Connect with us

ঠাকুরগাঁও

ঠাকুরগাঁওয়ে ইটের গাড়ির কারণে কাঁচা রাস্তার বেহাল দশা

Published

on

আব্দুল আউয়াল, ঠাকুরগাঁও: আইনে গ্রামীণ সড়ক দিয়ে ইট বা ইটের কাঁচামাল পরিবহন চলাচলে নিধেষাজ্ঞা থাকলেও ইটভাটার মালিকরা তা মানছে না। ইট ও ইটের কাঁচামাল নিয়ে প্রতিদিন মাহিন্দ্র ট্রাক্টর চলাচলের কারণে ঠাকুরগাঁওয়ের গ্রামীণ রাস্তাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সড়কগুলো ভেঙে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় গর্তের। এ কারণে এসব সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে দুভোর্গ পোহাচ্ছেন স্থানীয়রা।

ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩-এর ৫ নম্বর ধারার মাটির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও হ্রাসকরণ অংশের ৪ নম্বর উপধারা অনুযায়ী, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্মিত উপজেলা বা ইউনিয়ন বা গ্রামীণ সড়ক ব্যবহার করে কোনো ব্যক্তি ভারী যানবাহন দ্বারা ইট বা ইটের কাঁচামাল পরিবহন করতে পারবেন না। এ আইন লঙ্ঘন করলে অনধিক এক লাখ টাকা জরিমানা করা হবে।

ঠাকুরগাঁও এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও জেলার উপজেলা পর্যায়ে এলজিইডির ৩৮১ কিলোমিটার, ইউনিয়ন পর্যায়ে ২১১ কিলোমিটার ও গ্রামীণ পর্যায়ে ক শ্রেণির ১২৯ কিলোমিটার ও খ শ্রেণির ৫৪ কিলোমিটার পাকা সড়ক রয়েছে। কমবেশি সব সড়ক ব্যবহার করে ইটের কাঁচামাল ও ইট পরিবহন করছে ইটভাটা কর্তৃপক্ষ।

সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এলজিইডির সড়ক ঘেঁষে মেসার্স নীড় ব্রিকস, এমএবি ব্রিকস, এসএমবি ব্রিকস ও এএমবি ব্রিকস। ওই সড়ক ব্যবহার করে ইট ও ইট তৈরির কাঁচামাল পরিবহন করছেন এসব ভাটার মালিকেরা। ভারী যানবাহনে ইট ও ইট তৈরির কাঁচামাল পরিবহন করায় সড়কগুলো ক্ষয়ে গেছে। সড়কের জায়গায় জায়গায় সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অনেক গর্ত। ইট পরিবহনের সময় ধুলো ওড়ায় পথচারীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

এ ছাড়া সদর উপজেলার রুহিয়া সড়কের বুড়ি বাঁধ এলাকায় এমএবি ব্রিকস-২, ফাঁড়াবাড়ি সড়কে এমএসবি ব্রিকস, আরইউএস ব্রিকস, এসকে ব্রিকস, নীল সাগর ব্রিকসসহ আটটি ভাটা, নারগুন এলাকায় এইচবিএস ব্রিকস ও এমবিএম ব্রিকসসহ জেলায় ৬৭টি ইটভাটা রয়েছে। গ্রামীণ সড়ক ব্যবহার করে এসব ভাটার ইট ও ইট তৈরির কাঁচামাল ভারী যানবাহনে পরিবহন করা হচ্ছে।

সামসুদ্দিন আলম নামে এক ট্রাক্টর চালক জানান, একটি ট্রাক্টরে কমপক্ষে দুই হাজার ইট পরিবহন করা হয়। সে হিসেবে ইটবোঝাই একটি ট্রাক্টরের ওজন পাঁচ থেকে ছয় টন হয়।

আকচা গ্রামের কৃষক জয়নন্দ সেন জানান, ৫-৬ বছর আগে রুহিয়া সড়কের পল্টন এলাকা থেকে আকচা গ্রামের ভেতর দিয়ে বিএডিসি খামার পর্যন্ত একটি পাকা রাস্তা তৈরি করে এলজিইডি। কিন্তু এলাকায় কয়েকটি ইটভাটা স্থাপন হওয়ার পর ওই রাস্তা দিয়ে ইট তৈরির মাটি ও পোড়ানো ইট পরিবহনের জন্য ভারী যানবাহন চলাচল শুরু হয়। এতে কিছুদিন পরেই রাস্তা ভাঙতে শুরু করে।

একই গ্রামের তরিকুল ইসলাম বলেন, গ্রামীণ রাস্তাগুলো ভেঙে যাওয়ার পর ধুলা জমে গেছে। এখন শুষ্ক মৌসুম। এ মৌসুমে ইটবাহী ট্রাক্টরগুলো চলাচল করায় ধুলা-বালু উড়তে থাকে। এ কারণে ওই রাস্তা দিয়ে পথচারীদের চলাচল করতে সমস্যা হয়।

কাজীপাড়া গ্রামের গৃহবধু তোয়াসমিন আক্তার বলেন, ধুলো-বালির কারণে শিশুরা শ্বাসকষ্ট, হাপানী সহ নানানগ রোগে ভুগছেন।

ঠাকুরগাঁও এলজিইডি’র সহকারী প্রকৌশলী হরিকিংকর মোহন্ত জানান, এলজিইডির গ্রামীণ পাকা সড়কগুলোর ধারণক্ষমতা বিচার করে তিন টনের বেশি মালামাল বোঝাই যানবাহন চলাচলে নিরুৎসাহিত করা হয়। এর বেশি ওজনের যানবাহন চলাচল করলে সড়কগুলো ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তারপরও ইটভাটার মালিকেরা এসব গ্রামীণ রাস্তা দিয়ে তাদের ভারী যানবাহন চলাচল করছে। একারণে রাস্তাগুলো বেহলা দশায় পরিণত হয়েছে।

মেসার্স নীড় ব্রিকসের ইট ভাটার মালিক সন্তোষ আগরওয়ালা বলেন, এলজিইডির সড়ক ব্যবহার করে ইটের কাঁচামাল ও ইট পরিবহন করা যাবে না এ বিষয়টি তিনি জানেন না।

এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম জানান, বিষয়টি শুনেছি। বিষয়টি যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *