Connect with us

আন্তর্জাতিক

তালেবানের সিরিজ বোমা হামলা : কাবুলে অর্ধশত নিহত

Published

on

তালেবানের সিরিজ বোমা হামলা

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে জঙ্গিদের সিরিজ বোমা হামলায় অর্ধশতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে প্রায় কয়েকশ’। নিহতদের মধ্যে ন্যাটোর সদস্যসহ দেশটির সেনা ও পুলিশ সদস্য রয়েছেন। শুক্রবার ২৪ ঘন্টার মধ্যে আফগান সেনা, পুলিশ এবং মার্কিন বিশেষ বাহিনীর ওপর এসব হামলা চালানো হয়। হামলার কঠোর নিন্দা জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এদিকে দেশটির এক ধর্মীয় নেতা তালেবানের কর্মকাণ্ডকে ইসলাম ও শরীয়াহ বিরোধী বলে উল্লেখ করেছেন। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই হামলার কারণে চলমান তালেবানের সঙ্গে শান্তি আলোচনা বিঘ্নিত হতে পারে। আফগান প্রেসিডেন্ট গতকাল জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছেন। খবর বিবিসি, রয়টার্স, আফগানিস্তান টাইমস ও পাঝৌক আফগান নিউজের।

তালেবান নেতা মোল্লা ওমরের মৃত্যুর তথ্য ফাঁস হওয়া এবং গোষ্ঠীটির মধ্যে বিরোধের খবর প্রকাশের কয়েক দিনের মধ্যেই এই হামলার ঘটনা ঘটলো। রক্তাক্ত এই হামলা শুরু হয় সকালে শহরের শাহ শহিদ এলাকায় সামরিক স্থাপনার কাছে শক্তিশালী ট্রাক বোমা হামলায় অন্তত ১৫ জন নিহত হয়। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ বাহিনীর একটি ঘাঁটিতে হামলা চালালে সেখানে প্রায় এক ঘন্টাব্যাপী গুলি বিনিময় হয়। গত কয়েক বছরে কাবুলে এটাই সবচেয়ে বড় ধরনের হামলা। ইসলামী মৌলবাদি জঙ্গিরা পুলিশ অ্যাকাডেমি এবং মার্কিন বাহিনীর ওপর হামলার দায় স্বীকার করেছে। তবে ট্রাক বোমা হামলার দায় স্বীকার করেনি।

গতকাল শনিবার ন্যাটো নেতৃত্বাধীন মিত্র বাহিনী নিশ্চিত করে যে, বিমান বন্দরের কাছে মার্কিন বিশেষ বাহিনীর ক্যাম্পে হামলায় একজন আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী এবং আটজন আফগান ঠিকাদার নিহত হয়েছে। রাতে এখানে চালানো বোমা এত শক্তিশালী ছিল যে, তা বিমান বন্দরের ভেতরের অফিসেও আঘাত হানে। এমনকি সামান্য উপরে হেলিকপ্টারেও এর আঁচ পাওয়া যায়।

মার্কিন বাহিনীর এক আহত সদস্য জানান, ক্যাম্পের গেইটে বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটে। দুই দিক থেকে হামলা চালানো হয়। প্রথমে এখানে গাড়ি বোমা হামলা চালানো হয়। এরপর আরো একটি বিস্ফোরণ ঘটে। সেখানকার আগুন নেভাতেও কয়েক ঘন্টা লাগে। ক্যাম্পের কাছে অবস্থান করা একজন মার্কিন ঠিকাদার জানিয়েছেন, ক্যাম্পটি মার্কিন বাহিনী কর্তৃক পরিচালিত হয়। তবে ক্যাম্পের পক্ষ থেকে কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে। হেলিকপ্টারে করে নিহত ও আহতদের হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।

শুক্রবার সন্ধ্যায় পুলিশ অ্যাকাডেমিতে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল জানিয়েছে, এখানে ৪০ জন আহত হয়েছে। পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, এখানে ২৬ জন নিহত এবং ২৮ জন আহত হয়েছে। হামলাকারী পুলিশের পোশাকে ছিলেন। তিনি এমন সময় হামলা চালান যখন ছাত্ররা কেবল বিরতি কাটিয়ে এসেছেন।

তালেবানের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ জানিয়েছেন, তারা পুলিশ অ্যাকাডেমি এবং ক্যাম্পে হামলা চালিয়েছে। তবে তিনি ট্রাক বোমা হামলার বিষয়টি সম্পর্কে কিছু বলতে অস্বীকার করেন। এই হামলায় অনেক নিহত হয় এবং আহত হয় আড়াইশ মানুষ। এতে একটি ভবনই ধ্বংস হয়ে যায়।

২০০১ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন মিত্র বাহিনীর অভিযানে আফগানিস্তানে তালেবান শাসনের অবসান ঘটে। এরপর বিভিন্ন বড় ধরনের হামলা চালিয়ে আসছে। তবে বেসামরিক নাগরিক নিহত হলে তারা খুব কম সময়ই দায় স্বীকার করেছে।

আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি বলেছেন, তালেবানদের ভেতরে তাদের নেতৃত্ব নিয়ে যে দ্বন্দ্ব চলছে সেদিক থেকে নজর সরানোর জন্য একের পর এক বোমা হামলা চালাচ্ছে তালেবান জঙ্গিরা।

গত সপ্তাহে জানা যায়, তালেবান নেতা মোল্লা ওমর দুই বছর আগেই মারা গেছেন। তার স্থলে মোল্লা আক্তার মনসুরকে নতুন নেতা নিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এরপর শোনা যায়, মনসুরকে তালেবানের একাংশ মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। গত সোমবার তালেবান একটি ভিডিও প্রকাশ করে যাতে দেখা যায়, অনেকে মনসুরের নেতৃত্বের প্রতি অঙ্গীকার করছেন। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, তালেবানের মধ্যে দ্বন্দ্ব আরো বাড়তে পারে। আফগানিস্তানে জাতিসংঘের প্রধান নিকোলাস হেইসম বলেন, তালেবানের মধ্যকার ক্ষমতার দ্বন্দ্বের কারণে এই হামলা চালানো হতে পারে। ভবিষ্যতে সেটা আরো বাড়তে পারে।

আফগানিস্তান বিষয়ক বিশ্লেষক থমাস রুটিগ বলেন, এর মাধ্যমে তালেবান একটি বার্তা দেয়ার চেষ্টা করছে যে, তারা কোনো সমঝোতা করবেন না। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কে এই বার্তা দিচ্ছেন? শুক্রবারের হামলায় হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

রুটিগ বলেন, এর মাধ্যমে মনসুর আফগান সরকারকে একটা বার্তা দেয়ার চেষ্টা করছেন এবং তাদের মধ্যে যে বিরোধ নেই সেই বিষয়টি সরকারকে বোঝাতে চাইছেন। আর দলেও তার অবস্থান শক্তিশালী করছেন। অন্যদিকে তালেবানের এই বিরোধ ভবিষ্যতে আলোচনার পথ রুদ্ধ করতে পারে। অনেকেই হয়তো মনে করেছিলেন, মোল্লা ওমরের মৃত্যু তালেবানকে বিশৃঙ্খল অবস্থার দিকে নিয়ে যাবে দুর্বল করবে। রুটিগের মতে, সেই বিষয়ে খুব বেশি আশাবাদী হওয়ার সুযোগ নেই। গত সপ্তাহে সরকারের সঙ্গে তালেবানের আলোচনা স্থগিত করা হয়। এর মধ্যস্ততাকারী পাকিস্তান আলোচনা স্থগিতের ঘোষণা দেয়।

গত বছর আফগানিস্তান থেকে অধিকাংশ বিদেশি সৈন্য প্রত্যাহারের পর চলতি বছর তালেবান দ্বিতীয়বারের মতো আন্তর্জাতিক ক্যাম্পে হামলা চালালো। শুক্রবার যে স্বেচ্ছাসেবী নিহত হয়েছেন তার জাতীয়তা সম্পর্কে কিছু প্রকাশ করা হয়নি। গত বছর ন্যাটো বাহিনীর যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর পশ্চিমা সমর্থিত সরকারের ওপর তালেবানের হামলা বেড়ে গেছে। সহিংসতার শিকার হয়েছে আফগান নিরাপত্তা বাহিনী এবং বেসামরিক নাগরিক। জাতিসংঘের তথ্য মতে, চলতি বছরেই প্রায় ৫ হাজার বেসামরিক নাগরিক হতাহত হয়েছে।

মার্কিন হোয়াইট হাউস শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা আশা করেন, নতুন তালেবান নেতা আফগান সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় আরো অগ্রগামী হবেন। আফগানিস্তানের দাওয়াত-ই-ইসলামি পার্টির নেতা এবং সাবেক জিহাদি নেতা আবদুল রব রসুল সায়েফ তালেবানকে এই যুদ্ধ থেকে সরে আসার আহবান জানিয়ে বলেন, তারা মূলত বিদেশিদের সুযোগ করে দিচ্ছে। তারা যে কাজ করছে তা ইসলাম বিরোধী।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *