে সে বাধা সৃষ্টি করে সরকারের ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষুন্ন করছে বলেও অভিযোগ করা হয়। এছাড়াও তার এসব দুর্নীর্তির বিষয়টি তদন্ত পূর্বক ব্যাবস্থা গ্রহনের জন্য ইতোমধ্যেই স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের সচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের সচিব বরাবর এলাকাবাসীর পক্ষে লিখিতভাবে আবেদন করা হয়েছে। এছাড়াও আদিবাসিদের পক্ষ থেকে পৃথকভাবে জেলাপ্রশাসকসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করে এর সুবিচার চেয়েছেন।

হাকিমপুর পৌর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মো.হারুন উর রশীদ হারুন বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে হাকিমপুর উপজেলা ও পৌর আওয়ামীলীগ ও সকল সহযোগী সংগঠনের এক জরুরী বৈঠকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কতৃক বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিমুলক কর্মকান্ড সম্পাদনের প্রতিবাদে দলীয়ভাবে রেজুলেশন করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবাঞ্চিত ঘোষনা করেছে এবং তার সকল প্রকার অনুষ্ঠান বয়কটের ঘোষনা দেন। এবিষয়ে এর আগেও এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে সাংবাদিক সন্মেলনসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ প্রদান করা হয়েছে।

বাংলাহিলি বাজারের বাসন ব্যাবসায়ী মো.আপেল মাহমুদ বলেন, বাজারে তার একটি পুরানো দোকান ঘর রয়েছে যেটি নির্মানের জন্য ইউএনও সাহেবের সাথে দেখা করে কাজ করতে চাইলে দোকান ঘর নির্মান বাবদ তিনি একলাখ দশ হাজার টাকা দাবী করেন। সেসময় তাকে দশ হাজার টাকা দিয়ে কাজ শুরু করি। পরে আবারও তিনি টাকা চেয়ে লোকপাঠায়। তাদের টাকা না দেওয়ায় তিনি নিজে এসে আমার দোকান ভেঙ্গে দিয়ে যায়।

হাকিমপুর আদিবাসী সমাজ উন্নয়ন সমবায় সমিতির সাধারন সম্পাদক গ্রেগরী সরেন জীবন জানান, আদিবাসী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির সামাজিক উন্নয়নে গৃহিত বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ন করনের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট বহুবার গেলেও তিনি আমাদের কোন কথা কর্নপাত করেননি। বরং তিনি আমাদের সাথে কোন প্রকার আলোচনা না করে একা একা চলতি অর্থবছরের কিছু কাজ করে বাকী দুই অর্থবছরের সমুদয় টাকা আতœসাৎ করেছেন। তাই উপায় অন্তর না পেয়ে সুবিচারের আশায় জেলা প্রশাসক সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছেন বলেও তিনি জানান।

হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.আজাহারুল ইসলামের নিকট এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কর্তৃক প্রদত্ত উন্নয়ন সহায়তা বরাদ্দের কাজ সরকারী নিয়মনীতি মেনেই সম্পূর্ন করা হচ্ছে। চলতি ১৫-১৬অর্থ বছরের কাজ চলছে। গত অর্থ বছরের কাজ করা হয়নি। তবে অচিরেই ওইসব কাজ করা হবে। তিনি তার বিরুদ্ধে আনয়ন করা সকল অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা ও বানোয়াট বলে অভিহিত করেন। তাকে হেয় করার জন্য এসব কাজ করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *