Connect with us

রাজশাহী

‘যে বাবা সন্তানের গলায় ছুরি ধরতে পারে, সে মেরেও ফেলতে পারে’

Published

on

akter-jahan-sucide-noteডেস্ক রিপোর্ট: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আকতার জাহান জলি আত্মহত্যা করেছেন বলে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। ‘আত্মহত্যার’ আগে তিনি একটি ‘সুইসাইড নোট’ লিখে যান। শুক্রবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরি ভবনের নিজ কক্ষ থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধারের পর ওই কক্ষে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ এই নোট উদ্ধার করে।
তল্লাশির সময় পুলিশের সঙ্গে বিভাগের একাধিক শিক্ষক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আকতার জাহানের ব্যবহৃত ল্যাপটপের নীচে ওই চিরকুট পাওয়া যায়। চিরকুটে লেখার সঙ্গে আকতার জাহানের হাতের লেখার যথেষ্ট মিল রয়েছে বলে জানান শিক্ষকরা।
ওই চিরকুটে লেখা রয়েছে, ‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। শারীরিক ও মানসিক চাপের কারণে আমি আত্মহত্যা করলাম। সোয়াদকে (ছেলে) যেন ওর বাবা (একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানভীর আহমেদ) কোনোভাবেই নিজের হেফাজতে নিতে না পারে। যে বাবা নিজের সন্তানের গলায় ছুরি ধরতে পরে, সে যেকোনও সময় সন্তানকে মেরেও ফেলতে পারে বা মরতে বাধ্য করতে পারে। আমার মৃতদেহ ঢাকায় না নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেওয়ার অনুরোধ করছি।’
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দার রানা বলেন, আমার যতদূর অভিজ্ঞতা তাতে কাগজে লেখা ওই বাক্যগুলোর লেখা, আকতার জাহানের হাতের লেখার সঙ্গে মিল রয়েছে। লেখাটি আকতার জাহানের বলে মনে হয়েছে বিভাগের অন্য আরও তিনজন শিক্ষকরও।
বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিভাগের একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং ছাড়াও প্রায় মিটিংগুলোতেই আকতার জাহানকে প্রকাশ্যে গালাগালি এবং অপমানজনক কথাবার্তা বলতেন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং আকতার জাহানের প্রাক্তন স্বামী তানভীর আহমেদ। এছাড়াও বিভিন্ন সময় ফোনে হুমকি দিতেন এবং গালাগালি করে এসএমএস দিতেন।
তবে এ বিষয়ে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার আগে কিছু বলতে রাজি হয়নি নগরীর মতিহার থানার ওসি হুমায়ন কবীর।
সূত্র আরও জানায়, গত বছর তানভীর আহমেদ বিভাগের প্রভাষক সোমা দেবকে বিয়ে করেন। প্রভাষক সোমা দেব রাবি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেন। পরে প্রভাষক হিসেবে একই বিভাগে যোগ দেন। তানভীর আহমেদ তার দ্বিতীয় স্ত্রী সোমা দেব এবং প্রথম স্ত্রী আকতার জাহান একই বিভাগের হওয়ায় এনিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা হাসাহাসি করতেন। এতে চরম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হত আকতার জাহানকে।
ruএকই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক মশিহুর রহমান বলেন, ‘তার কক্ষ ভেঙ্গে প্রবেশ করে তার মুখের চারপাশে পোড়ামত একধরনের পদার্থ দেখতে পাই। সম্ভবত ফেনা জাতীয় পদার্থ। তবে সেটা আসলে কি তা ময়না তদন্ত ছাড়া বলা সম্ভব নয়।’
বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘তিনি ব্যক্তিগত কিছু সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। বেশ কিছু ডিপ্রেশন ছিলো। আর সম্প্রতি তার ছেলেকেও তিনি রাজশাহী থেকে ঢাকাতে ভর্তি করিয়েছিলেন। সেটার কারণেও মনে এক ধরনের কষ্ট কাজ করতো। তবে তিনি এসব কষ্ট খুব কমই শেয়ার করতেন।’
প্রসঙ্গত, বিকেলে শিক্ষকদের ক্লাব জুবেরি ভবনের একটি কক্ষ থেকে শিক্ষকের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে ভবনের ৩০৩ নম্বর কক্ষের দরজা ভেঙে অচেতন অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়। বিভাগের শিক্ষকরা তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
আকতার জাহান ঢাকার মহাখালী ডিওএইচএস-এর মৃত ফোরকান আলী মিয়ার মেয়ে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগেরবিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও সহযোগী অধ্যাপক তানভীর আহমেদের প্রাক্তন স্ত্রী। তিন বছর আগে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। আয়মান সোয়াদ নামে তাদের একমাত্র ছেলে ঢাকায় পড়াশোনা করেন। প্রাক্তস স্বামীর সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ ও নতুন বিয়ে করা নিয়ে তিনি ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিষয়ে বিভিন্ন মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন বলে বিভাগ সূত্র জানায়।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *