খেলাধুলা
পাহড়সম ব্যবধানে ক্যারিবীয়দের জয়
ক্যারিবীয় ঝড়েই উড়ে গেল পাকিস্তান। ওয়েলিংটনে গ্র“প ‘বি’ এর দ্বিতীয় ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি পাকিস্তান। ১৫০ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম জয় তুলে নিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পাকিস্তানের অধিনায়ক মিসবাহ উল হক টসে জিতে ফিল্ডিং বেছে নেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ আগে ব্যাট করে লোয়ার মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ঝড়ের কল্যাণে স্কোর বোর্ডে সাত উইকেটে ৩১০ রান জমা করে। ৩১১ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে ক্যারিবীয় পেস ঝড়ে ৩৯ ওভারে ১৬০ রানে অল আউট হয়ে যায় পাকিস্তান। জেরম টেইলর ১৫ রানে এবং আন্দ্রে রাসেল ৩৩ রানে তিন উইকেট করে নিয়ে পাকিস্তানি ব্যাটিং অর্ডারে ধস নামান। জেরম টেইলরের গতিতে পাকিস্তান এক রানেই চার উইকেট হারায়।
টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তানের বোলারারদের শুরুটাও একদম খারাপ ছিল না। পঞ্চম ওভারের শেষ বলে মোহাম্মদ ইরফানের বলে স্কোয়ার লেগে ওয়াহাব রিয়াজের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান ক্রিস গেইল। তখন ওয়েস্টের স্কোর দাঁড়ায় এক উইকেটে ১৭ রান। এরপর দলীয় ২৮ রানের মাথায় সোহাইল খানের বলে ডোয়াইন স্মিথ স্লিপে হারিস সোহালের হাতে ক্যাচ দিলে দ্বিতীয় উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তৃতীয় উইকেটে ৭৫ রান যোগ করে ঘুরে দাঁড়ায় ড্যারেন ব্র্যাভো এবং মারলন স্যামুয়েলস জুটি। দুই ব্যাটসম্যান বেশ সাবলীলভাবেই ব্যাট করে রানের চাকা সচল রাখেন। তবে দলীয় ১০৩ রানের মাথায় বাহাতি স্পিনার হারিস সোহেলকে তুলে মারতে গিয়ে অতিরিক্ত ফিল্ডার ইয়াসির শাহর হাতে স্যামুয়েলস ধরা পড়লে ওয়েস্টে ইন্ডিজ তৃতীয় উইকেট হারায়। স্যামুয়েলস ৫২ বলে খেলেন ৩৯ রানের ইনিংস। ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যান ড্যারেন ব্রাভোকে দুর্ভাগা বলতেই হয়। চতুর্থ উইকেটে দিনেশ রামদিনকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন ক্যারিবীয়দের ইনিংস। দিনেশ রামদিন হারিস সোহেলের করা ৩১তম ওভারেই চারটি চার মারলে অনেকটা চাপ সরে আসে ব্র্যাভোর উপর থেকেই। ৩২তম ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটিং পাওয়ার প্লে নিয়ে নেয়। সেই ওভারের দ্বিতীয় বলে সিঙ্গেল নিতে গিয়ে হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে পড়েন ব্র্যাভো। তখন তার রান ছিল ৪৯। পরে ফিফটি বঞ্চিত থেকেই ইনজুরি নিয়েই প্যাভিলিয়নে ফিরে যান এই ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যান। ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে তেমন সুবিধা করতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৩২-৩৬ ওভার পর্যন্ত মাত্র ১৬ রান যোগ করেন দিনেশ রামদিন এবং লেন্ডন সিমন্স। এরপর অবশ্য রান তোলার গতি বাড়াতে মনোযোগী হন এই দুই ব্যাটসম্যান। দিনেশ রামদিন ৪০তম ওভারে হারিস সোহেলের বলে আউট হওয়ার আগে ৪৩ বলে ৫১ রান করেন। এ সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান দাঁড়ায় চার উইকেটে ১৯৪। ইনিংসের শেষ দশ ওভারে ক্যারিবীয় লোয়ার অর্ডার ব্যাটম্যানেরা পাকিস্তানি বোলারদের নিয়ে রীতিমত ছেলেখেলায় মেতে উঠে। এ সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর বোর্ডে জমা হয় ১১৮ রান। বিশেষ করে আন্দ্রে রাসেলের ১৩ বলে ৪২ রানের ইনিংসটিই ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ৩০০ পেরোতে সহায়তা করে। তবে সিমন্সের ৫০ এবং ড্যারেন সামি ৩০ রানের ইনিংসটিও খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে ৩১১ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে ক্যারিবীয় পেসার জেরম টেইলরের গতিতেই বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে পাকিস্তানের টপ অর্ডার। প্রথম ওভারেই টেইলর নাসির জামশেদ এবং ইউনিস খানের উইকেট তুলে নিয়ে ক্যারিবীয়দের জোড়া ব্রেক থ্রু এনে দেন। তৃতীয় ওভারের শেষ বলে হারিস সোহেল এবং চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে আহমেদ শেহজাদ টেইলরের শিকারে পরিণত হলে পাকিস্তানের স্কোর দাঁড়ায় চার উইকেটে এক রান। এরপর দলীয় ২৫ রানের মাথায় আন্দ্রে রাসেল পাকিস্তানের অধিনায়ক মিসবাহর উইকেট তুলে নিলে বড় ধাক্কা খায় পাকিস্তান। ২৫ রানে পাঁচ উইকেট হারানোর পর পাকিস্তানের জয়ের আশা সেখানেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তবুও লড়াইটা চালিয়েছেন শোয়েব মাকসুদ এবং উমর আকমল। ষষ্ঠ উইকেটে এ দু’জনেই ৯০ বলে যোগ করেন ৮০ রান। কিন্তু দলীয় ১০৫ রানের মাথায় ৫০ রানের ইনিংস খেলে সামির বলে সুলায়মান বেনের হাতে ক্যাচ দিয়ে শোয়েব মাকসুদ ফিরে গেলে পাকিস্তানের ষষ্ঠ উইকেটের পতন ঘটে। তবে সপ্তম উইকেটে উমর আকমল এবং শহীদ আফ্রিদি আস্কিং রান রেটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান তোলার জন্যে ৩১তম ওভারেই ব্যাটিং পাওয়ার প্লে নেয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে কৌশলও কাজে আসেনি। দলীয় ১৩৯ রানের মাথায় ৫৯ রান করে উমর আকমল এবং দলীয় ১৫৭ রানের মাথায় আফ্রিদি আন্দ্রে রাসেলের বলে আউট হয়ে গেলে পাকিস্তানের বড় পরাজয় নিশ্চিত হয়ে যায়। ব্যক্তিগত ৪২ রানে অপরাজিত থেকে এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৩ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন আন্দ্রে রাসেল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৫০ ওভারে ৩১০/৬ (স্মিথ ২৩, গেইল ৪, ব্র্যাভো ৪৯*, স্যামুয়েলস ৩৮, রামদিন ৫১, সিমন্স ৫০, স্যামি ৩০, রাসেল ৪২*; হারিস ২/৬২, ইরফান ১/৪৪, ওয়াহাব ১/৬৭, সোহেল ১/৭৩)।
পাকিস্তান: ৩৯ ওভারে ১৬০ (জামশেদ ০, শেহজাদ ১, ইউনুস ০, হারিস ০, মিসবাহ ৭, মাকসুদ ৫০, আকমল ৫৯, আফ্রিদি ২৮, ওয়াহাব ৩, সোহেল ১, ইরফান ২*; ৩/১৫, রাসেল ৩/৩৩, বেন ২/৩৯, হোল্ডার ১/২৩, স্যামি ১/৪৭)।