কুড়িগ্রাম
কুড়িগ্রামে ৫শ্রেনীর ছাত্রীর শ্লীলতাহানী -অভিযুক্ত শিক্ষকের অপসারনের দাবীতে বিদ্যালয়ে তালা
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়নের ‘সুকানদিঘী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের’ সহকারী শিক্ষক নুরুন্নবী মিয়া স্কুল চলাকালিন ৫ম শ্রেনীর এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানী করায় ঐ স্কুলে ২দিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচারের দাবীতে ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবকসহ এলাকার সহস্রাধিক মানুষ লাঠি-সোটাসহ বিক্ষোভ প্রর্দশন করে বিদ্যালয়ে তালা লাগিয়ে দেন। এ সময় শিক্ষকরা অবস্থা বেগতিক দেখে সকলে বিদ্যালয় থেকে সটকে পরেন। ঘন্টা খানেক পরে সকাল ১১ টার দিকে ভিতরবন্দ ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল হক ঘটনাস্থলে পৌছে উপস্থিত এলাকাবাসীকে তালা খুলে দিতে বলেন। এলাকাবাসী দাবী করেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও শিক্ষা অফিসার ছাড়া তালা খোলা হবে না। এতে চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত হয়ে এলাকাবাসীকে গালিগালাজসহ হুমকী-ধামকী দিয়ে তালা ভেঙ্গে ফেলেন। চেয়ারম্যানের উদ্ধ্যত আচরণে এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে বিভিন্ন গালাগালসহ মারমুখী হলে সে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে।
জানা গেছে, গত মঙ্গলবার ঐ স্কুলের ৫ম শ্রেনীর ছাত্রী শ্যামলী খাতুনকে যৌন হয়রানী করেন নুরুন্নবী মিয়া নামের এক সহকারী শিক্ষক। শ্যামলী খাতুন তার পরিবারের নিকট শিক্ষকের যৌন হয়রানীর বিষয়টি জানানোর পর বুধবার এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে শিক্ষকের বিচারের দাবীতে তালা লাগিয়ে দেন। বৃহস্পতিবার সকালে এ ঘটনার বিচার না পেয়ে আবারো স্কুলে অবস্থান নেয় এলাকাবাসী। পরে ইউপি চেয়ারম্যান আগামী শুক্রবার শিক্ষকের বিচারের আশ্বাস দিলে ফিরে যান তারা।
বিদ্যালয়ে যৌন হয়রানীর স্বীকার ৫ম শ্রেনীর ছাত্রী শ্যামলী খাতুন (১৩) বলেন, মঙ্গলবার স্কুল চলার সময় নুরুন্নবী স্যার আমাকে তার কাছে ডেকে ছোট করে অশ্লিলতার প্রস্তাব দেয়। আমি তার কথায় রাজি না হলে সে আমাকে জোড় পুর্বক শ্লীলতাহানি চেষ্টা করে। পরে আমি বাকী ক্লাস না করে বাড়ী চলে গিয়ে মা বাবাকে ঘটনাটি বলি।
হাসনাবাদ ইউনিয়নের নেটারপাড় গ্রামের শ্যামলীর বাবা আব্দুল কালাম বলেন, মেয়েকে আর ওই স্কুলে পড়াবো না। সুকানদিঘী ভ্যান্ডিটারী গ্রামের লিয়াকত আলী বাসিয়াল বলেন, ‘ওই শিক্ষক এর আগে আমার মেয়ে ৫ম শ্রেনীর ছাত্রী লিপির (১৩)সাথেও খারাপ ব্যবহার করেছে। প্রধান শিক্ষককে বিচার দিয়েও কোন বিচার না পেয়ে দুঃখে ক্ষোভে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। রসুলপুর ও বানিয়াপাড়া গ্রামের অভিভাবক বাদশা মিয়া, মকবুল হোসেন অভিযোগ করেন, ‘নুরুন্নবীর শিক্ষকতা করার কোন যোগ্যতা নেই। তার চরিত্র খুবই জনঘ্য। এছাড়া তার কথা না শুনলে স্কুলে বড় মেয়েদের (ছাত্রীকে) সরকারী বই না দিয়ে ফেরৎ পাঠায়। এসব অভিযোগ প্রধান শিক্ষককে বলেও কোন প্রতিকার পাননি বলে জানান তারা।
ঐ স্কুলের কয়েকজন ছাত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, এর আগেও ওই শিক্ষক ক্লাস চলাকালিন সময় ফোর ফাইভের মেয়েদের কাছে ডেকে একই ধরনের খারাপ ব্যবহার করেছে। শিক্ষার্থীরা ওই চরিত্রহীন শিক্ষককে বহিস্কার করার দাবী জানান।
এলাকার শিক্ষার্থীদের অবিভাবক ও গ্রামবাসী ওই শিক্ষকের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত তাদের ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠাবে না বলে ঘোষনা দেন।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। আমরা সবাই একই গ্রামবাসী তাই বিষয়টি মিমাংসা করার চেষ্টা করছি। আগামী শক্রবার আমরা মিমাংসার জন্য বসবো।
ইউনিয়ন পরিষদ চেয়াম্যান আমিনুল হক জানান, বিষয়টি মিমাংসা করে দেয়া হবে। এ ব্যাপারে নাগেশ্বরী উপজেলা শিক্ষা অফিসার তৌফিকুর রহমান জানান, আমি বদলী হয়ে গেছি ফলে বিষয়টি জানি না।