কুড়িগ্রাম
কুড়িগ্রামে এইচএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের ১শ গজের ভিতরে কুটির শিল্প-পরীক্ষার্থীরা ভোগান্তিতে
কুড়িগ্রামে এইচএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের ১শ গজের ভিতরে হস্ত ও ক্ষুদ্র কুটির শিল্প মেলার নামে বহিরাগত দোকানপাট বসিয়ে বিক্রি হচ্ছে জুতা-সেন্ডেল, রকমারী প্রসাধনী ও যাদু প্রদর্শনী।
জানা গেছে, কুড়িগ্রাম কালেক্টরেটের এলআর ফান্ডে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে জেলা প্রশাসক এইচএসসি পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে কুড়িগ্রাম সরকারী কলেজ কেন্দ্রের ১শ গজের ভিতরে মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতি স্তম্ভ চত্তরে একজন ডেকোরেটর মালিককে এ মেলা আয়োজনের অনুমতি দেয়া হয়। গত ২০ মার্চ জেলা প্রশাসক এবিএম আজাদ মাসব্যাপী এ মেলার উদ্বোধন করেন। মেলা সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ম্যাজিক শো ও কাস্টমারদের আকৃষ্ট করার জন্য দোকানীরা উচ্চ স্বরে মাইক ও সাউন্ড বক্স বাজাচ্ছেন। এতে করে পরীক্ষার্থীদের মনোযোগে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়াও মেলার পাশে রয়েছে সরকারী উচ্চ বালক বিদ্যালয়, সরকারী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, বর্ডারগার্ড পাবলিক স্কুল, সরকারী মহিলা কলেজসহ আরো কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ক্লাস ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন মেলা ভিড় করছে। এতে করে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে অবিভাবকরাও।
এদিকে মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি ফলক চত্তরে মেলা আয়োজন করায় মেলার দোকানীরা কাথা ও ময়লা কাপড় স্মৃতি ফলকের উপরে দিয়ে শুকাচ্ছেন। এতে করে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কুড়িগ্রাম ইউনিটের জেলা কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম টুকু জানান, মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি ফলকে কাপড় শুকানোসহ স্মৃতি ফলককে রুদ্ধ করে মেলার জন্য বিশাল তোড়ন নির্মাণ করায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের চরম অবমাননা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা জেলা প্রশাসককে মৌখিকভাবে এ মেলা অন্যত্র সড়িয়ে নিতে বলা হলেও তিনি কর্ণপাত করেননি। জেলা প্রশাসক মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে এ মেলা বসিয়েছেন। মেলাটি কোন ভাবেই একজন ডেকোরেটর মালিককে অনুমতি দিতে পারেন না।
কুড়িগ্রাম সরকারী কলেজ কেন্দ্রের এইচএসসি পরীক্ষার্থী শারমিন আক্তার সীমা জানান, আমাদের পরীক্ষা কেন্দ্র সংলগ্ন এ মেলার কারনে আমাদের পরীক্ষা দিতে সমস্যা হচ্ছে। কেননা পরীক্ষা চলাকালীন সময়ও এখানে উচ্চ স্বরে গান-বাজনা ও মাইকিং চলে।
কুড়িগ্রাম শহরের কবিরাজ পাড়া গ্রামের এইচএসসি পরীক্ষার্থীর অবিভাবক সাইদুর ইসলাম জানান, একদিকে হরতাল অবরোধের কারনে শিক্ষার্থীদের লেখা-পড়ার ক্ষতি অপরদিকে মেলার কারনে ভালোভাবে পরীক্ষা দিতে না পারায় এর প্রভাব পড়বে পরীক্ষার ফলাফলে।
এ ব্যাপারে মেলার আয়োজক তহুরা ডেকোরেটরের মালিক নুরু মিয়া জানান, জেলা প্রশাসককে ম্যানেজ করেই এই মেলার আয়োজন করেছি। এতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা উপক্রিত হবেন। মেলায় স্থানীয় হস্ত ও কটির শিল্পের কোন স্টল না থাকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্থানীয় কুটির শিল্পীরা বরাদ্দকৃত স্টলের টাকা দিতে পারেনা বলেই তারা কোন স্টল পাননি।
এ ব্যাপারে শহরের সান্ডারপাড়ার স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলেন, এ ধরনের মেলা আয়োজন করা হলেও আমাদেরকে কোন স্টল দেয়া হয় না।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক এবিএম আজাদ জানান, ক্ষুদ্র ও কটির শিল্প বিকাশের জন্য মেলার অনুমতি দেয়া হয়েছে। পরীক্ষার্থীদের সমস্যার কথা তুলে ধরা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি বিবেচনা করে দেখা হবে।