রৌমারীর যাদুর চর উচ্চ বিদ্যালয় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে
রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ
২ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পাল্টাপাল্টি মামলা, শিক্ষকদের ক্লাশ ফাঁকি, শিক্ষা কর্মকর্তার বেআইনী কর্মকান্ড, প্রভাবশালীদের দখল বাণিজ্য ও প্রতিষ্ঠান নিয়ে নগ্ন রাজনীতির কারণে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে গেছে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী যাদুরচর উচ্চ বিদ্যালয়টি। দুইজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের আধিপত্ত বিস্তারকে কেন্দ্র করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে দেখা দিয়েছে প্রতিষ্ঠান বিমূখতা। ৫ শতাধিক শিক্ষার্থীর স্থলে মাত্র ২৮-৩০জন শিক্ষার্থী নিয়ে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। উপবৃত্তির টাকা ভাগাভাগির অভিযোগ এবং বিভিন্ন আয়ের উৎস্যগুলোতে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। ফলে এ ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির করুণ পরিণতি ও ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন শিক্ষার্থী অভিভাবক ও স্থানীয় সূধীমহল।
বিদ্যালয় ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, যাদুর চর উচ্চ বিদ্যালয়ে রয়েছে ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী, ১৫ জন শিক্ষক-কর্মচারী ও ৩৮শতক জমিতে নির্মিত একটি সুপার মার্কেটসহ ১৫ একর জমি। রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের প্রাণকেন্দ্রে ১জানুয়ারী ১৯৪৬ সালে স্থাপিত হয় যাদুরচর হাই মাদরাসা। যা পরর্তীতে ১৯৬৬ সালে নাম পরিবর্তন হয়ে যাদুরচর উচ্চ বিদ্যালয় নামে যাত্রা শুরু করে। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠাকালে স্থানীয় কয়েকজন শিক্ষানুরাগী প্রতিষ্ঠানটির নামে ১৫একর জমি দান করেন। এদের মধ্যে এলাকার প্রয়াত এনায়েত দেওয়ানী, তাজউদ্দিন মৌলভী,হারু শেখ, হাজী আলফাজ, শাহেব উল¬াহ সরকারের ভুমিকা বেশি ছিল বলে জানালেন ৮০ বছর বয়সের হাজী ইস্রাফিল হক। এক সময় জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে শিক্ষার্থীরা ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটিতে আসতো শিক্ষা নিতে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ওই স্কুল মাঠে গড়ে তোলা হয় মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ ক্যাম্প। কিন্তু কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষের কারণে প্রতিষ্ঠানটি হারাতে বসেছে তার স্বকীয়তা।
বৃহসপতিবার বেলা ১২টায় সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণিতে রয়েছে গোটা বিশেক শিক্ষার্থী। ৮ম, ৯ম ও ১০ শ্রেণির ১৭টি কক্ষে ঝুলছিল তালা। শিক্ষক মিলনায়তনে শিক্ষকগণ তখন গল্পে মশগুল। প্রতিদিনের মতো মাঠে চরছিল গরু-ছাগল। প্রতিষ্ঠানের এ পরিস্থিতি দেখে প্রধান শিক্ষকের পদপ্রত্যাশি আতিউর রহমানসহ শিক্ষক মইনুল হক, আব্দুর রহিম, আফজাল হোসেন, শাহিদা আক্তার তাদের সন্তানদের পার্শ্ববর্তী যাদুরচর বালিকা ও কোমরভাঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছেন। এ ব্যাপারে তাদের বক্তব্য হলো ‘এখানে লেখাপড়ার মান মোটেই ভাল নয়।’
প্রতিষ্ঠানটির এ পরিণতি নিয়ে অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ৯ ফেব্রুয়ারী প্রধান শিক্ষক হযরত আলী অবসরে গেলে ভারপ্রাপ্ত পদটি নিয়ে শুরু হয় প্রতিযোগিতা। পরিচালনা পর্ষদ পরিপত্রে উল্লিখিত জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতেই মাজেদুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেন। কিন্তু বাধসাধেন সহকারী শিক্ষক আতিউর রহমান। পরিচালনা পর্ষদের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে একে একে ১১টি মামলা করেন তিনি। কিন্তু সকল মামলা খারিজ করেন বিজ্ঞ আদালত। শুধু তাই নয়, মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট তার (আতিউর রহমান) বিরুদ্ধে স্কুলের সকল কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। পাশাপাশি আদালত অবমাননার জন্য গত ২৭জানুয়ারী ২০১৪ইং তারিখে হাইকোর্ট বিদ্যালয় পরিদর্শক রবীন্দ্র নারায়ন ভট্টাচার্য, জেলা মাধ্যমিক শির্ক্ষা শামসুল আলম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রেজাউল কবীর, সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তা সাইদুর রহমান ও আতিউর রহমানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা কেন গ্রহন করা হবে না মর্মে শোকজ করেন। মামলা নম্বর ৩৪০/২০১৩।অভিযোগ উঠেছে এরপরও ওই মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শিক্ষক আতিউর রহমানের মাধ্যমে উবৃত্তির টাকা উত্তোলন ও ভাগাভাগিসহ বিভিন্ন কর্মকান্ড করান। । সম্প্রতি কমিটির মেয়াদ শেষ হলে গোপনে ৩ বার কমিটি গঠনের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
১৬নভেম্বর ২০১৩ সালে কর্ত্তিমারী বাজারে বিদ্যালয়ের নিজস্ব ৩৮শতক জায়গায় নির্মিত ১৫কক্ষবিশিষ্ট সুপার মার্কেটটি একটি ভূমিদস্যুচক্র রাতের আধারে অবৈধভাবে দখল করে নেয়।এ নিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থী অভিভাবকরা মানব বন্ধন উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান ৭দিনের মধ্যে দখলমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিলেও আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
সাবেক বিদ্যালয় পরিচলান পর্ষদের সদস্য রজব আলী জানান, ‘ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদ নিয়ে রশি টানাটানির কারণ হলো প্রতিষ্ঠানটিতে বেশ কয়েকটি পদ ফাঁকা হয়েছে। এছাড়াও স্কুলটির রয়েছে অনেক সম্পত্তি। আর দুটি গ্রুপের বিরোধ থাকায় স্কুলটিতে শিক্ষার নি¤œগামী হয়েছে। হয়ে পড়েছে প্রায় শিক্ষার্থী শূণ্য।
উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রভাষক আব্দুল মালেক জানান, ১৫ একর জমি আর ৫ কোটি টাকা মূল্যের সুপার মার্কেটটিই স্কুলের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সম্পত্তিগুলো হাতিয়ে নেয়ার জন্য প্রভাবশালী দুটি গ্রুপ ষড়যন্ত্র করছে। মাঝথেকে ধ্বংস হচ্ছে বিদ্যালয়টি। আমরা শিক্ষা মন্ত্রীর নিকট আবেদন জানাই তিনি যেন প্রতিষ্ঠানটিকে এ পরিণতি থেকে উদ্ধার করেন।
একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে যাচ্ছে এ বিষয়ে কি ব্যবস্থা নিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান জানান, ‘এটা বেসরকারী প্রতিষ্ঠান এখানে আমার করার কিছুই নেই।’
মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রেজাউল কবীর জানান, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো সত্য নয়, স্থানীয় পর্যায়ে দুটি গ্রুপ হয়েছে দ্বন্দ্বটি আসল সমস্যা হচ্ছে কমিটি নিয়ে দ্বন্দ। নিয়ম অনুযায়ী যা হয় তাই করে যাচ্ছি।