দেশজুড়ে
কথা রাখেনি এ্যামপি খালা, মা এখন ভিক্ষা করে ক্যা ?
রুবেল হোসেন, লক্ষ্মীপুর: আঙ্গ মা অনআর কাম করে না, ভিক্ষা করে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে। ওই বেডারা চুল কাডি দেনের হর ধরী কেউ মায়েরে কামে লয় না। অন মা মাডির কাজ কইরলে নাকি সমচ্ছা অইবো। মাইনছে কয় এ্যামপি খালা নাকি মায়ের খরচ চালাইবো, তাইলে অ্যার মা খরাদ খোঁজে কা…?
শনিবার সকালে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের বাহ্মপাড়া গ্রামে ছেলের সামনে মাকে ন্যাড়া করে নির্যাতনের শিকার সেই খুরশিদা বেগম রমজানে কেমন আছে খবর নিতে যায় এ প্রতিবেদক।
বাড়িতে ছিলেন না খুরশিদা বেগম, উঠানে খেলছিলো তার ছোট ছেলে মো. খুরশিদ। সেখানে গিয়ে তার মায়ের কথা জিজ্ঞাস করলে, কথাগুলো বলতে বলতে কেঁদে ফেলে ১২ বছর বয়সের শিশু ছেলে খুরশেদ। এসময় তার মুখ বেয়ে নেমে আসে দু’চোখের অশ্রু।
খুরশেদ আরো বলে, এ রোজার সময়ও আঙ্গ মা (এক বেলা খেয়ে) রোজা রাখি মাইনচ্ছের বাইত খুঁজদো যায়। রইদের ভিত্তে গেরামো-গেরামো (গ্রামে) মাইনছের বাইত(বাড়ি) যাই চার-পাঁচ টাকা করে খুজি আনে। আবার কেউ চাইলও ভিক্ষা দেয়। আবার বিকালে গেলে অনেকে আবার বুট দেয়, কেউ বরা দেয় আবর কেউ মুরি দেয়। তই আমরা বাড়িতে বেকে মিলি ইফতারি করি।
খুরশেদের সাথে কথা বলার কিছুক্ষণ পর ঘর থেকে বেরিয়ে এলো খুরশেদের ছোট বোন লাখি। সে পড়ে ওই ইউনিয়নের হযরত শাহ মিরান আলীম মাদ্রাসার দাখিল ৯ম শ্রেনীতে। পড়া লেখায় ফাঁকি দিয়ে কাজ করে রাস্তায় প্রকল্পের মাটি কাটার কাজ। রমজান মাস মাদ্রাসা বন্ধ দেখে পুরো মাসটাই সে রাস্তায় কাজ করবে। দৈনিক হাজিরা ১৫০ টাকা হলেও সে পাবে ১শ টাকা করে। কিন্তু তাও ঠিকমত দেয় না প্রকল্পের লোকেরা।
সামনে গিয়ে তার মা খোরশিদার কথা জিজ্ঞেস করতেই উল্টো প্রশ্ন সার আইছেন…? মাতো নাই গেছে ভিক্ষা কইরতো, আ্যামনেরা আইয়নের হরে এ্যামপি খালা আইছিলো বইলছে মায়েরে শহরে লই যাইবো বড় কাম দিবো অন দেহি মা ভিক্ষা করে। তবে এখন কোথায় আছে জানে না সে।
খুরশিদা বেগমের চাচাতো ভাই নুরুল ইসলাম বলেন, অনেকেই তো আসলো। ওই সময় মহিলা এমপি ও রাজনীতিক নেতারাও সান্তনা দিয়ে গেছে খুরশিদা ও তার পরিবারের দায়িত্ব নিবে। কিন্তু এর পর এখন পর্যন্ত কাউকে তো আসতে দেখিনি।
স্থানীয়রা জানায়, নির্যাতনের শিকার খুরশিদার উন্নত চিকিৎসার জন্য ওই সময় মহিলা এমপি এডভোকেট নুর জাহান বেগম মুক্তার সহকারি ডাক্তারি স্লিপ গুলো নিয়ে যায়। এসময় খুরশিদার মেয়ের কর্মসংস্থানের জন্য একটি সেলাই মেশিন প্রদান করেন এবং আগামীতে খুরশিদা যেন রাস্তা নির্মাণ কাজ করতে না হয় সে ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বাস দেন। অথচ দীর্ঘ দিন ফেরিয়ে গেলেও খুরশিদার খবর নিতে কেউ এলো না। এমপির সহকারি যোগাযোগ করার জন্য একটি মোবাইল নাম্বার দিলেও বার বার ফোন করে নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়। এখন আর খুরশিদার খবর কেউ নেয় না। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খুরশিদাকে একটি ঘর নির্মান করে দেওয়ার আশ্বাসও এখন মরিচিকা।
নির্যাতিত খুরশিদা বেগমের এ করুন দৃশ্যের কথা রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ আবু ইউসুফের কাছে বললে হতবাক হন তিনি। এসময় তিনি তার উপজেলায় বরাদ্ধকৃত বিজিএফ এর ২০ কেজি চাউল খুরশিদার নামে বরাদ্ধ দেওয়ার আশ্বাস দেন।
তিনি বলেন, খুরশিদার বাড়ির জমির কাগজ পত্র জমা দিলে ঈদের পরে আশ্রম প্রকল্পের মাধ্যমে তাকে ঘর করে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। এতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
উলেখ্য, গত ২১ মার্চ ১৬ দুপুরে কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে একই গ্রামের সাইন্নার বাড়ির জনৈক হাসিনার স্বামী মনিরের সঙ্গে পরকীয়ার অভিযোগে খুরশিদাকে নির্মম নির্যানত করা হয়। এসময় হাসিনা ও তার বাবা নুর হোসেন ভাই ফারুক হোসেন ও আব্দুল আজিজসহ ৪/৫ জন মিলে তাকে টেনে হিঁচড়ে বাড়ির ভেতর নিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করে। এরপর মাথার চুল কেটে কালি মেখে দেয়। এ ঘটনায় ৩ জনকে আসামী করে ওই দিন রাতেই নির্যাতিত খুরশিদা রামগঞ্জ থানায় একটি মামলা ধায়ের করেন। এর পর ওই মামলার প্রধান আসামী নুর হোসেনসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।