Connect with us

Highlights

কাউনিয়ায় মাদ্রাসায় অধ্যক্ষের রুমে তালা: শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত

Published

on


মিজান,কাউনিয়া(রংপুর):
রংপুরের কাউনিয়ায় স্বাব্দী দারুস সুন্নাহ্ আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ এর বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও সেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার (০২মে) অধ্যক্ষের রুমে তালা লাগিয়েছেন গর্ভর্ণিং বডির সদস্যসহ অভিভাবকবৃন্দরা। মাদ্রাসাটিকে ঘিরে র্দীঘদিনের চলা একাধিক মামলাসহ নানা জটিলতায় শিক্ষাক্ষেত্রে মারাত্মক ভাবে বিঘ্ন ঘটায় ফুঁসে উঠেছে এলাকাবাসী। প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফেরাতে সংশ্লিষ্টদের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয়রা।

অভিযোগের সূত্র মতে, স্থানীয়দের মধ্যে ইসলামীসহ সাধারন শিক্ষার আলো বিস্তারের লক্ষ্যে উপজেলার শহীদবাগ ইউনিয়নে বিগত ১৯৭৪ সালে স্বাব্দী দারুস সুন্নাহ্ আলিম মাদ্রাসা স্থাপিত হয়। পরে আলিম হিসেবে রুপান্তরিত হয়ে মাদ্রাসাটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে পরিচালনা হলেও গর্ভর্ণিং বডি মূলতঃ মানসম্মত সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ রক্ষা ছাড়াও বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড করে থাকেন। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সূনামের সাথে মাদ্রাসাটি পরিচালিত হয়ে আসছিলো।

এরমধ্যে বিগত ৩১ জানুয়ারি ২০১০ তারিখে মাদ্রাসার তৎকালীন অধ্যক্ষ হযরত আলী অবসরে গেলে সহকারি শিক্ষক প্রভাষক আশরাফুল আলমকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়।

জানা গেছে, এরই একপর্যায়ে মাদ্রাসার গর্ভর্ণিং বডির সভাপতি যোগসাজসী হয়ে তাঁর আস্থাভাজন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানটির সহকারি মৌলভী শিক্ষক আবুল কালাম আজাদকে অধ্যক্ষ নিয়োগের অসৎ উদ্দেশ্যে বিগত ২৮ সেপ্টেম্বর ২০০০ তারিখে পরিকল্পিত ভাবে রেজুলেশন করে প্রভাষক হিসেবে তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়।

এরপর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আশরাফুল আলমকে চাপে ফেলে বিগত ৩০ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করেন। সে মোতাবেক অভিজ্ঞতা না থাকা স্বত্ত্বেও সরাসরি সহকারি মৌলভী শিক্ষক থেকে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগের জন্য তৎকালীন অধ্যক্ষের স্বাক্ষর জাল করে একটি রেজুলেশন তৈরী করেন।

তারপর কতিপয় গর্ভর্ণিং বডির সদস্যগণকে প্রভাব খাটিয়ে সরকারি বিধিমালা বহির্ভূত ভাবে বিগত ২৩ মার্চ ২০১৩ তারিখে মাদ্রাসাটির অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ হাসিল করেন আবুল কালাম আজাদ। এ সংক্রান্ত তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আদালতে বিচারাধীন আছে বলেও অভিযোগে জানা যায়।

ইতোমধ্যে অভিযোগের প্রেক্ষিতে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহা পরিচালকের নির্দেশে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ নিয়োগ বিধি সম্মত হয়নি মর্মে সিদ্ধান্ত দেন। মাদ্রাসায় ইতিপূর্বে নানা নাটকীয়তার মধ্যে অধ্যক্ষের নিয়োগ, অর্থ-আত্মসাত, অনিয়ম ও দূর্নীতিকে কেন্দ্র করে টান-টান উত্তেজনার ঘটনাও ঘটে। কিন্তু আশানুরূপ স্থায়ী সমাধান না আসায় মাদ্রাসার দৈনন্দিনের কর্মকান্ড ও শিক্ষা ক্ষেত্র আজ মারাত্মক হুমকির মূখে, অধ্যক্ষের রুমে ঝুলছে তালা। এসবকে কেন্দ্র করে যে কোন মূহুর্তে ঘটে যেতে পারে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মত ঘটনা বলে আশংকা করছেন স্থানীয় অনেকেই।

এদিকে মাদ্রাসায় তালা লাগানোর বিষয়ে সহকারি শিক্ষক খায়রুল ইসলাম জানান, ঘটনার দিন দ্বিতীয় ক্লাস অব্দি মাদ্রাসার গর্ভর্ণিং বডির অভিভাবক সদস্য ও দাতা সদস্যসহ লোকজন এসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বের করে দিয়ে অধ্যক্ষের রুমে তালা লাগিয়ে দেয়।

একই অভিব্যক্তি মাদ্রাসাটির শিক্ষক প্রতিনিধি প্রভাষক আশরাফুল আলম জানান, প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় বিধি বহির্ভূত ভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাদ্রাসায় গর্ভর্ণিং বডি থাকার পরও সকল সদস্যদের নিয়ে মিটিং করেনি। এমতঃবস্থায় নতুন কমিটির করা জন্য একটি মিটিং ছিলো সে দিন সভাপতিসহ অন্যান্য সদস্যদের অনুপস্থিতির কারণে সেটি হয়নি তবে তিনি পরবর্তীতে দিতে পারতেন। অতঃপর অধ্যক্ষ তা না করে গোপনে নতুন কমিটির নির্বাচনের প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে কমিটির লোকজনসহ অভিভাবকরা আমাদের বের করে দিয়ে তালা লাগিয়ে দেন।

অপরদিকে দাতা সদস্য মোফাকখারুল ইসলাম মানিক জানান, কাউকে কিছু না জানিয়ে অধ্যক্ষ ও সভাপতি যোগসাজসী হয়ে গোপনে ভোটার তালিকা তৈরী করে নতুন কমিটি গঠনের পায়তারা করছেন। এই অধ্যক্ষ যোগদানের পর মাদ্রাসাটির শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের পথে। প্রতিষ্ঠানটিতে পর্যায়ক্রমে অধ্যক্ষের ব্যাপক অনিয়ম ও হীন কর্মকান্ডের প্রতিবাদে তালা লাগানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

অন্যদিকে আবুল কালাম আজাদকে মাদ্রাসার অযোগ্য অধ্যক্ষ আখ্যা দিয়ে অভিভাবক সদস্য হায়দার আলী জানান, ওনি কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে সভাপতিকে ম্যানেজ করে প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মকান্ড করেন। তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ করেছি লাভ হয়নি মনগড়া ভাবে ঘরে বসেই সব চালিয়ে যাচ্ছেন।

এব্যাপারে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ জানান, অভিযোগ গুলো সম্পূর্ন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। কখনো কারো জাল স্বাক্ষর করে রেজুলেশন করা হয়নি। মাদ্রাসার স্বার্থে যে সব সিদ্ধান্ত নেয়া হয় সে গুলো নিয়মানুসারে করা হয়েছে। চলমান মামলা গুলোর সত্যতা নিশ্চিত করলেও মাদ্রাসায় তালা লাগানোর ঘটনায় তিনি বলেন, ওই দিন জরুরী প্রয়োজনে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে থাকা কালে বিষয়টি জানতে পেরে মাদ্রাসার সভাপতি ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন। অতিদ্রুত গর্ভণিং বডির মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে তিনি জানান।

বিষয়টি নিয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাকির হোসেন জানান, মাদ্রাসার ঘটনাটি জানতে পেরে অধ্যক্ষ ও সভাপতির সাথে কথা হয়েছে। শিক্ষার পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে তাদেরকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে। যদি মাদ্রসাটির কমিটি নিয়ে কোন সমস্যা থেকে থাকে তবে তা কাগজপত্র দেখে পদক্ষেপ নেয়া হবে।

সূনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা বোর্ডের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ এলাকাবাসী।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *