Connect with us

দেশজুড়ে

পঞ্চগড় সীমান্তে বিএসএফের নির্যাতনে ভিটে-মাটি ছাড়া দুই শতাধিক পরিবার

Published

on

Panchagarh Borderডিজার হোসেন বাদশা, পঞ্চগড়: পঞ্চগড় জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের সীমান্ত সংলগ্ন একটি গ্রামের প্রায় দু’শতাধিক পরিবার বিএসএফের নির্যাতনে পূর্ব-পুরুষদের ভিটে-বাড়ি ছেড়ে অন্যত্রে নতুন গ্রাম গড়ে তুলেছেন। ফলে ধীরে ধীরে ফাঁকা হয়ে যায় সমস্ত গ্রাম। একটু স্বস্তিতে বাস করার জন্য বাবা-মায়ের ভিটে ছেড়ে সকলেই অন্যত্রে চলে যায়।
গ্রামবাসী জানান, গ্রামের আকাশে বাতাসে বাবা- মায়ের ঘ্রাণ, এই মাটি ছুঁয়ে আছে বাবা-মায়ের পদচিহ্ন ছোট বেলার অনেক স্মৃতি। কী করে এসব ছেড়ে এসেছি! এসব ভাবতেই বুকের ভেতর হাহাকার করে ওঠে।
নির্যাতিত এসব পরিবার ভিটে বাড়ি ছেড়ে নতুন গ্রাম গড়ে তোলেন। যে গ্রামে গত ২০ বছরেও এখনো নির্মাণ হয়নি গ্রাম সংযোগ সড়ক। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আধুনিকতার ছোঁয়া থেকে পিছিয়ে এখানকার মানুষ। দু:খ দুরদর্শা যেন কিছুতেও পিছু ছাড়ছে না তাদের। তাই ২০ বছর ধরে এভাবেই থাকছেন গ্রামের মানুষ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শুধু ভিটে-মাটি শূন্য গ্রামের অস্তিত্ব ঝিঁঝি পোকার ও পাখির কিচিরমিচির ডাক ছাড়া অন্য কিছুর সাড়া মিলছে না। যেখানে মানুষের প্রাণচঞ্চল আর কোলাহলে পুরো গ্রাম ছিল মুখরিত এখন সেখানে সুধুই স্মৃতি।
পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়নের উত্তর সীমান্তের করতোয়া নদী ঘেষে জন শূন্য শান্তিনগর ও কির্তন পাড়া গ্রাম। এ গ্রামে গত ২০ বছর আগে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনি বিএসএফের নির্যাতনে ২ শতাধিক পরিবার ভিটে বাড়ি ছেড়ে ১ কি: মি: দুরে একই নামে নতুন গ্রাম গড়ে তোলেন। গত ২০ বছরেও এখনো নির্মাণ হয়নি গ্রাম সংযোগ সড়ক।
এই গ্রামে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্তা না থাকায় সবচেয়ে বেশী কষ্ট ও দুর্ভোগ পোহাচ্ছে গ্রামের শিশুসহ সকল শিক্ষার্থী । বিদুৎ নেই সড়ক নেই তাই কুপি জ্বালিয়ে আর পায়ে হেটে শিক্ষা অর্জনের যেন অনেক সময় হারিয়ে যাচ্ছে তাদের।
শান্তি নগড় ও কির্তন পাড়া এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, গত ২০ বছর আগে ভারতীয় বিএসএফ প্রায়ই সীমানা অতিক্রম করে আমাদের গ্রামে এসে আমাদের উপর নানান রকম নির্যাতন করত। বিএসএফ এই গ্রামে ঢুকে মহিলাদের মারধর ও নির্যাতন করে। এ কারণে গ্রামের মানুষকে সব সময় আতঙ্কে থাকতে হয়। এখন নতুন করে আমাদের এই সীমান্তের ২০০ গজ দূরে গড়ে তুলেছে ভারতীয় বিএসএফ হেড কোয়ার্টার। কিন্তু এই গ্রামে কোন রাস্তা নেই আমাদের এখনো সব সময় আতঙ্কে থাকতে হয়।
সীমান্ত সংলগ্ন এ গ্রাম হতে সড়ক যোগাযোগ প্রায় ২ কি: মি: দুরে আর জাতীয় মহা সড়ক ৮ কি: মি: দুরে সাস্থ সেবা ও বাজার কেনার জন্য যেতে হয় ৮ কি: মি: দুরে । আর শিক্ষার জন্য গ্রামের শিশু সহ শিক্ষার্থীদের পায়ে হেটে যেতে হয় ৫ থেকে ১০ কি: মি: দুরে। এ গ্রামের অসুস্থ্য রোগী ও বিয়ে শাদীতেও বড়-কনে কে পায়ে হেঁটে যেতে হয় ২ কি: মি: । বর্ষার সময় গ্রামের মানুষের দু:খ যেন আরো বেড়ে যায় তিন গুন।
গ্রাম বাসী সকলেই বাড়ির সামনে পিছনে দুএক হাত করে জায়গা ছেড়ে গ্রামের কাছে কোন মতে চলাফেরা করছেন। কিন্তু এই গ্রামে ভ্যান- রিক্সা সহ কোন যানবাহনের যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই।
গ্রামবাসী সেরাজুল উসলাম বলেন, বিএসএফের নির্যাতন সহ্য করতে না পাড়ায় সকলেই ধার দেনা করে কিংবা গরু-ছাগল, আসবাবপত্র বিক্রি করে অন্যত্র জমি কিনে বাড়ি নির্মাণ করেছি। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কাউকে কোনো সাহায্য করা হয় নি।
এলাকাবাসী সরকার তথা প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করে বলেন, শত বছরের পুরনো শান্তি নগড় ও কির্তন পাড়া গ্রাম ছেড়ে এসেছি। গ্রামের সকলেই নিম্ন আয়ের দিন মজুর। নতুন বাড়ি-ঘর নির্মাণে হিমশিম খেয়েছি এখনো অনেকইে দেনা শোদ করতেই পারিনি। তাই সরকার যদি আমাদের গ্রাম সংযোগ সড়ক নির্মাণ করেদেয় তাহলে গ্রামের মানুষ অনেক উপকৃত হবে।
ভজনপুর ইউনিয়ন পরিষদের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান মো: মকসেদ আলী জানান, গত ২০ বছর আগে ভারতীয় বিএসএফ প্রায়ই সীমানা অতিক্রম করে গ্রামে এসে মহিলাদের মারধর ও নির্যাতন করে। এ কারণে, গ্রামের মানুষ আতঙ্কে বিএসএফের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে জন্মস্থান ছেড়ে নতুন গ্রাম গড়ে তোলে­ও গত ২০ বছরেও এখনো নির্মাণ হয়নি গ্রাম সংযোগ সড়ক।
এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মো. বেলায়েত হোসেন জানান, এ বিষয়টি আমি জানিনা। যদি এমনটি হয়ে থকে তাহলে ইউনিয়ন চেয়াম্যানের সাথে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *