দেশজুড়ে
পদ্মার করাল গ্রাস বদলে দিচ্ছে বাঘার মানচিত্র
সরেজমিন বৃহসপতিবার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রায় ৬/৭ কিঃ মিটার ভাঙনে ইতিমধ্যে কয়েক হাজার বিঘার- বরই,আম,পেয়ারা,লিচু বাগানসহ ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। অতঙ্কে রয়েছে কিশোরপুর ঋষিপাড়ার হরেন, সুরেশ, সুকুমার ভবেশ, শংকর মদনদাস পাকুড়িয়া ইউনিয়নের গোকুলপুর খেওয়াঘাট এলাকার আনিসুর, কামরুল, আনারুল, এনামুলসহ ১৩টি পরিবার। এ গ্রামের পুষ্টারানি জানান, বসতভিটার দেড়কাঠা জমি চলে গেলে নিজস্ব জমি বলতে আর কিছু থাকবেনা। নিরাঞ্জন জানান,বাড়ি ভিটার ২ কাঠা জমিই শেষ সম্বল। তার মতো ২কাঠা, দেড়কাঠা করে জমি কিনে একসঙ্গে বসবাস করছেন তারা। পদ্মা যেভাবে ভাঙছে, তাতে বসতভিটার শেষ সম্বলটুকু হয়তো আর রক্ষা হবেনা। পদ্মার পাড়ে তাদের বসতি যেখানে,তার থেকে ৪৫-৫৫ গজ দুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ। ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড গত বছর যে বাঁশের বেড়া দিয়েছে তা অতিক্রম করে এবার ভাঙন দেখা দিয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, কিশোরপুর গ্রামের শফি মোল্লা ৭ বিঘা, হাকিম মোল্লার ৯ বিঘা, মছেররে ২ বিঘা, নুরুল ইসলামের ৭০ বিঘা, আতারপাড়া ও বারশতদিয়াড় গ্রামের জানু মহাজনের ৩৫ বিঘা ও আব্দুল কুদ্দুসের ২৫ বিঘা,আলিফের ৩বিঘা,সোবহান মোল্লার ৪বিঘা মহদীপুরের হাশেমের ৩বিঘা ও হরিরামপুর গ্রামের জলিল,কালু মহাজন,মনি মহাজন,গাজি মহাজন, মজি মহাজনসহ এই গ্রামের আরো কয়েকজনের প্রায় তিনশত বিঘা জমি-গাছপালা নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। মহদিপুর এলাকার আলিফ জানান,গত ৮ বছরে তার দাদার প্রায় ২’শ বিঘা,আতার পাড়ার সোবহান মোল্লার ৭৫ বিঘা একই গ্রামের সাধু ডাক্তারের ১০০’শ বিঘা জমিসহ গাছপালা বিলিন হয়েছে পদ্মার ভাঙনে। এলাকার রাজ্জাক,কাজল,লিটন,শাকিবুল,আফাজ,সাইদুর ও আব্দুর রহিমসহ অনেক্ েজানান,৩/৪দিন আগে পানি বাড়ার সাথে অল্প অল্প ভাঙন শুরু হয়। পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়। এবার ভাঙনে জানু মহাজন ও আব্দুল কুদ্দুসের মতো অনেকের আবাদি জমিসহ গাছপালা এবারেও গ্রাস করেছে রাক্ষুষি পদ্মা। প্রায় ২০০’শ একর জমি ভাঙনের কবলে পড়েছে। ভাঙনে তাদের মতো প্রায় সাড়ে ৫’শত বিঘা জমিসহ গাছপালা হারিয়েছে,পাকুড়িয়া ইউনিয়নের লোকজনও । এভাবে বদলে যাচ্ছে বাঘার মানচিত্র।
নদী থেকে বালু উত্তলোন নদী ভাঙনের প্রধান কারন বলে জানান, কিশোপুর এলাকার রফিক মন্ডল । কলিগ্রাম এলাকার কুদ্দুস জানান,গতবার যে জমির আমবাগান থেকে ১ লক্ষ টাকার আম বিক্রি হয়ে ছিল সে জমিটি এখন নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে।
স্থানিয় সুত্রে ও সরেজমিন অনুসন্ধানে প্রকাশ ২০০৬ সালে গড়গড়ী উইনিয়নের লক্ষীনগর বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চোমাদিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় অন্যত্রে সরিয়ে নেওয়া হয়। ২০০৯ সালের বন্যায় ৩টি মসজিদ নদীতে বিলীন হয়ে যায় এবং স্থানীয় বিডিআর ক্যামকে স্থানান্তর করাসহ পাকুড়িয়া ইউনিয়নের চরচৌমাদিয়া গ্রামটি সম্পন্ন নদীতে বিলীন হয়ে যায় । ২০১৪ সালে চকরাজাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থানান্তর করা হয়। আরো জনা যায় বিগত ৮বছরে পদ্মার ভাঙনে এইসব এলাকার প্রায় সাড় ৫’শ বাড়িসহ ভাঙনে গৃহহারা হয়েছে তিন শতাধিক পরিবার। এবার ভরা মৌসুমে পদ্মায় পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আবারো ভাঙন দেখা দিয়েছে। উল্লেখ্য,২০০০ সালে মীরগঞ্জ,আলাইপুর হয়ে গোকুলপুর ,কিশোরপুর পর্যন্ত প্রায় ৬/৭ কিঃ মিটার এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়। তার পর থেকেই প্রতিবছর ভাঙতে থাকে পদ্মা।
গড়গড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও পাকুড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফকরুল হাসান বাবলু বলেন,গত নির্বাচনের সময় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব শাহরিয়ার আলম এমপি (বাঘা-চারঘাট) ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছিলেন। এরপর মৌসুম কেটে গেলেও সেই আশার বানি আজোও বাস্তবায়ন হয়নি। ভাঙন রোধে নেওয়া হয়নি কার্যকর ব্যবস্থা। লোক দেখানো বাঁশের বেড়া দিয়ে শেষ করা হয় প্রকল্প। ত্রান সহায়তাও পায়নি ক্ষতিগ্রস্থরা।
উপজেলা চেয়ারম্যান জিন্নাত আলী সরেজমিনে ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে জরুরিভাবে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারদের ত্রান সহায়তা ও ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন বলে জানান। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমিনুল ইসলাম জানান,পানি উন্নয়ন বোর্ডের সড়ক ও নদীর তীর রক্ষায় স্থায়ী বাঁধ নির্মানের জন্য প্রকল্প পাস হয়ে আসলে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশেরপত্র/ এডি/ আর