Connect with us

দেশজুড়ে

নীলফামারীর ফুটপাতে চলছে পিঠা বিক্রির ধুম

Published

on

img_20161128_091537
নীলফামারী প্রতিনিধি: শীত এলেই যেন হরেক রকম সুস্বাদু পিঠার বাহারি আয়োজন। কুয়াশা মোড়ানো শীতের হিমেল হাওয়ায় ধোয়া উঠা ভাপা পিঠার স্বাদ না নিলে যেন তৃপ্তি মেটেনা অনেকের। নিজেদের আদি ঐতিহ্য অব্যাহৃত রাখতে নীলফামারী জেলার বিভিন্ন গ্রাম অঞ্চলের ঘরে ঘরে চলছে পিঠা তৈরি ও খাওয়ার ধুম। ভাপা পিঠার পাশাপাশি চিতাই পিঠার আয়োজনও লক্ষ্য করা গেছে বিভিন্ন গ্রামে। শীতের সকাল কিংবা সন্ধ্যায় হাওয়ায় ভাসছে এসব পিঠা। নতুন খেজুরের গুড় আর নতুন চালের গুড়া দিয়ে তৈরি হয় এসব পিঠা।

গরম পানির ভাঁপে এ পিঠা তৈরি হয় বলে এর নাম ভাপা পিঠা। পিঠাকে মুখরোচক করতে এর সাথে মিশানো হচ্ছে খেজুর গুড়, নারিকেল এবং লবণ। এতে পিঠার স্বাদ বাড়ে বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন গৃহস্থালীর কাজে নিয়োজিত মহিলারা। আর কয়েকদিন পরেই গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে জামাই মেয়ে বিহাই বিয়ানসহ আত্মীয় স্বজনকে দাওয়াত খাওয়ানো হবে। আবার অনেক গ্রামে এ সংক্রান্ত ধুমধাম পরেই গেছে জেলার বিভিন্ন গ্রামে।

আর সে কারণেই নীলফামারী সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে রাস্তার মোড়ে মোড়ে, হাট-বাজারে গড়ে ওঠেছে ভ্রাম্যমান পিঠার দোকান। ক্রেতাদের চাহিদার কারণেই মৌসুমী ব্যবসায়ীরা ভাপাপিঠার পাশাপাশি চিতাই পিঠা, তেল পিঠার দোকান নিয়ে বসছেন নির্দিষ্ট স্থানগুলোতে। শীতের সকাল আর সন্ধ্যায় হাওয়ায় ভাসছে এসব পিঠার ঘ্রাণ।

শীতের এই পিঠার ব্যবসা করে অনেকেই সংসারের অভাব দূর করেছেন। সেই সাথে শহরের অভিজাত গৃহবধূদের মুক্তি দিয়েছে পিঠা তৈরির কষ্ট থেকে। শীতকালে গ্রাম থেকে শহরের সকল পরিবারেই পিঠার চাহিদা থাকে। কিন্তু এ পিঠা তৈরিতে নানা ঝক্কি-ঝাঁমেলাও সামলাতে হয়। প্রয়োজন পড়ে নানা উপকরণ। সেই সাথে লাগে পিঠা তৈরির অভিজ্ঞতাও। সব মিলে অন্য সব খাবারের মত সহজে তৈরি করা যায় না শীতের পিঠা। তবে কোন ঝাঁমেলা ও অভিজ্ঞতা ছাড়াই শীতের পিঠা খাওয়ার একমাত্র মাধ্যম হল ভ্রাম্যমান পিঠার দোকান। এসকল দোকানে ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে রমরমা বেচাকেনা। এসব ভ্রাম্যমান পিঠার দোকানের অধিকাংশ মালিকই হল হতদরিদ্র।

নতুন গুড় আর নতুন চালের গুঁড়া দিয়ে তৈরি হয় এসব পিঠা। গরম পানির তাপে এ পিঠা তৈরি হয় বলে এর নাম হয়েছে ভাপা পিঠা। পিঠাকে মুখরোচক ও সুস্বাদু করতে গুঁড়, ধনেপাতার সঙ্গে কাঁচা মরিচ বাটা চাটনী আর সামান্য পরিমাণ লবণ মেশানো হয়। এর সঙ্গে আরো যোগ করা হয় খাঁটি সরিষার তেল বা সরিষা বাটা। এতেই স্বাদ বৃদ্ধি বলে জানিয়েছেন দোকানীরা। ভাপাপিঠা তৈরিতে সরঞ্জাম হিসেবে ব্যবহার করা হয় মাটির হাঁড়ি ও মাঝ বরাবর বড় ছিদ্র করা মাটির ঢাকনা। হাঁড়িতে ছিদ্র করা ঢাকনা লাগিয়ে আটা গুলিয়ে ঢাকনার চারপাশে ভালোভাবে মুঁড়িয়ে দিতে হয়, যাতে করে হাঁড়ির ভিতরে থাকা গরম পানির তাপ বের হতে না পারে। ছোট গোল বাটি জাতীয় পাত্রে চালের গুঁড়া খানিকটা দিয়ে তারপর খেঁজুর অথবা অাঁখের গুঁড় দিয়ে আবার কিছু চালের গুঁড়া দিয়ে বাটিটি পাতলা কাপড়ে পেঁচিয়ে ঢাকনার ছিদ্রের মাঝখানে বসিয়ে দেয়া হয়। ২/৩ মিনিট তাপে রেখে সিদ্ধ হয়ে তৈরি হয় মজাদার ভাপাপিঠা। প্রতিটি ভাপাপিঠা ৫-২০ টাকায় বিক্রি হয়। অনুরুপভাবে চিতাই পিঠা আটা গুলিয়ে তাওয়ায় বসিয়ে দিয়ে তৈরি করা হয় মজাদার চিতাই পিঠা। চাটনী ও গুঁড় দিয়ে তা পরিবেশন করেন দেকানীরা। প্রতিটি চিতাই পিঠা বিক্রি হয় ৫ টাকায়। তেল পিঠা তৈরিতে নতুন চালের গুঁড়া পানিতে গুলিয়ে তেলে ভেজে নিয়ে তৈরি করা হয় তেল পিঠা। যা বিক্রি হয় ৫-২০ টাকায়। অল্প সময়ে, অল্প পুঁজিতে যে কোন স্থানে সহজে বাজারজাত করা যায় বলে অনেক ক্ষুদ্র ও মৌসুমী ব্যবসায়ীরা এসব পিঠার দোকান করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

নীলফামারী পৌরসাভার নতুনবাজার নামক স্থানে এক পিঠা ব্যবসায়ীর সাথে একান্ত আলাপচারিতায় জানান, শীতের পিঠার ব্যবসাটা বেশ লাভজনক হওয়ায় তিনি পিঠা ব্যবাসা করছেন। এই ব্যবসায় তার ৪ জনের সংসারে ফিরেছে স্বচ্ছলতা। তিনি জানান, প্রতিদিন সকাল ও বিকেল এখানে দোকান দেন। এখানে তিনি ২০ কেজি চালের তৈরি আটার ভাপা পিঠা বিক্রি করেন। যা থেকে তার প্রতিদিন লাভ হয় ২/৩শ টাকা। তার মতো আরো অনেক মৌসুমী পিঠা ব্যবসায়ী রয়েছেন। পিঠা বিক্রি করে সবার সংসার ভালোভাবেই চলছে। শহরের সাবেরউদ্দিন ওরফে বাতাস নামে এক ব্যক্তি এখানে পিঠা খেতে খেতে বলেন, ব্যস্ততার কারণে বাড়িতে পিঠা খাওয়ার সময় হয়ে ওঠে না। তাই এখানেই সেই স্বাদ নেয়ার চেষ্টা করছি। এই পিঠা খেয়ে আমি অন্য রকমের মজা পেয়েছি। এ পিঠা বাঙ্গালীর বারো মাসের তেরো পর্বনের একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রকৃতিতে যতদিন শীত থাকবে ততদিন দেখা মিলবে ভাপাপিঠা, চিতাইপিঠা আর তেলপিঠার। বিডিপত্র/আমিরুল

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *