Connecting You with the Truth

নড়াইলে হাইওয়ে পুলিশের চাঁদাবাজির দৌরাত্মে অতিষ্ঠ যানবাহন চালকেরা

polliceউজ্জ্বল রায়, নড়াইল: লাইসেন্স বিহীন ও অবৈধ যানবাহন রোধকল্পে পুলিশের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বাস্তবে ক্ষুদ্র জেলা নড়াইলে তার উল্টো চিত্র। সামান্য কিছু অর্থের বিনিময়ে এ সকল যানবাহনকে অবাধে বিচরণ করতে দেওয়া হচ্ছে শহরের ব্যস্ততম শহর থেকে শুরু কওে বিভিন্ন অলিগলিতে। আর এ সকল ঘুষের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে হাইওয়েতে কর্মরত পুলিশেরা। এমনটাই অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, নড়াইল সীতারামপুর ব্রীজের উপর তুলারামপুর পুলিশ ফাঁড়ির একদল পুলিশ প্রহরায় বসে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই যে, ট্রাক, বাস থেকে শুরু করে মোটর সাইকেল আরোহীদের নিকট থেকে বিভিন্ন অংকের ঘুষ নিয়ে লাইসেন্স বিহীন গাড়িকে অনুপ্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে।

বিস্ময়জনক হলেও সত্য যে, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট নসিমন, করিমন নামক যানবাহন গুলোকে অবৈধ ঘোষণা করা হলেও এ সকল যানবাহন পুলিশের সামনে দিয়েই নির্দ্বিধায় যাত্রী বহন করে বেড়াচ্ছে। এতে করে বাড়ছে ট্রাফিক জামের চাপ এবং দুর্ঘটনা বৃদ্ধির আশংকা।

নসিমন, করিমন অবৈধ যানবাহন সত্তে¡ও এগুলো কীভাবে মূল শহর দিয়ে ঘুরে বেড়ায় এ প্রসঙ্গে নসিমন ড্রাইভার সোহেবের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, “আমরা প্রত্যেকটি নসিমনের ড্রাইভাররা পুলিশকে টাকা দিয়ে থাকি। যার বিনিময়ে তারা আমাদেরকে নসিমন চালাতে বাঁধা প্রদান করে না।” পুলিশদেও কীভাবে টাকা দিয়ে থাকেন এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি আরও বলেন, “আমরা ট্রাফিক পুলিশ থেকে শুরু করে হাইওয়ে পুলিশদের বিভিন্ন অংকে টাকা দিয়ে থাকি। সাধারণ ট্রাফিক পুলিশদের ২০ টাকা হারে এবং হাইওয়ে পুলিশদেরকে ৫০ টাকা হাওে চাঁদা দিতে হয়। এছাড়া নসিমনে যদি যাত্রীর বদলে মালপত্র থাকে তাহলে ঘুষের পরিমাণটা বেড়ে যায়।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মোটর সাইকেল আরোহী জানান, “নড়াইলের দায়িত্বে থাকা হাইওয়ে পুলিশেরা টাকা ছাড়া কিছু চেনে না। গাড়ির লাইসেন্স ঠিক থাকা সত্তে¡ও কোন না কোন অজুহাত দেখিয়ে অথবা মামলা দেওয়ার ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে মোটর সাইকেল আরোহীদের নিকট থেকে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা হারে আদায় করে। মামলা হওয়ার ভয়ে অনেকেই পুলিশের এ অত্যাচার মুখ বুঝে সহ্য করেন।”

অপর মোটর সাইকেল আরোহী পিয়াল অভিযোগ করে বলেন, কিছুদিন আগে আমার আত্মীয় মারা যাবার কারণে আমি হেলমেট না নিয়েই তাড়াহুড়ো করে মোটর সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। পরবর্তীতে সীতারামপুর ব্রীজের উপর টহলরত হাইওয়ে পুলিশের একটি টিম আমাকে থামতে নির্দেশ দিলে আমি থেমে যাই। প্রথমে তারা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আমার গাড়ির কাগজপত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্স নিরীক্ষা করে। সেখানে কোন গড়মিল পরিলক্ষিত না হওয়ায় আমার হেলমেট না থাকার কারণ জিজ্ঞাসা করে। আমি তাদের বিনীতভাবে বলি আমার আত্মীয় মারা যাবার কারণে আমি তাড়াহুড়া করে বেরিয়ে পড়েছি বলে আমার হেলমেটটা আনতে খেয়াল নেই। তখন ওই পুলিশ টিমের এক সদস্য বলে, আচ্ছা পকেটে হাত দে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, পকেটে হাত দিয়ে কী হবে? তারা প্রত্যুত্তরেবলল, স্যারকে মিষ্টি খাওয়ার জন্য কিছু দিয়ে চলে যা। প্রকাশ্যে এ রকম ঘুষ দাবি করায় আমি হতবাক হয়ে পড়ি। ঘুষ দিতে অস্বীকার করায় তারা আমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। আমার আত্মীয় মারা যাবার সত্যতা নিশ্চিত করার জন্য আমি আমার বড় ভাইয়ের ফোনে ধরিয়ে দিলে কর্তব্যরত অফিসার কর্কশ কন্ঠে বলে ওঠে প্রাইম মিনিষ্টারের বাপ ফোন দিলেও কাজ হবে না। অতঃপর আমি বাধ্য হয়ে তাদেরকে ৫০০ টাকা দিয়ে চলে আসি।”

আরও অভিযোগ উঠেছে যে, বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাথে সখ্যতা থাকায় লাইসেন্স বিহীন এবং অদক্ষ ড্রাইভার দ্বারা পরিচালিত বাস সমূহকে বিনা কৈফিয়তে চলাফেরা করার সুযোগ দেওয়া হয়। গোপন সূত্রে জানা যায়, হাইওয়ে পুলিশের কর্মকর্তাদের সাথে বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের মাশোয়ারার বন্দোবস্ত রয়েছে। যার বুনিয়াদে বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির অন্তর্ভুক্ত কোন বাসকে আটকানো হয় না।

উল্লেখ্য যে, মুমুর্ষ রোগী বহনকারী বিভিন্ন যানবাহনও হাইওয়ে পুলিশের কবল থেকে রক্ষা পায় না। এ সকল বিকেবর্জিত পুলিশের আক্রোশে পড়ে অনেক মুমুর্ষু রোগীকেও রাস্তায় পড়ে ভুগতে হয় বলে জানা গেছে।

এছাড়াও গণমাধ্যমকর্মীরা হাইওয়ে পুলিশের হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলেও অনেক সাংবাদিকের অভিযোগ রয়েছে। একাধিক সাংবাদিক জানান, সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া সত্তে¡ও বেপরোয়া এই হাইওয়ে পুলিশের টিম সাংবাদিকদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন এবং ঘুষের অর্থ না প্রদান করা পর্যন্ত কাউকে ছাড় দেওয়া হয় না। এ ব্যাপারে এক সাংবাদিক প্রতিবাদ করলে কর্তব্যরত এক পুলিশ অফিসার বলে, মাছের রাজা ইলিশ আর দেশের রাজা পুলিশ। তোর মতো সাংবাদিক পুলিশের পকেটে ভরা থাকে। পারলে কিছু করে দেখাস।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি বলেন, স্থানীয় নেতাকর্মীদের সাথে হাইওয়ে পুলিশের অন্তরঙ্গতা থাকায় অনেক অবৈধ ও লাইসেন্সবিহীন গাড়ি তাদের সুপারিশে ছেড়ে দেওয়া হয়। আর যাদের সুপারিশ করার মতো কেউ নেই তাদেরকে আর্থিক দন্ড প্রদান করতে হয় আদালত ছাড়াই এসকল পুলিশের নিকট।

হাইওয়ে পুলিশের চাঁদাবাজি সংক্রান্ত সাক্ষাৎকার গ্রহণ করার জন্য তুলারামপুর ফাঁড়ির ইনচার্জের সাথে বারবার মুঠোফোনে চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

Comments
Loading...