খেলাধুলা
এবারের বিশ্বকাপের কিছু পরিবর্তন
সময়ের সাথে সাথে বদলে যায় অনেক কিছুই। সংস্কার ও পরিবর্তনের রঙ লাগে খেলাধুলার অন্দর-বাহিরেও। যুক্ত হয় অনেক নতুন নিয়ম, বাদ পড়ে সেকেলে কিছু রীতি। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত ২০১১ বিশ্বকাপ থেকে আসন্ন ২০১৫ সালের অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপেও এমন কিছু সংযোজন-বিয়োজন দেখা যাবে।
১. ফিল্ডিংয়ের বাধ্যবাধকতা ও পাওয়ার প্লে:
২০১২ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) এক দিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার নিয়ম-নীতেতে অভিনব কিছু পরিবর্তন আনে। এর অন্যতম হলো পাওয়ার প্লে প্রবর্তন ও ফিল্ডিং প্লেসমেন্টে বাধ্যবাধকতা। নতুন এই রীতিতে দুটি পাওয়ার প্লে ব্যবহার করা হয়। প্রথমটি খেলার প্রথম দশ ওভারে, যখন ৩০ গজ বৃত্তের বাইরে কেবলমাত্র দু’জন ফিল্ডার অবস্থান করতে পারবেন। আর দ্বিতীয়টি ব্যাট করা দলের পাওয়ার প্লে। এটা ৪০ ওভারের মধ্যেই গ্রহণ করতে হবে।
২. দুই নতুন বল:
আগে বল একেবারে জীর্ণ হয়ে গেলে ইনিংসের ৩৪ ওভার পর বল পরিবর্তনের নিয়ম ছিল। কিন্তু গেল বিশ্বকাপের পর উইকেটের দুই প্রান্ত থেকে দুই বল ব্যবহারের রীতি তৈরি হয়। যা অনেকটা ব্যাটিং বান্ধব পরিস্থিতির সৃষ্টি করা। বোলাররা ইনিংসের শেষ দিকে কম রিভার্স সুইং করাতে পারেন।
৩. পার্ট টাইমাদের ভূমিকা হ্রাস:
রাহুল দ্রাবিড়ের মতে আগের বিশ্বকাপগুলোর তুলনায় এই বিশ্বকাপে পার্টটাইমারদের ভূমিকা হ্রাস পাবে। কারণ, অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের বাউন্সি উইকেটে তারা খুব বেশি কিছু আদায় করে নিতে পারবেন না।
৪. পেসারদের সুইং:
উপমহাদেশে অনুষ্ঠিত গেল বিশ্বকাপে প্রথাগতভাবে স্পিনাররা দাপট দেখিয়েছেন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের বিশ্বকাপে তা হয়তো আর দেখা যাবে না। কারণ ঐতিহ্যগতভাবে এখানকার উইকেট পেস বান্ধব। অতিরিক্ত বাউন্স থাকে, পেসও থাকে। নিখাঁত ফাস্ট বোলাররা উইকেট থেকে সর্বচ্চ ফায়দাটা নিতে পারেন।
৫. চাকিং বিতর্ক পরিস্থিতি:
এবারের বিশ্বকাপে স্পিনারদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ চাকিং বিতর্ককে মাটিচাপা দেয়া। কেননা আইসিসির ব্যাপক ধরপাকড় নীতির কারণে এবারের বিশ্বকাপে খেলতে পারছেন না বিশ্বের এক নম্বর বোলার সাঈদ আজমল। আসরে উপস্থিত থাকলেও দীর্ঘদিন ক্রিকেটের বাইরে ছিলেন বিশ্বের দুই নম্বর বোলার উইন্ডিজের সুনীল নারিনও। খেলা হবে না টাইগার বোলার সোহাগ গাজী ও শ্রীলঙ্কার সচিত্র সেনানায়েকের। এই অবস্থায় আফ্রিদির হাতে থাকবে স্পিনারদের ঝাণ্ডা।
৬. নতুনের আবাহন:
বিশ্বজয়ীর বেশে ক্রিকেট থেকে বিদায় নিয়েছেন শচীন টেন্ডুলকার। এবারের বিশ্বকাপে দেখা যাবে না ভারতীয় ক্রিকেটের ঈশ্বরকে। থাকছেন না বীরেন্দ্র শেবাগ, গৌতম গাম্ভীর, জহির খান, মুত্তিয়া মুরালিধরন, রিকি পন্টিং ও কেভিন পিটারসেনরা। সেই শূন্যস্থানে আসন দখল করতে আসছেন বিরাট কোহলি, কোরি অ্যান্ডারসন, অ্যারন ফিঞ্চ, মঈন আলি, মুমিনুল হক সৌরভরা।
৭. ডিআরএস ও প্রযুক্তি:
ক্রিকেটের বিশ্বমোড়ল ভারতের আপত্তিতে ক্রিকেটে সর্বজনীন হতে পারেনি ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম (ডিআরএস)। তবে বিশ্বকাপে খণ্ডিত রূপে দেখা যাবে এই পদ্ধতির ব্যবহার। সাথে উপরি পাওয়া হিসেবে থাকবে হট স্পট ও রিয়াল টাইম কিলোমিটারের উপস্থিতি। যা ২০১১ বিশ্বকাপে ছিল না। তাছাড়া বল ট্র্যাকিং প্রযুক্তির ব্যবহারও হবে এবারের আসরে।
৮. প্রাইজমানির বর্ধন:
এবারের বিশ্বকাপের প্রাইজমানি ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে পুরস্কার হিসেবে বরাদ্দ ছিল ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এবার তা দুই মিলিয়ন বেড়ে ১০ মিলিয়নে গিয়ে ঠেকেছে। আর বিশ্বকাপ জয়ী দল যদি অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে তাহলে তারা অতিরিক্তি আর ৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ পাবে। তাছাড়া এবারই প্রথম বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক দলের জন্যই থাকছে প্রাইজমানির ব্যবস্থা।
৯. নকআউটে সুপার ওভারের অনুপস্থিতি:
২০১১ সালের বিশ্বকাপে সুপার ওভারের প্রবর্তন করেছিল আইসিসি। এক ওভারে যেখানে খেলার ভাগ্য নির্ধারণ করা হতো। বোল আউট পদ্ধতির বিকল্প হিসেবে এর ব্যবহার শুরু হয়। তবে এবার নকআউট পর্বে সুপার ওভার ব্যবহার করা হবে না। তার বদলে খেলা অমিমাংসিত থাকলে দুই দলের মধ্যে পয়েন্ট ভাগাভাগি করা হবে। আর ফাইনালে এমন ঘটনা ঘটলে ট্রফি ভাগাভাগি করা হবে।
১০. রান রেট:
আসন্ন বিশ্বকাপে রান রেট এক্স ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াতে পারে। কেননা ম্যাচ পরিত্যক্ত হলে রান রেটের হিসেবেই বিজয়ী দল নির্বাচন করা হবে।।