Connect with us

প্রবন্ধ

ধর্মীয় সন্ত্রাস: ওষুধের বোতলে বিষ

Published

on

আলম বালী


 কথিত ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলোর সন্ত্রাস সৃষ্টি করার ঘটনাকে যুক্তি হিসেবে ধরে যারা কথিত ধর্মপন্থীদের সন্ত্রাস সৃষ্টি করাকে জাস্টিফাই করেন সঙ্গত কারণেই আমি তাদের বিরোধিতা করি। এ কথা ঠিক যে, সন্ত্রাসের মধ্যে ভালো সন্ত্রাস ও মন্দ সন্ত্রাস বলে কিছু নেই, নিঃসন্দেহে সকল প্রকার সন্ত্রাস পরিত্যাজ্য, কিন্তু তবু বিশেষ কিছু কারণে ধর্মকে ব্যবহার করে ঘটানো সন্ত্রাস অধিক ঘৃণিত ও ধিক্কৃত হওয়ার ন্যায়সঙ্গত যুক্তি আছে।
আমাদের সমাজে অহরহ অন্যায়, অবিচার, হত্যা, গুম, শোষণ, বঞ্চনা, দমন-পীড়ন, প্রতারণা ইত্যাদি চলে। চলে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ভয়াবহ সব অপরাধ। বিশেষ করে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রতারণা, সন্ত্রাস, সহিংসতা ইত্যাদি মহামারি আকার ধারণ করেছে। আমরা যদি এসবের গভীরে তাকাই এবং নির্মোহ চিন্তা করি, দেখতে পাবো এই সকল অন্যায়-অপরাধের মূল কারণ হচ্ছে মানুষের ধর্মহীনতা। মানুষ ধর্ম হারিয়ে ফেলেছে। ধর্মকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। ফলে ধর্ম মনে করে আমাদের সমাজ যেটাকে প্রতিপালন করে চলেছে তা শান্তি আনবে কি, নিজেই অশান্তির কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। যেমন ইসলামের লক্ষ্য হচ্ছে সমস্ত পৃথিবী থেকে ফাসাদ (অন্যায়, অবিচার) ও সাফাকুদ্দিমা (রক্তপাত) দূর করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও জাতীয় জীবনকে যাবতীয় মিথ্যার উপদ্রব থেকে রক্ষা করা, সত্যকে বিজয়ী করা। অন্য ধর্মগুলোও একই কথা বলে। মানবতার জয়গান করে। পাশবিকতার নিন্দা করে। অধর্মের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার দীক্ষা প্রদান করে। যারা ধর্মের পক্ষে লড়াই করবে তারা হবে মানবতার জন্য নিবেদিতপ্রাণ। মানুষকে নির্যাতনের হাত থেকে মুক্ত করা হবে তাদের পার্থিব লক্ষ্য। সমাজ থেকে সন্ত্রাস-সহিংসতা, অনিরাপত্তা নির্মূল করাকে তারা বাধ্যতামূলক, ফরজ জ্ঞান করবে। তারা নিজেরা জীবন দেবে, কিন্তু সমাজকে অনিরাপদ হতে দেবে না এটাই নিয়ম। এই নিয়মের ধারাবাহিকতায় অতীতে যখনই সমাজ আক্রান্ত হয়েছে, মানবতা হুমকির মুখে পড়েছে, ধর্ম এগিয়ে এসেছে ত্রাণকর্তা হিসেবে। ধর্মের সুধা পান করে সুস্থ হয়েছে রোগাক্রান্ত সমাজ, সভ্যতা।
কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, আজ যখন সমাজ নামক দেহ থেকে প্রাণপ্রদ্বীপ নির্বাপিত হবার পথে, সমাজের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে অকেজো হয়ে পড়ছে, তখন ধর্মের সুধা বলে মানুষকে বিষ খাওয়াতে উদ্যত হয়েছে ধর্মব্যবসায়ী প্রতারকরা। যারা ইসলাম প্রতিষ্ঠার কথা বলছে, নিজেদেরকে ইসলামের পক্ষশক্তি বলে পরিচয় দিচ্ছে তারাই সমাজে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। ফল হচ্ছে এই যে, মানুষ ইসলামকে ভুল বুঝছে। যে ইসলামকে সাদরে গ্রহণ করে মানুষ মুক্তির দিশা পেতে পারতো, সেই ইসলাম স¤পর্কে দিনদিন তারা বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ছে। এর জন্য দায়ী কারা? নিশ্চয়ই যারা ধর্মের পক্ষশক্তি সেজে আছে তারাই।
ধর্মনিরপেক্ষতার বিষক্রিয়ায় আমাদের এই রোগাক্রান্ত সমাজের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যত অকেজো হয়ে পড়ছে, যত তার জ্বালা-যন্ত্রণা বাড়ছে, ততই তার গলদেশে নতুন নতুন বিষ ঢালা হচ্ছে। বিষ ঢালছে ধর্মনিরপেক্ষবাদী ও ধর্মবাদী উভয়পক্ষই। কিন্তু পার্থক্য হলো- ধর্মনিরপেক্ষবাদীরা বিষ ঢালছে বিষের বোতল থেকে, আর ধর্মবাদীরা বিষ ঢালছে ওষুধের বোতল থেকে। মানুষ ওষুধ মনে করে বিষ খাচ্ছে, প্রতারিত হচ্ছে, জীবন হারাচ্ছে। ফলে কেউ সত্যিকার ওষুধ নিয়ে এলেও মানুষ তা খেতে অস্বীকার করছে। এর পরিণতি দাঁড়াচ্ছে আরও ভয়াবহ।
অর্থাৎ যারা ধর্মের নামে সন্ত্রাস করে, ধর্ম গেল ধর্ম গেল জিগির তুলে মানুষকে উস্কানি দিয়ে রক্তপাত ঘটায়, জনজীবনে বিপর্যয় নামিয়ে আনে, ফলে ধর্ম সম্পর্কে মানুষের মনে দ্বিধা-সঙ্কট তৈরি হয়, তারাই হচ্ছে অশান্তি নামক বিষবৃক্ষের শিকড়। আর অন্যরা সে বিষবৃক্ষের শাখা-প্রশাখা, লতা-পাতা। ওগুলো একটা কেটে ফেললে আরেকটা গজাবে যতক্ষণ না গাছের শেকড় কাটা যাচ্ছে। শাখা-প্রশাখা নিয়ে অবশ্যই চিন্তা করতে হবে, তবে চিন্তার কেন্দ্রে রাখতে হবে মূলকে, শেকড়কে।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *