Connect with us

জাতীয়

গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল পরিবারে প্রধান বিচারপতির পক্ষে আর্থিক সহায়তা

Published

on

গোবিন্দগঞ্জের রংপুর চিনিকলের খামারের জমির সাঁওতাল পল্লীর ঘরবাড়ি গত ৬ নভেম্বর পুড়িয়ে দেওয়ার পর মাদারপুর ও জয়পুরপাড়া গ্রামে আশ্রয় নেয়া ক্ষতিগ্রস্তদের বর্তমান অবস্থা গতকাল শনিবার দুপুরে পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্টার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম। মাননীয় প্রধান বিচারপতির পক্ষে তিনি এ খোঁজ খবর নেন।

পরে মাদারপুর গির্জা চত্বরে সাঁওতালদের এক সমাবেশে তিনি বলেন, প্রয়োজনের তুলনায় সুপ্রিম কোর্টের বাজেট কম। অর্থের অভাব আছে। তারপরও আমরা যেভাবেই হোক আপনাদের সহযোগিতা করার জন্য এসেছি। আর্থিক সহায়তা বড় কথা নয়। মাননীয় প্রধান বিচারপতি সবসময় আপনাদের খোঁজ খবর নিচ্ছেন। তিনি আপনাদের প্রতি আন্তরিক সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন। তিনি আসতে পারেন নাই কিন্তু তার প্রতিনিধি হিসাবে আমাদের পাঠিয়েছেন আপনাদের দুঃখ দুর্দশা দেখতে। আজ আমরা যা দেখে গেলাম, তা মাননীয় প্রধান বিচারপতিকে জানাবো। এখানকার সমস্যা এবং সাঁওতালদের দুর্দশা লাগবের জন্য তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।

এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সুপ্রিম কোর্টের অতিরিক্ত রেজিস্টার জেনারেল জাহিদ হোসেন, গাইবান্ধা জেলা ও দায়রা জজ রাশেদা সুলতানা, ভারপ্রাপ্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মইনুল হাসান ইউসুফ, গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান, গোবিন্দগঞ্জ আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এএসএম তাসকিনুল হক, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রেজানুর রহমান প্রমুখ।

এরপর প্রধান বিচারপতির পক্ষে ওই গির্জা চত্বরে তিনি রংপুর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের বসতি থেকে উচ্ছেদ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ১শ ৭৮পরিবারের প্রত্যেককে নগদ ১০হাজার টাকা করে ও নিহত শ্যামল হেমভ্রম এবং মঙ্গল মার্ডির পরিবারকে ১ লক্ষ করে টাকার অনুদানের চেক প্রদান করেন। এছাড়াও শীতার্ত সাঁওতালদের মধ্যে ৩শ’ কম্বল বিতরণ করা হয়।

প্রসঙ্গত, সাঁওতাল ও বাঙালিদের ১৮টি গ্রামের ১ হাজার ৮৪০ দশমিক ৩০ একর জমি ১৯৬২ সালে অধিগ্রহণ করে চিনিকল কর্তৃপক্ষ আখ চাষের জন্য সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার গড়ে তোলে। সম্প্রতি চিনিকল ওইসব জমি লিজ দিলে তাতে ধান-পাটসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ করা হয়। ফলে প্রায় দুই বছর আগে সাঁওতাল ও স্থানীয় বাঙ্গালী অধিগ্রহণের চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ এনে তাদের বাপ-দাদার জমি ফেরত পাওয়ার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম শুরু করে। এক পর্যায়ে চলতি বছরের ১ জুলাই সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারে বসতি স্থাপন করে এবং ওই খামারের একশ একর জমিতে ধান এবং প্রায় আটশ একর জমিতে মাস কালাই, সরিষা ও পাট চাষ করে। বাকী জমিতে ছিল মিলের ইক্ষু ক্ষেত।

গত ৬ নভেম্বর রংপুর চিনিকলের ওই খামারের জমিতে আখ কাটাতে কেন্দ্র করে পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষ হয়। এসময় তীরবিদ্ধ হয় ৯ পুলিশ। গুলিবিদ্ধ হন চারজন সাঁওতাল। তিনজন সাঁওতাল মারা যায়। এছাড়া উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হন। পরে বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ঘরবাড়ীতে আগুন লাগিয়ে দিয়ে তাদেরকে ওই জমি থেকে উচ্ছেদ করা হয়।

আখ কাটার সংঘর্ষের ঘটনায় গোবিন্দগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক কল্যাণ চক্রবর্তী বাদী হয়ে ঘটনার দিন রাতেই ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে সাড়ে ৩শ জনকে আসামি দেখিয়ে মামলা দায়ের করেন। এপর্যন্ত পুলিশ চারজন সাঁওতালকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা জামিনে এখন মুক্ত।

অপরদিকে গত ১৬ নভেম্বর স্বপন মুরমু বাদী হয়ে ৬০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি দেখিয়ে সাঁওতালদের পক্ষে মামলা করেন। এ মামলায় মোট ২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা এখন কারাগারে।

এরপর গত ২৬ নভেম্বর দুপুরে সাঁওতালদের পক্ষে ক্ষতিগ্রস্ত থোমাস হেমরম বাদী হয়ে স্থানীয় এমপি, ইউএনও ও ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে থানায় একটি এজাহার দাখিল করেন। যা তদন্তাধীন।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *