Connect with us

দেশজুড়ে

চুয়াডাঙ্গায় পানচাষিরা বিপাকে, সপ্তাহে ৩ কোটি টাকা লোকসান

Published

on

pan জেলা প্রতিনিধি, চুয়াডাঙ্গা:
দেশের অন্যতম বৃহত্তর ও ঐতিহ্যবাহী পানের হাট চুয়াডাঙ্গা সদরের ভালাইপুর হাট। এটি ছাড়াও বড়-ছোট মিলে জেলায় পানের হাট রয়েছে আরও আটটি। জেলার প্রধান অর্থকরী ফসল পান। পান রসেই ঘোরে এখানকার কৃষকদের অর্থনৈতিক চাকা। এ হাট থেকে সপ্তাহে ৪ কোটি টাকার পান বিক্রির নজিরও পাওয়া যায়। সব মিলিয়ে জেলায় প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৮ কোটি টাকার পান বিক্রি হয়। কিন্তু দেশে টানা অবরোধ ও হরতালে পানের হাটগুলোতে বেপারী কম আসায় গত কয়েক হাটে পানের চাহিদা তুলনামূলকভাবে অতি সামান্যই বলা চলে। বিক্রি করলে কম মূল্যে বিক্রি করতে হয়। ফলে উৎপাদন খরচ তো ওঠেই না বরং গুণতে হয় লোকসান। আর বিক্রি না করলে তো পুরোটাই লোকসান। উপায়ান্তর না দেখে কৃষকরা বাধ্য হয়েই কম দামে পান বিক্রি করছেন। এতে করে দেখা গেছে প্রতি সপ্তাহে পানচাষি, ব্যবসায়ী ও বেপারীদের লোকসান গুণতে হচ্ছে প্রায় ৩ কোটি টাকা। কর্মহীন হয়ে পড়েছে পানের হাটে কর্মরত শ্রমিকরাও।
এ বছর জেলায় পানের উৎপাদন ছিল সন্তোষজনক। চুয়াডাঙ্গা ভালাইপুর পান হাটে সপ্তাহে শনি ও মঙ্গলবার হাজার হাজার ঝুড়ি পান বিক্রির জন্য আনা হয়। শেরপুর, জামালপুর নরসিংদী, কুমিল্লা, ফেনী, সিলেট, যশোর, নীলফামারী, রংপুর, দিনাজপুর, ঢাকা, নোয়াখালী, ময়মনসিংহসহ দেশের প্রায় সব জেলার বেপারীরা পান ক্রয় করতে আসে। পানের আকার ভেদে ও মানের দিক থেকে প্রতি পণ পান বিক্রি হয় ৬০/১৪০ টাকায়। কিন্তু হরতাল ও অবরোধে পানের হাটে প্রভাব পড়েছে। পানের হাটে যথেষ্ট পান থাকলেও ক্রেতা সমাগম তুলনামূলকভাবে কম। তাই বাধ্য হয়ে পান চাষিদের কম দামে পান বিক্রি করতে হচ্ছে। আবার পানের দাম কম থাকায় অনেকে পান বরজ থেকে পান তুলছেন না। সেই সব বরজের পান ঝড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। ভালাইপুর পানের হাটে প্রায় ২ হাজার শ্রমিক প্রত্যক্ষভাবে কাজ করেন। সবাই এখন বেকার। শ্রমিক সালাম, রশিদুল, নাজমুল, মুকুল, সামাদ ও রহমান জানান, আগের তুলনায় কাজ অনেক কম, তাই উপার্জন সামান্য। আগে যেখানে ৫৫০-৭০০ টাকা আয় হত প্রতি হাটে, এখন ১৫০ টাকা রোজগার করা বেশ কঠিন।
শ্রমিক লুৎফর রহমান জানান, আয় তো সামান্য টাকা, তা দিয়ে চাল-ডাল, তরিতরকারি, ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়াসহ প্রয়োজনীয় এত টাকা কোথায় পাব। ধার-দেনা করে আর কয়দিন চলা যায়। এভাবে চলতে থাকলে আমরা একদিন না খেয়ে মারা যাব।
ভালাইপুর হাটের ব্যবসায়ী জিনারুল ইসলাম, অতুল সাহা, আনছার আলি, জাহাঙ্গীর আলি, রহমত মিয়া জানান, আগে বেপারীরা প্রতি হাটে ২৫-২৭ ট্রাক পান ক্রয় করতো। বর্তমানে ৭-৯ ট্রাক পান বিক্রি হচ্ছে। লোকসান হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। আমাদের মত সাধারণ ব্যবসায়ীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পান ব্যবসায়ী মজিবুল হক ক্ষোভের সাথে জানান, আগে প্রতি হাটে যেখানে ৫০০-৫৫০ ঝুড়ি পান ক্রয় করতো বেপারিরা। এখন ২০০ ঝুড়ি পান বিক্রি করা যেন কঠিন হয়ে পড়েছে।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ১৮৩১ হেক্টর জমিতে পান বরজ আছে প্রায় ১২ হাজার একর। সদর উপজেলায় ৪৯০ হেক্টর, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ১১৫০ হেক্টর, দামুড়হুদা উপজেলায় ১৭০ হেক্টর, জীবননগর উপজেলায় ৬০ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়। ১১ হাজার কৃষক পান চাষের সাথে জড়িত। জেলাবাসী ও পানচাষিরা মনে করেন, পান রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *