কুড়িগ্রাম
কুড়িগ্রামে বন্যায় আমনের ব্যাপক ক্ষতি; দিশেহারা কৃষক
শাহ্ আলম, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: এবারের বন্যায় কুড়িগ্রামে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে আমন ক্ষেতের। জেলার ৫৩ হাজার হেক্টর জমির আমন ক্ষেত দীর্ঘ দিন পানিতে তলিয়ে থাকায় সম্পুর্নরুপে নষ্ট হয়ে গেছে। এ অবস্থায় সঞ্চিত সম্বল আবাদের জন্য ব্যায় করে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। চারা সংকটে নতুন করে রোপন করতে পারছেন না পতিত জমি।
চলতি মৌসুমে কুড়িগ্রামের ৯ উপজেলায় ১ লাখ ২ হাজার হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ করে কৃষকরা। ৫৩ হাজার হেক্টর জমির আমন ক্ষেত টানা ৩ সপ্তাহ ধরে বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকায় সম্পুর্ন রুপে নষ্ট হয়ে গেছে। তবে কৃষি বিভাগের তথ্যমতে আমনের ক্ষতি হয়েছে ৩৬ হাজার হেক্টরের। ফলে জেলায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়েছে প্রায় আড়াই লক্ষাধিক কৃষক। একমাত্র কৃষির উপর নির্ভরশীল এ মানুষগুলোর সামনে এখন শুধুই অন্ধকার। আমনের চারা রোপনের সময় শেষ হয়ে গেলেও পতিত জমিতে নতুন করে চারা লাগানোর কথা ভাবছেন কৃষকরা। কিন্তু চারা সংকটে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা।
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের কৃষক জব্বার আলী জানান, আমার ৫ একর জমির ধান একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে। যা সম্বল ছিল সব আবাদের পিছনে খরচ করেছি। এখন আর কোন উপায় নাই। কি হবে আল্লাহ্ ভালো জানেন।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার উমর মজিদ ইউনিযনের কৃষক মানিক জানান, আমরা কৃষক মানুষ। কৃষি দিয়েই আমাদের জীবন চলে। কিন্তু এবারের বন্যায় সব শেষ হয়ে গেছে। এখন আর চারা লাগনোর সময় নাই। বলানের চারাও পাওয়া যাচ্ছে না। সামনে কি খাব, ছেলে-মেয়ে কি নিয়ে বাঁচাবো ভেবে পাচ্ছি না।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের কৃষক ছমির উদ্দিদন জানান, টানা ২২-২৩ দিন ধরে ধান ক্ষেত পানির নীচে থাকায় পচে গেছে। অথচ কৃষি বিভাগের কেউ এসে কোন পরামর্শ দেয় নাই। এখন কি আবাদ করবো তাও ভেবে পাচ্ছি না।
কৃষকরা বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে মাঠে কৃষি বিভাগের কোন তৎপরতা না থাকার কথা জানালেও জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ শওকত আলী সরকার জানান, জেলায় ৫৩ হাজার হেক্টর জমির আমন ক্ষেত বন্যার পানিতে দীর্ঘদিন তলিয়ে ছিল। আমাদের হিসাব মতে এর মধ্যে ৩৬ হাজার হেক্টর জমির আমন ক্ষেত সম্পুর্ণ রুপে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়েছে প্রায় আড়াই লাখ কৃষক। আমরা কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষি বিভাগ থেকে নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি এবং সে মোতাবেক কাজ করছি। গম, শরিষাসহ অন্যান্য ফসল চাষে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
মাঠে ফসল নেই, হাতে টাকা নেই। যেদিকে চোখ যায় শুধুই বন্যার ক্ষতচিহ্ন। এ অবস্থায় কুড়িগ্রামের কৃষকরা তাকিয়ে আছেন সরকারের পুর্নবাসন ও ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার বাস্তব সম্মত পদক্ষেপের দিকে।