Connect with us

দেশজুড়ে

চোরকারবারীদের অবৈধ অনুপ্রবেশে জুলেখানগর চা বাগান হুমকির মুখে

Published

on

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
জুলেখানগর চা বাগানের সীমানায় বাংলাদেশের লাংলীছড়া শেষেই ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাঙ্গিছড়া ও কমলপুরের অবস্থান। ১৯২১/১/এস এবং ১৯২১/২/এস নং সীমানা পিলারের ওপারে ভারত এবং এপারে সৈয়দ টি এন্ড লেন্ডস কো. লি. এর মালিকানাধীন জুলেখা নগর চা বাগানের ৮নং ও ৯নং সেকশন তথা বাংলাদেশের অবস্থান। ওপারের রাঙ্গিছড়ায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) এর চেকপোস্ট (রাঙ্গিছড়া চেকপোস্ট) থাকলেও এপারে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবির) কোন চেকপোস্ট নেই। ফলে চোরাকারবারীদের চলছে রমরমা বাণিজ্য।
ভারতীয়দের বাংলাদেশে প্রবেশের সুবিধার্থে রাঙ্গিছড়া চেকপোস্টে রয়েছে বাংলাদেশমুখী বিশাল লোহার গেট। সকাল ৮টার মধ্যে ওই গেইট দিয়ে ভারতীয়রা (ত্রিপুরা) অবৈধ অস্ত্র, মদ, গাঁজা, ফেনসিডিল, হিরোইন ইত্যাদি মাদকদ্রব্য ও অন্যান্য চোরাইপণ্য নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং নির্বিঘেœ তাদের বাংলাদেশি সহযোগীদের নিকট তা হস্তান্তর ও বাংলাদেশি চোরাইপণ্য গ্রহণ করে বিকেল ৪টার মধ্যে আবার নিরাপদে ওই গেট দিয়েই ভারতে ফিরে যায়। এছাড়া সীমান্ত সংলগ্ন বাংলাদেশি ভূ-খণ্ডকে ভারতীয় গরুর বাথান (গো-চারণ ভূমি) হিসাবে ব্যবহার তো নৈমিত্তিক ব্যাপার। বাগানের নিরীহ শ্রমিক টু শব্দটি করলে ভারতীয়রা সশস্ত্র অবস্থায় বাগানের শ্রমিক বস্তিতে এসে নারী-পুরুষ চা শ্রমিকদের উপর চালায় নির্যাতন।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে দু’জন প্রত্যক্ষদর্শী উপরোক্ত বিবরণের সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন- শুধু ভারতীয়রাই নয়, সাদা পোশাকে বিএসএফ সদস্যরাও উল্লিখিত কর্মকাণ্ডে সরাসরি অংশগ্রহণ করে থাকে। তাদের চালচলন, পায়ের জুতা ও আগ্নেয়াস্ত্র বহন থেকেই বিষয়টি নিশ্চিত বলে তারা জানান। ভারতীয়দের এহেন অবৈধ অনুপ্রবেশ, চোরাইপণ্য আদান-প্রদান, পরিস্থিতির তথ্য অবহিতকরণ এবং উভয়দেশের চোরাচালানীদের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান ও যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে কাজ করে স্থানীয় খাসীয়া পুঞ্জির খাসীয়ারা। এসব চোরাইপণ্য নির্বিঘেœ শ্রীমঙ্গলসহ বিভিন্ন স্থানে পৌঁছানোর রুটগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব পালন করেন স্থানভিত্তিক গডফাদাররা। এদের কাছে চা বাগানের মালিক-শ্রমিকরা অসহায়। চোরাচালানীদের যাতায়াত বন্ধে জুলেখানগর চা বাগান কর্তৃপক্ষ চা বাগানের ৮নং ও ৯নং সেকশনের দু’টি স্থানে গেট নির্মাণ করে দু’দেশের মধ্যকার চোরাই রাস্তা বন্ধ করে দেন। এছাড়া, অন্যান্য কয়েকটি স্থানে গেট নির্মাণের উদ্যোগ নিলে, শুরুতেই শ্রীমঙ্গলের জনৈক প্রভাবশালী ব্যক্তি ওই গেটগুলো ভেঙ্গে ফেলেন এবং ৮নং ও ৯নং সেকশনের গেট দুটি উন্মুক্ত করে দিতে বলেন। উন্মুক্ত করে না দিলে পরিণাম ভালো হবে না মর্মে হুমকি দেন এবং বাগানের কোথাও গেট নির্মাণ না করার জন্য চাপ ও হুমকি অব্যাহত রেখেছেন বলে জুলেখানগর চা বাগানের একটি সূত্র জানায়।
৮নং ও ৯নং সেকশনের মধ্যবর্তী বাগানের নতুন সেকশন, জে.এল:৯৯ দাগ:১,২ প্লানটেশন কাজ চলছে। এ সেকশন দীর্ঘ ৭০ বছর যাবৎ বাগানের লিজে ও বাগানের দখলে রয়েছে। শ্রমিকরা নতুন এ সেকশনে কাজ করতে গেলে প্রায়ই সন্ত্রাসীরা হুমকি দেয়।
এ ব্যাপারে সৈয়দ টি এন্ড লেন্ডস কো. লি. এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ হাফিজুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে, উপরোল্লিখিত বিবরণের সত্যতা স্বীকার করেন এবং জানান, সন্ত্রাসীরা পেশীশক্তিবান ও তাদের বড় বড় গডফাদার রয়েছে। সৈয়দা গোলশান আরা ২০০৪ সাল থেকে সৈয়দ টি এন্ড লেন্ডস কো. লি. এর পরিচালক হিসাবে বাগানের দায়িত্বভার গ্রহণ করতেই তার উপর নেমে আসে একের পর এক নানামুখী ষড়যন্ত্র। সব বাধা উপেক্ষা করে এবং সরকারি কোন অনুদান বা সহযোগিতা ছাড়াই বাগানটি দিন দিন উন্নত হতে থাকে। প্রায় ১০ একর ভূমি ক্রয় করে বাড়ানো হয় বাগানের পরিধি। শ্রমিকদের চিকিৎসার জন্য রয়েছে নিজস্ব সার্বক্ষণিক হাসপাতাল যাতে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন ১ জন মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট, ১ জন কম্পাউন্ডার, ১ জন মিডওয়াইফ। চা শ্রমিক সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য নিজস্ব অর্থায়নে জুলেখানগর প্রাথমিক বিদ্যালয়, মুসলমানদের জন্য মসজিদ, হিন্দুদের জন্য মন্দির ও খ্রিষ্টানদের জন্য গীর্জা নির্মাণ করেন। নিজস্ব অর্থায়নে শ্রমিকদের বিশুদ্ধ পানির জন্য বাগানে গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। বাগানের স্যানিটেশন অনেক উন্নত। বাগানের পরিচালক, কর্মকর্তাবৃন্দ ও শ্রমিকদের মধ্যে রয়েছে সৌহার্দ্যপূর্ণ ও বন্ধু বৎসল সম্পর্ক।
সৈয়দা গোলশান আরা এসব ব্যাপারে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, “ভারতীয় অনুপ্রবেশের কারণে তিনি নিজে এবং তার শ্রমিকরা নিপীড়িত, নির্যাতিত ও আতঙ্কিত থাকে প্রতিনিয়ত। এতে করে বাগানের উন্নয়ন হচ্ছে বাধাগ্রস্ত। এখানে একটি বিজিবি ক্যাম্প স্থাপন করা হলে এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে আলোচনাও হয়েছে এবং ক্যাম্প স্থাপনের জন্য বাগানের এক একর ভূমিও বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বেশ কিছুদিন আগেই। কিন্তু, এখনও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় নি। হবে কি-না তাও জানতে পারছেন না তারা।”

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *