Connect with us

জাতীয়

অধিকার আদায়ের শপথের মধ্যদিয়ে মে দিবস পালিত

Published

on

may day 3নিজস্ব প্রতিবেদক: শ্রমজীবী মানুষকে শোষণের হাত থেকে মুক্তি ও তাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার শপথের মধ্যদিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও মহান মে দিবস পালিত হয়েছে।
দিবসটি স্মরণে আজ রোববার রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে নানা শ্রেণী-পেশার শ্রমজীবী মানুষ তাদের ন্যায্য দাবির পক্ষে সোচ্চার হয়ে পথে নামেন। মাঠে-ঘাটে, কল-কারখানায়, সভা-সমাবেশে, মিছিলে ধ্বনিত হয়েছে তাদের দাবি আদায়ের কথা।
বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শ্রমিক নেতাদের অন্যতম দাবি ছিল ১০ হাজার টাকা জাতীয় ন্যুনতম মজুরি ঘোষণা করতে হবে, আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী ব্যক্তি মালিকানা নির্বিশেষে অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকারসহ গণতান্ত্রিক শ্রম আইন ও শ্রম বিধিমালা প্রণয়ন, নিরাপদ কর্মস্থল, শোভন কাজ ও শোভন মজুরী নিশ্চিত করা, রেশন প্রথা চালু, নারী শ্রমিকদের সমকাজে সমমজুরী, সামাজিক মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং সুলভে বাসস্থান, কারখানা ভিত্তিক হাসপাতাল এবং বিনামূল্যে চিকিৎসা ব্যবস্থা করে শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা বেস্টনী নিশ্চিত করা।
মহান মে দিবস পালন উপলক্ষে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন পতাকা উত্তোলন, বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, মিলাদ মাহফিল, মিছিল-সমাবেশ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনসহ দিনভর নানা কর্মসূচি পালন করে। ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে বিপুলসংখ্যক শ্রমজীবী মানুষ লাল পতাকা হাতে ও মাথায় লাল ফিতা বেঁধে এসব কর্মসূচিতে যোগ দেন।
এছাড়া দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে ব্যানার, ফেস্টুন ও প্লাকার্ড দিয়ে সাজানো হয় রাজধানীর বিভিন্ন সড়কদ্বীপ। দিনটি ছিল সরকারি ছুটি। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সব তফসিলি ব্যাংক ও কলকারখানা এমনকি সংবাদপত্রও বন্ধ ছিল। জাতীয় দৈনিকগুলোতে মে দিবসের বিশেষ নিবন্ধ ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়। টেলিভিশন ও বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করে।
১৮৮৬ সালের এই দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলনে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। ওই দিন তাদের আত্মদানের মধ্যদিয়ে শ্রমিক শ্রেণীর ৮ ঘন্টা কাজ করার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য শ্রমিকদের আত্মত্যাগের এদিনটিকে তখন থেকে সারা বিশ্বে ‘মে দিবস’ পালন করা হচ্ছে।
শ্রমিক শ্রেণীর মানুষের অধিকার আদায়ের ঐতিহাসিক ঘটনাসমৃদ্ধ মহান মে দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপন উপলক্ষে প্রতিবছরের ন্যায় এবারো শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে।
দিবসটি উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন।
এর আগে সকালে মহান মে দিবসের জাতীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে রাজধানীর দৈনিক বাংলা মোড় থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হকের নেতৃত্বে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হয় শোভাযাত্রাটি।
দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে শোভাযাত্রার আয়োজন করে। শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি ও নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান।
পরে তিনি একই স্থানে ঢাকা জেলা ট্যাংকার লড়ি কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন আয়োজিত এক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।
এদিকে মে দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ সংগঠনের কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের আয়োজন করে জাতীয় সমাজতান্ত্রীক দল (জাসদ)। সমাবেশে জাসদ সভাপতি ও তথ্য মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন।
মে দিবসের ১৩০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বেলা সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশের আয়োজন করে শ্রমিক কর্মচারি ঐক্য পরিষদ স্কপ। জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি শুকুর মাহমুদের সভাপতিত্বে স্কপের যুগ্ম সমন্বয়কারী ও জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যনির্বাহী সভাপতি কামরূল আহসান সমাবেশের ঘোষণা পাঠ করেন।
এ সময়ে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ লেবার ফেডারেশনের সভাপতি শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর, সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন, জাতীয় শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতি ফজলুল হক মণ্টু, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জনাব ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম, জাতীয় শ্রমিক জোটের সভাপতি মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশ শেষে এক মহা মিছিল জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে শুরু হয়ে পল্টন মোড়ে এসে শেষ হয়।
মে দিবস উপলক্ষে দুপুরে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ সাহানে ‘আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দ্বীনী দাওয়াত ও সংস্কৃতি বিভাগের পরিচালক ড. মুহাম্মদ আবদুস সালাম।
মহান মে দিবস উপলক্ষে বিকেল ৩ ঘটিকায় কাকরাইলস্থ জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শ্রমিক পার্টির উদ্যোগে এক শ্রমিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বক্তব্য রাখেন।
এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে জাতীয় শ্রমিক লীগ, বাংলাদেশের কমউিনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশের ওযার্কার্স পার্টি, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, গণসংস্কৃতি ফ্রন্ট, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন, জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগ, টিক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন, জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, গ্রীণবাংলা গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন, সামাজিক, পেশাজীবী এবং সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ পালন করে।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *