Connect with us

বিচিত্র সংবাদ

পাখিরাও প্রেমে পড়ে!

Published

on

bird-600x360অনলাইন ডেস্ক: প্রেম নিয়ে কত গান, কত কবিতাই না লিখেছে মানুষ। প্রেমের জন্য জীবন দিয়েছে, সমুদ্র পাড়ি দিয়েছে, তুলে এনেছে ১০৮টি নীল পদ্ম। প্রতিটি প্রেমিক মনই ভাবে পৃথিবীতে তার প্রেমই সবচেয়ে বড়। প্রতিটি মানুষই মনে করে, সেই বোধহয় প্রেমের জন্য করতে পারে সব কিছু। তবে শুধু মানুষই না, পাখিরাও প্রেমে পড়ে। আর তারাও নিশ্চয় প্রেমের জন্য সব কিছু করতে পারে। তবে কিছু করতে পারুক আর না পারুক সঙ্গী পছন্দ না হলে যে তাদেরও ভালো লাগে না সে কথাই জানাচ্ছে নতুন একটি গবেষণা।

আশ্চর্য শোনালেও গবেষকরা এমনটাই বলছেন। নারী প্রজাতির পাখিরা পুরুষ পাখিদের উদ্দীপনা দেখে সঙ্গী নির্বাচন করে। পুরুষ পাখির উদ্দীপনা দেখে নারী পাখি তার সাথে সক্রিয় সঙ্গমের সম্ভাবনা বিচার করে। এর পরই তাকে সঙ্গী হিসেবে বেছে নেয় সে। আর যদি সঙ্গী পছন্দ না হয় বা জোর করে কারো সাথে জোড়া বেঁধে দেওয়া হয় তাহলে রীতিমতো আয়ু কমে যায় তাদের।

জার্মানির ইনস্টিটিউট অব অরনিথোলজির গবেষক ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক পাখির এই আচরণের সাথে মানুষের সঙ্গী নির্বাচনের আচরণের আশ্চর্য মিল খুঁজে পেয়েছেন।

এনডিটিভি তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গবেষণার জন্য সামাজিকভাবে একগামী পাখি জেবরা ফিঞ্চকে বেছে নেওয়া হয়। এরপর নারী ও পুরুষ পাখিদের একটি কক্ষে রাখা হয়।

১৬০টি পাখির মধ্যে ২০টি নারী পাখিকে ২০টি পুরুষ পাখির মধ্যে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর স্বাধীনভাবে তাদের সঙ্গী নির্বাচন করতে সুযোগ দেওয়া হয়। এই পাখিদের বংশবৃদ্ধির জন্য আলাদাভাবে বাস করার সুযোগ দিয়ে অন্যস্থানে পাঠিয়ে দেন গবেষকরা।

এরপর অন্য পাখিদের জন্য জোড়া ঠিক করে দেন গবেষকরা। এটাকে অনেকটা এ রকম বলতে পারেন যে, মা-বাবা জোর করে সন্তানের নিজেদের পছন্দে বিয়ে দিয়ে দিলেন। বা পিতৃতন্ত্রের ধারা হিসেবে পরিবার থেকেই সঙ্গী নির্বাচন করে দেওয়া হলো।

এরপর এই জোড়াদেরও বংশবৃদ্ধির জন্য আলাদা বাস করতে বা সংসার করতে পাঠানো হয়।

এরপর এই সুখী বা কিছু অসুখী দম্পতি যাই বলি না কেন তাদের আচরণ পর্যালোচনা করতে শুরু করেন গবেষকরা। সেই সাথে পাখিদের মৃত্যুহার, সন্তানের জন্মহার ও বেঁচে থাকার লড়াইও পর্যবেক্ষণ করা হয়।

গবেষণায় দেখা যায়, যারা নিজেরা সঙ্গী নির্বাচন করেছিল তাদের ডিম উৎপাদন ও বাচ্চা জন্মের হার অন্যদের চেয়ে ৩৭ শতাংশ বেশি। যাদের জোর করে জোড়া বেঁধে দেওয়া হয়েছিল সেই পাখিদের ডিম ফুটে বাচ্চা হওয়ার হার স্বেচ্ছায় সঙ্গী নির্বাচন করা পাখিদের চেয়ে তিন গুণ কম। জোর করে জোড়া বেঁধে দেওয়া পাখিদের ডিম নষ্ট হয়ে যায় বা হারিয়ে যায়। এ ছাড়া জন্মের পর এদের সন্তানদের মৃত্যুর হারও বেশি।

গবেষকরা জানান, জন্মের প্রথম ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই এই পাখির বাচ্চারা মারা যায়। অর্থাৎ জোর করে বেঁধে দেওয়া জোড়াদের মধ্যে সন্তান লালন পালনের ক্ষেত্রেও অনীহা দেখা যায়। এমনকি এই জোড়ার পুরুষ পাখিরাও ছানার বা বাসার দেখাশোনা করার প্রয়োজনীয় দায়িত্ব পালন করে না।

এই দুই ধরনের দম্পতির জীবনাচারণে লক্ষ্যণীয় কিছু পার্থক্য দেখা যায়। বিশেষ করে নারী পাখিরা কোনোভাবেই জোর করে নির্বাচন করে দেওয়া সঙ্গীকে সহজে মেনে নিতে পারে না বা তার প্রতি প্রয়োজনীয় গুরুত্ব দিতে পারে না।

ফলে এর প্রভাব পড়ে তাদের প্রতিদিনকার জীবনে। যৌন জীবন থেকে শুরু করে সন্তান লালন পালন সবকিছুতেই অনীহা দেখা দেয় তাদের। অন্যদিকে যারা নিজের পছন্দের সঙ্গী বেছে নেয় তাদের যৌনজীবন হয় আনন্দের। ডিম উৎপাদন করে বেশি পরিমাণে আর ডিম ফুটে যে বাচ্চারা বের হয় তারাও তুলনামূলক সুস্থ থাকে। এ ছাড়া এই জোড়ার পুরুষ ও নারী উভয় পাখিই মিলেমিশে সন্তান ও পাখির বাসার প্রতি দায়িত্ব পালন করেছে।

আর এই স্পষ্ট পার্থক্য থেকেই বোঝা যায়, পাখিদের জীবনেও প্রেমের কী দারুণ প্রভাব।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *