Connect with us

জাতীয়

গুলশান হামলায় আরেক সন্দেহভাজন শিল্পপতি শাহরিয়ার খানের ছেলে তাহমিদ

Published

on

Terrorist attacks in Gulshan 1গুলশান হামলার পর কমান্ডো অভিযানগুলশান হামলায় আটক সন্দেহভাজন যে তিনজনকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে, তাদের মধ্যে একজন তাহমিদ হাসিব খান। জানা গেছে, তিনি আফতাব বহুমুখী ফার্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলে রহিম খান শাহরিয়ারের ছেলে। তাহমিদ ইউনিভার্সিটি অব টরেন্টোর ফুলটাইম স্টুডেন্ট। ঢাকায় পড়েছেন একটি নামকরা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে। ঘটনার দিন শুক্রবার দুপুরে তিনি টরেন্টো থেকে দেশে ফেরেন।
শুক্রবার সন্ধ্যার পর তার বান্ধবী ও বান্ধবীর বান্ধবীকে নিয়ে তিনি হলি আর্টিজানে খেতে যান। শনিবার কমান্ডো অভিযানের পর তাকে উদ্ধার করা হয়। তবে সন্দেহভাজন হিসেবে এখনও তাকে পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
সন্দেহভাজন অন্য দু’জনের একজন হলেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষক প্রকৌশলী হাসনাত করিম। অন্যজন জাকির হোসেন শাওন। তাকে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। গোয়েন্দা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর অনেকেই ভেতরে ও বাইরে আশে-পাশে লুকিয়ে ছিলেন। সকালে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে ‘অপারেশন থান্ডার বোল্ট’ নামে অভিযান শেষে ঘটনাস্থলেই ৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেওয়া হয়। ভেতর থেকে নারী, শিশু ও তিন বিদেশিসহ ১৩ জন এবং আশপাশের এলাকা থেকে আরও ১৪ জনকে উদ্ধার করে যৌথ বাহিনী। পরে তাদের গোয়েন্দা হেফাজতে নেওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে অন্যদের ছেড়ে দেওয়া হলেও তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রাখা হয়। তবে এখনও তাদের আটক ও গ্রেফতার দেখানো হয়নি বলে জানান এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
এদিকে নিহত পুলিশ সদস্যদের শোকসভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক জানান, গুলশান হামলার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দুই জনকে আটক করা হয়েছে। তবে তাদের নাম জানাননি তিনি।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, আইজিপি যে দু’জনের কথা বলেছেন তারা হচ্ছেন হাসনাত ও তাহমিদ। অন্যজন হচ্ছেন, অভিযান শুরুর আগে রেস্টুরেন্টের পেছন থেকে আটক তরুণ। তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান গোয়েন্দারা।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, আফতাব বহুমুখী ফার্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলে রহিম খান শাহরিয়ারের ছেলে তাহমিদ হাসিব খান গোয়েন্দা হেফাজতে রয়েছেন। তিনি কানাডার ইউনিভার্সিটি অব টরেন্টার ছাত্র। ঘটনার দিন শুক্রবার দুপুরে তিনি টরেন্টো থেকে দেশে আসেন। দুপুরে বাসায় বিশ্রাম নিয়ে সন্ধ্যায় ইফতারের পর বন্ধুদের সঙ্গে গুলশানের ওই রেস্টুরেন্টে যান বলে স্বজনরা জানান।
এ বিষয়ে কথা বলতে শাহরিয়ার খানের মোবাইলে ফোন করা হলে ফোন ধরেন তার বন্ধু ফাহিম। তিনি জানান, তাহমিদ গোয়েন্দা হেফাজতে আছে। এ বিষয়ে তিনি আর কোনও কথা বলতে রাজি হননি। শাহরিয়ার খান বিশ্রামে আছেন বলেও জানান তিনি। পরে তাহমিদের বাবা শাহরিয়ার খান বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি না সে এমন বর্বর হামলার সঙ্গে জড়িত। তাছাড়া, তার সঙ্গে দু’জন তরুণী ছিল। তারা সবাই খাবার খেতে গিয়েছিল। গার্ল ফ্রেন্ডকে নিয়ে কি কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে যায়!’
তিনি আরও বলেন, ছেলের সঙ্গে এখন পর্যন্ত আমাদের দেখা হয়নি। শুনেছি তার বান্ধবী দু’জনও জীবিত আছে। তারা সবাই ডিবির হেফাজতেই আছে। আমি অনেক চেষ্টা করেও ছেলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারিনি।’
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, সন্দেহভাজন আরেকজন হাসনাত করিম হিজবুত তাহরিরের সঙ্গে জড়িত। ওই সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকা ও কাজে অবহেলার অভিযোগে ২০১২ সালে নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে সরে যেতে বলে কর্তৃপক্ষ। পরে তিনি স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে ইংল্যান্ডে চলে যান। এর আগে তিনি ইংল্যান্ড থেকে প্রকৌশল বিদ্যায় পড়াশোনার পর যুক্তরাষ্ট্রে এমবিএ করেন। প্রায় দেড় বছর আগে আবার তিনি দেশে ফিরে আসেন। ঘটনার দিন মেয়ের জন্মদিন পালন করতে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে হলি আর্টিজানে গিয়েছিলেন বলে তার স্বজনরা জানিয়েছেন। তার বাবা রেজাউল করিমও সাংবাদিকদের জানান, হাসনাত গোয়েন্দা হেফাজতে আছেন।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার রাতে গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালায় বন্দুকধারীরা। এতে ২ পুলিশ সদস্য, ১৭ বিদেশি নাগরিক ও তিন বাংলাদেশি নিহত হন। পরে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে ছয় জঙ্গি নিহত হন বলে শনিবার দুপুরে সেনা সদরে এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। অভিযানে জীবিত উদ্ধার করা হয় তিন বিদেশি নাগরিকসহ ১৩ জিম্মিকে। আটক করা হয় এক সন্দেহভাজন জঙ্গিকে। উদ্ধার হওয়াদের মধ্যে সপরিবারে হাসনাত ছিলেন।
নিহতদের মধ্যে নয়জন ইতালির, সাতজন জাপানের ও একজন ভারতের নাগরিক। বাকি তিনজন বাংলাদেশি, যাদের মধ্যে একজনের যুক্তরাষ্ট্রেরও নাগরিকত্ব ছিল। নিহত সাত জাপানির মধ্যে ছয়জনই মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত ছিলেন।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *