সোনাগাজীতে স্থাপিত হচ্ছে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল
সৈয়দ মনির আহমদ, ফেনী: ফেনী জেলার সোনাগাজীর দক্ষিনে উপকূলীয় অঞ্চলে স্থাপিত হচ্ছে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল। মূলত সাগর থেকে জেগে উঠা চরে এই অর্থনৈতিক অঞ্চলটি স্থাপিত হচ্ছে। পূর্ণাঙ্গ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য প্রয়োজনীয় ২০ হাজার একর জমি অধিগ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে চলছে মাঠ জরিপের কাজ। প্রথম দফায় আমিরাবাদ ও সদর ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে ৭ হাজার একর এলাকায় শিল্প কারখানা স্থাপিত হবে। শিল্প স্থাপনে উপযোগী করার জন্য ইতিমধ্যে সাড়ে ৫০০ একর ভূমিতে কাজ শুরু হয়েছে। জুনের মধ্যে শেষ হবে ভূমি উন্নয়নের কাজ। অর্থনৈতিক অঞ্চলটি স্থাপিত হলে এখানে সৃষ্টি হবে সাড়ে ৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থান। এর পর থেকেই গড়ে উঠবে বিমানবন্দর, মিনি নৌবন্দর, সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র, জাহাজনির্মাণ শিল্প, অটোমোবাইলসহ ভারী শিল্প-কারখানা। খুলে যাবে অর্থনীতির নতুন দিগন্ত। স্থাপিত হবে ২০০টি কারখানা। প্রাথমিক পর্যায়ে এর নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছে ৮৬ হাজার কোটি টাকা। নতুন জেগে ওঠা চর দীর্ঘদিন অবহেলায় পড়ে থাকার পর পরিণত হতে চলেছে কর্মমুখর এক জনপদে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য ও শিল্প মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হাজী রহিম উল্যাহ বলেন, ‘বাঁকা নদী সোজা করার কারণেই আজ সোনাগাজীর সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে জেগে উঠেছে সোনাগাজীর আয়তনের মত আর একটি চরাঞ্চল। সাগর থেকে আসা বালুতে ভরাট হয়ে প্রতিদিন এখানে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন জমি । বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ ৩ জানুয়ারি এলাকাটি পরিদর্শন করেছেন। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সোনাগাজীর আমিরাবাদ ও সদর ইউনিয়নের ৬৯ নম্বর থাক খোয়াজের লামছি মৌজায় এক হাজার ৫৪৩ একর, ৭০ নম্বর চরখোয়াজের লামছি মৌজায় ১৮৮ দশমিক ৮৮ একর, ৯৪ নং খোন্দকার মৌজায় ১ হাজার ৯৬১ দশমিক ৯২ একর, ৯৪/১০৩ নম্বর দক্ষিণ চর খন্দকার মৌজায় ১ হাজার ৫৭৯ একর, ৯৩ নম্বর বাহিরচর মৌজায় ৬২৮ দশমিক ৯৯ একর, ২৩২ নম্বর চর রামনারায়ণ মৌজায় ১ হাজার ৩১৮ একর ভূমি নির্বাচন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৭৫০ দশমিক ৫৬ একর জায়গা চূড়ান্ত হয়েছে। প্রথম ধাপে সাড়ে ৫০০ একরে চলছে ভূমি উন্নয়নের কাজ। ফেনীর জেলা প্রশাসক মো. আমিন উল আহসান জানান, যেসব চর এখনো জরিপ হয়নি, সেগুলো পর্চা ম্যাপের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জরিপ হওয়া জমির মধ্যে ইতিমধ্যে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার একর অর্থনৈতিক অঞ্চল করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এলাকাটি মূলত সাগর থেকে জেগে ওঠা চর। চরের যেসব এলাকা এখনো জরিপ হয়নি সেগুলো পর্চা ম্যাপের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেসব জমি জরিপ হয়ে গেছে সেগুলো ইতিমধ্যে অর্থনৈতিক অঞ্চল করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রথম ধাপে ভূমি উন্নয়নের কাজ চলছে সাড়ে ৫০০ একর জমিতে। পরিবেশ ও বন সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, সাধারণত মানুষ মনে করে, যেখানে শিল্প গড়ে ওঠে সেখানে গাছপালা কেটে ফেলতে হয়। আসলে তা ঠিক নয়। অর্থনৈতিক অঞ্চলের কারণে এখানে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না। এখানে শিল্প গড়ে উঠলে যাতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট না হয় সে জন্য গাছ লাগানো হবে। তৈরি করা হবে কৃত্রিম লেক। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্বাহী চেয়ারম্যান (সচিব) পবন চৌধুরী জানান, অর্থনৈতিক অঞ্চলটি গড়ে উঠলে এ অঞ্চলে সাড়ে ৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে। সরকারের বেঁধে দেওয়া সময় ২০১৭ সালের শেষ নাগাদ অর্থনৈতিক অঞ্চলের সব শিল্প-কারখানা নির্মাণ শেষ হবে।