Connect with us

দেশজুড়ে

চাকুরির আবেদনে বয়সসীমা ৩৫ বছরে উন্নীত করণের দাবিতে রংপুরে বিক্ষোভ মিছিল

Published

on

রঞ্জিত দাস, রংপুর: চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছরে উন্নীত করণের দাবিতে ১০ মার্চ শাহবাগে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদ স্মারকলিপি প্রদান অনুষ্ঠানে পুলিশের লাঠিচার্জ ও আটকের প্রতিবাদে শনিবার সারাদেশের ন্যায় রংপুরে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রংপুর মহানগরীর লালবাগে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদের ব্যানারে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন শেষে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন বেরোবির অধ্যাপক ওমর ফারুক স্যার, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফন্টের রংপুর জেলা সভাপতি রোকনুজ্জামান রোকন, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদের সভাপতি মোঃ গোলাম মোস্তফা, সহ সভাপতি কাইয়ুম বাবু, সিনিয়র সহ সভাপতি মোঃ নাজমুল হুদা, সাধারণ সম্পাদক রায়হানুল রাশেদসহ আরো অনেকে বক্তব্য রাখেন। বক্তারা বলেন, বর্তমান মহামান্য রাষ্ট্রপতি স্পিকার থাকাকালীন অবস্থায় ৩১ জানুয়ারি ২০১২ সালে মহান জাতীয় সংসদে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছরে উন্নীত করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। কিন্তু দীর্ঘ ছয় বছরে আজও দাবীটি বাস্তবায়িত হয়নি, যা কিনা খুবই দুঃখজনক। সর্বপ্রথম ১৮০৬ সালে ঈস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি লন্ডনে প্রথম বেসরকারি ভাবে প্রশাসক প্রশিক্ষনের কলেজ স্থাপন করে । সেই ধারাবাহিকতায় পরবর্তিতে তৈরি হয় ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস, যা থেকে পরবর্তিতে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস এবং এই ধারাবাহিকতা অনুসরণ করে বর্তমান বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস। সাধারনত কারও মনেই দ্বিমত থাকার কথা নয় তৎকালীন বিট্রিশ ও পাকিস্তানি শাসকদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে। কেননা, তাদের মূল উদ্দেশ্যই ছিল বিভিন্ন রকম প্রতিবন্ধকতা দিয়ে আমাদেরকে পিছিয়ে রাখা। এই সকল প্রতিবন্ধকতার মধ্যে একটি হলো বয়সের সীমাবদ্ধতা। যেখানে স্বয়ং যুক্তরাজ্যেই বয়সের কোন সীমাবদ্ধতা নেই, সেখানে আমরা কেন স্বাধীনতার এত বছর পরেও তাদের শোষনের উদ্দেশ্যে রেখে যাওয়া নীতি অনুসরণ করবো। উল্লেখ্য যে,প্রাথমিক অবস্থায় শুধুমাত্র ইংরেজ ছাড়া কেউ ভারতবর্ষের প্রশাসক হতে পারতো না । তিনি আরও বলেন, একজন মানুষের বয়সসীমা তার যোগ্যতার মাপ কাঠি হতে পারে না। যোগ্যতা নিরুপনের জন্য পরীক্ষা আছে । তাই চাকরিতে নিয়োগ হওয়া উচিত যোগ্যতার ভিত্তিতে বয়সের ভিত্তিতে নয়,বয়সের সীমিবদ্ধতা একজন নাগরিকের সাথে বৈষম্যমূলক আচরন ছাড়া আর কিছুই নয়। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু যখন ৪৫ বছর ছিল তখন চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ছিল ২৭ বছর, যখন ৫০ ছাড়ালো তখন প্রবেশের বয়সসীমা হলো ৩০ বছর। বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭২ বছর হলে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা এখনও অপরিবর্তিতই রয়ে গিয়েছে। তাই অতিশীগ্রই চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর করা হোক। সরকারি নিয়ম অনুসরণ করার ফলে বেসরকারি ব্যাংকসহ বহুজাতিক কোম্পানী গুলোও ৩০ বছরের উর্ধ্বে জনবল (অভিজ্ঞতা ছাড়া) নিয়োগ দেয় না যার ফলে বেসরকারি ক্ষেত্রেও কর্মের সুযোগ সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে; তাই চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করা দরকার। উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা অবশ্যই ৩৫ বছর করা প্রয়োজন। কারন উন্নত বিশ্বকে আমরা অনুসরণ করে শিক্ষা,চিকিৎসা, কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তি, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছি। তদ্রপ চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে উন্নত বিশ্বকে অনুসরণ করে দক্ষ জনশক্তিকে কাজে লাগিয়ে আমরাও সফলতা অর্জন করতে পারি। বক্তারা আরও বলেন, বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিনত করতে হলে যুব সমাজকে কাজে লাগাতে হবে। যুবনীতি ২০১৭ তে যুবদের বয়স ১৮-৩৫ বছর রাখা হয়েছে। যেখানে বলা হয় ৩০-৪০ বছর হচ্ছে মানুষের পরিপূর্ন যৌবন অর্থাৎ সুবর্ন সময় যা কর্মক্ষেত্রে লাগানোর উপযুক্ত সময়। আজ থেকে প্রায় ২৭ বছর আগে তৎকালিন সরকার চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩ বছর বাড়িয়ে ৩০ বছর করেছিলেন। গত সাতাশ বছরে দেশের সকল ক্ষেত্রই উন্নত ও পরিবর্তন হলেও শুধু পরিবর্তন হয়নি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা, যার ফলে আমাদের মতো সাধারণ ছাত্র/ছাত্রীদের ভাগ্যেরও কোন পরিবর্তন হয়নি। বক্তারা বলেন, যেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষনা করেছেন বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে। যেখানে সকল মধ্যম আয়ের দেশে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বা তদূর্ধ্ব, সেখানে বাংলাদেশের জনগন কেন একই সুবিধা পাবে না ? তাই উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের দেশেও চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানো হোক। তিনি আরোও বলেন বর্তমান মহামান্য রাষ্ট্রপতি ২০১২ সালের ৩১ জানুয়ারি স্পিকার থাকাকালীন অবস্থায় যখন চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন তখনই চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছরে উন্নীত করার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরেও এটা বাস্তবায়ন না হওয়া খুবই দুঃখ জনক। দেশের উচ্চশিক্ষিত তুরুন তরুনিদের পিছিয়ে রেখে দেশ কখনো সামনের দিকে এগোতে পারে না। তাই চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করা হোক। চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার প্রস্তাবটি নবম সংসদ থেকে শুরু করে দশম সংসদের সর্বশেষ অধিবেশন পর্যন্ত মাননীয় সংসদ সদস্যরা উত্থাপন করেই আসছেন। বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ, সংসদ সদস্য মইন উদ্দীন খান বাদল,সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আমির হোসেন, যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী প্রমুখ বিভিন্ন সময় এই বিষয়টির প্রয়োজন তুলে ধরেছেন। দেশের লক্ষ লক্ষ উচ্চশিক্ষিত তরুন-তরুনিরা বয়সের দেয়ালে আবদ্ধ হয়ে হতাশায় ভুগছেন। সমাবেশ থেকে আগামী ৩১ শে মার্চ চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছরে উন্নীত করার লক্ষ্যে ঢাকার শাহবাগে মহাসমাবেশ সফল করার জন্য সকলের প্রতি আহŸান জানানো হয়।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *