Connect with us

দেশজুড়ে

চেয়ারের দোকান বসিয়ে পঙ্গু মওলার জীবন

Published

on

কোটচাঁদপুর প্রতিনিধি:
শারীরিক প্রতিবন্ধী মওলার ছোট বেলা থেকেই জিদ, কখনও ভিক্ষা করবেন না। কারো কাছে হাতও পাতবেন না। পঙ্গু শরীরটা কাজে লাগাবার মতো নয়, তারপরও তিনি সর্বদাই এ পঙ্গু শরীরটাকে কাজে লাগানোর প্রয়াস পেয়েছেন। তিনি তার এ নৈতিকতাবোধ সম্পন্ন মানষিকতা নিয়ে জীবনের সংগ্রাম শুরু করেন একটি বিস্কুট কারখানাতে। বসে বসে কাজ করতেন তিনি, ঠিকমতো কাজ করতে না পারায় চাকুরিটা হারায় মওলা। এরপর বাড়িতে বসেই দিন কাটছিল কিছু দিন। এমন সময় বুদ্ধি আসে ব্যবসা করার। কিন্তু কিভাবে? তাই একটি হুইল চেয়ার কিনে তাতেই দোকান সাজিয়ে নেন মওলা বক্স। এখন এই ভ্রাম্যমাণ দোকান নিয়ে তিনি ঘুরে বেড়ান এ গ্রাম থেকে সে গ্রাম। কেনাবেচাও ভালো। প্রতিদিন ১২০ থেকে ১৫০ টাকা আয় হয় তার। যা দিয়ে সংসার চালান। কারো কাছে হাত পাততে হয় না মওলা বক্সের।
মওলা বক্স (৩৫) ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার কুশনা গ্রামের গোলাম রব্বানির পুত্র। চার ভাইবোনের মধ্যে মওলা সবার ছোট। মওলার মা ফুলজান নেছা জানান, জন্ম থেকেই তার ছেলেটি পঙ্গু। অনেক কষ্ট করে বড় করে তুলেছেন। কিন্তু কোনো কাজ করতে পারেন না। হাঁটা-চলা করতে না পারায় মওলা কোনো কাজ করতে পারে না। পিতার অবস্থাও খুব একটা ভালো ছিল না। ১৮ বছর পূর্বে তিনি মারা যান। এরপর তার দুই ভাই বজলুর রহমান ও নজরুল ইসলাম কর্মের সন্ধানে বিদেশে চলে যান। এরপর তাকে পৃথক হতে হয়। ১৪ বছর পূর্বে একই উপজেলার বামনদাহ গ্রামের ফকির চাঁদ এর কন্যা করিমন নেছাকে বিয়ে করে সংসার করছেন। এই সময় পরিস্থিতি এমন দাড়িয়েছিল তাকে অন্যের কাছে হাত পাততে হবে। কিন্তু মওলার ইচ্ছে কখনও হাত পেতে ভিক্ষা নিবেন না। তখন জীবিকার প্রয়োজনে একটি বিস্কুট কারখানায় কাজ নেন। কোটচাঁদপুর শহরের ওই কারখানায় কাজ করতেন আর সংসার চালাতেন। কিন্তু ঠিকমতো কাজ করতে না পারার কারণে মালিক কাজ ছেড়ে দিতে বলেন। বাধ্য হয়ে কাজ ছেড়ে দেন। এরপর বাড়িতে বসে সময় কাটছিল। অবস্থা এমন হয়ে গিয়েছিল আর সংসার চালানো যাচ্ছে না। ঠিক তখন বুদ্ধি করে হুইল চেয়ারে দোকান সাজিয়ে নেন।
মওলা বক্স জানান, ভায়েরা বিদেশ থেকে টাকা উপার্জন করে এখন কিছুটা ভালো। তার সংসার চলে না। ভায়েরা থাকার জন্য তার এক রুমের একটি ঘর করে দেন। কিন্তু সংসার চলবে কিভাবে। তখন মাথায় চিন্তা আসে একটা হুইল চেয়ার ক্রয় করে সেটা দোকান হিসেবে তৈরি করতে হবে। ওই দোকান নিয়ে গ্রামে গ্রামে ব্যবসা করবেন তিনি। এই বুদ্ধি থেকে ৯ মাস পূর্বে ৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি হুইল চেয়ার ক্রয় করেন। দোকানের মালামাল ঝুলিয়ে রাখা যায় এমন করে সেটা তৈরি করে নিয়েছেন। এখন ওই চেয়ারের গায়ে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার পন্য। যা নিয়ে তিনি গ্রামের পাশের স্কুল ও বাজারে চলে যান। চেয়ারে বসেই পণ্য বিক্রি করেন। এভাবে তিনি প্রতিদিন ১২০ থেকে ১৫০ টাকা আয় করেন। যা দিয়ে স্বামী-স্ত্রীর সংসার চলছে। তিনি বলেন, কারো কাছে হাত পাততে হয় না। কষ্ট হলেও ভালো আছেন তিনি।
তার স্ত্রী করিমন নেছা জানান, পঙ্গু মানুষটাকে বিয়ে করেছেন। কখনও অবহেলা করেননি। তার স্বামীও তাকে খুব ভালোবাসে। কিন্তু তাদের ঘরে কখনও কোনো সন্তান আসবে না। তার একটা অপারেশনের কারণে এই ক্ষমতা হারিয়েছেন। যেটা ভেবে মাঝেমধ্যে কষ্ট হয়। তা ছাড়া ভালোই আছেন বলে জানান। তিনি আরো বলেন, নিজে চেয়ার চালিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ান। তার ভয় হয় কখনও দুর্ঘটনা না ঘটে। পুঁজি থাকলে একটা স্থায়ী দোকান করতে পারলে এই ভয় থাকতো না।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *