ভালো নাই নড়াইলের ঋষিপল্লীর নারীদের জীবন
উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: ঘরের চাল আর জীর্ণবেড়া দেখেই বোঝা যায় কেমন আছেন ঋষিপল্লীর বাসিন্দারা। আর্থিক সংকট থাকা সত্ত্বেও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে পিছিয়ে থাকতে চায় না নড়াইলের দলিত জনগোষ্ঠীর নারীরা। অগ্রসরতার দিক থেকে কিছুটা এগিয়ে থাকলেও ভালো নেই গোপীনাথপুরের ঋষিপল্লীর বাসিন্দারা। এখানে প্রায় ২৩টি পরিবার বসবাস করছে। দলিত পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও বসে নেই। নিপুণ হাতে শৈল্পিক ছোঁয়ায় নিয়ত তৈরি করছে বাঁশের চালুনি, কুলা, ডোলা, ঝুড়ি, খালৈ, দোলনাসহ বেতের আসবাবপত্র। যথেষ্ট মূলধন না থাকায় এ পেশায় খুব একটা ভালো করতে পারছেন না তারা। ঋষিপল্লীতে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, প্রতি বাড়ির নারীরা বাঁশ ও বেতের আসবাব তৈরিতে ব্যস্ত। মা-মেয়ে, বৌ-শাশুড়ি, ঠাকুরমা সকলে মিলেমিশে এক কাতারে বসে যেন বুনছে এক একটি স্বপ্ন। শত দুঃখেও এদের মুখে হাসি লেগেই আছে। সপ্তাহ শেষে একজন নারী এসব তৈরি করে আয় করেন তিনশ থেকে চারশ টাকা। কথা হয় ঋষিপাড়ার গৃহবধূ মমতা বিশ্বাসের সাথে। তিনি বলেন, আমাদের অভাবের সংসার শুধু একজনের আয়ের ওপর নির্ভর করলে চলে না। তাই আমাদেরও কাজ করতে হয়। অভাবের কারণে ছেলেটার লেখাপড়া বন্ধ করে দিতে হয়েছে। পৌর এলাকার বাসিন্দা হয়েও পাচ্ছে না তেমন কোন সুবিধা। অন্যদিকে পৌরকর বাধ্যতামূলক দিতেই হয়। বয়সের ভারে নুইয়ে গেলেও ঠিকমত পান না বয়স্কভাতা। একই অবস্থা বিধবাভাতার ক্ষেত্রেও। বয়স্কভাতার বিষয়ে অনেকটা আক্ষেপের সাথে ঋষিপাড়ার কালিদাসের স্ত্রী ৯০ বছর বয়সী পিপাসা রানী বিশ্বাস বলেন, আমার বয়স ৯০ বছরের ওপরে, আর কত বয়স হলে এই ভাতা পাব? ১০ বছর আগে বিধবা হয়েছেন উর্মীলা রানী বিশ্বাস, তিনিও জানালেন তার বর্ণনাতীত দুঃখগুলো। স্বামী মারা গেছেন বছর দশেক আগে। ছেলে-মেয়ে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে সংসার সামলাতে হচ্ছে তাকে। লোহাগড়া সমাজসেবা কর্মকর্তা হোসেনুর রহমান বলেন, এলাকার জনপ্রতিনিধিদের দেয়া তালিকা অনুযায়ী বয়স্কভাতা দেয়া হয়। এমন যদি কেউ বাদ পড়ে সেক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কখনো অনাহারে অভুক্ত থেকেও ছেলে-মেয়েদের ভরণ-পোষণ জুগিয়ে চলেছেন। আদিপেশার কদর না থাকায় দলিত পুরুষদের আয় অনেক কমে গেছে। নির্দিষ্ট কোন সামাজিক অনুষ্ঠান আর প্রচার-প্রচারণা ছাড়া বাজনদারিত্বের (ব্যান্ডপার্টি) কাজ আগের মতো তেমন হয় না। বাপ-দাদার পেশা টিকিয়ে রাখতে কেউ কেউ আবার শত প্রতিকূলতার মাঝেও চর্মকারের কাজ, সেলুনের পেশা আঁকড়ে ধরে রেখেছে। বিশেষ করে কোন নারী সংগঠন না থাকায় তাদের নিজেদের ভাগ্য উন্নয়ন অনেকটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শুধু দু’বেলা দু’মুঠো মোটা ভাত আর মোটা কাপড়েই তাদের জীবন এখন আর সীমাবদ্ধ রাখতে চায় না। তাই সরকারিভাবে তাদের ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের মাধ্যমে পুঁজি বিনিয়োগ করে উন্নয়নমুখী উন্নত প্রশিক্ষণ পেলেই তারা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে বলে দাবি ঋষিপল্লীর নারী সমাজের।