জাতীয়
প্রথমেই সন্ত্রাস বন্ধ করুন – সংবাদ সম্মেলনে ‘উদ্বিগ্ন নাগরিকরা’
অবরোধের মধ্যে চলমান সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অবিলম্বে বন্ধ করে আলোচনার প্রক্রিয়া শুরুর তাগিদ দিয়েছেন দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন একদল জ্যেষ্ঠ নাগরিক।
গত কাল জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন উদ্বিগ্ন নাগরিকদের পক্ষে একটি কমিটি এ আহ্বান জানায়। সাবেক সিইসি শামসুল হুদা বলেন, “আগে সন্ত্রাস বন্ধ করতে হবে। পরে পরিবেশ সৃষ্টি করে আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু করেন- এটাই আমাদের কথা।” মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে গত একমাসেরও বেশি সময় ধরে অবরোধ চালিয়ে আসা বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দল সংলাপের আহ্বান জানিয়ে আসছে। তবে বিরোধী জোটের আন্দোলনে নাশকতার দিকে ইঙ্গিত করে তাদের সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা বরাবরের মতই নাকচ করে আসছে সরকার।
সংকট উত্তরণে গত শনিবার ‘জাতীয় সংলাপের’ উদ্যোগ প্রক্রিয়া নিয়ে এক গোলটেবিল আলোচনা হয়, যার নেতৃত্ব দেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাও ছিলেন ওই আলোচনায়। রাজনীতিবিদ হয়েও কামাল ও মান্না নাগরিক সমাজের উদ্যোগের নেতৃত্বে থাকায় তা নিয়ে সমালোচনা আছে প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকে। তবে শামসুল হুদার নেতৃত্বে যে কমিটি করা হয়েছে তাতে নেই জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কামাল হোসেন ও সাবেক ছাত্রনেতা মান্না। সংলাপের উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে গত সোমবার রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে চিঠি দেওয়ার মাধ্যমে আলোচনায় আসে জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের এ অংশটি। তারই ধারবাহিকতায় গত কাল সকালে প্রেসক্লাবে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন তারা।
বর্তমানে রাজনীতির নামে যেভাবে মানুষ পুড়িয়ে মারা হচ্ছে তা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নয় বলে মনে করেন এ টি এম শামসুল হুদা। এ ‘অমানবিক পরিস্থিতি’ মেনে নেওয়া যায় না- মন্তব্য করে সাবেক এ সচিব বলেন, “এ অমানবিক কার্যক্রমকে কোনোভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বলা যাবে না। অবিলম্বে তা বন্ধ করতে হবে। আমরা সবাই পেশাজীবী। কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নেই এখানে। নৈতিক অবস্থান থেকে আমরা দুটো কথা বলছি- সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে, আলোচনার উদ্যোগ নিতে হবে।” সংলাপের জন্য রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও খালেদা জিয়াকে পাঠানো চিঠির অনুলিপি পড়ে শোনান শামসুল হুদা।
চিঠির বিষয়বস্তু তুলে ধরে তিনি বলেন, “সাংবিধানিকভাবে সেই অর্থে কোনো ক্ষমতা না থাকলেও রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে চলমান সঙ্কট নিরসনে রাষ্ট্রপতির একটি নৈতিক ভূমিকা রয়েছে। “আমরা মনে করি রাষ্ট্রপতি তা প্রয়োগ করে চলমান সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ নেবেন। বিবদমান দুই দলসহ সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলো, পেশাজীবীদের নিয়ে আলোচনায় বসবেন।” শামসুল হুদা বলেন, “চলমান পরিস্থিতিতে পেট্রল বোমায় আগুনে পোড়ানোসহ যেসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলছে তা হৃদয় বিদারক, অমানবিক। অর্থনীতি ভেঙে পেড়েছে। জাতি নিঃশেষিত হতে পারে না এভাবে। “সন্ত্রাস বন্ধ করে এখন প্রথম কাজটা হচ্ছে-শান্তি ফিরিয়ে আনতে হবে। তারপর কী করে রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসন করা যায় সে উদ্যোগ নিতে হবে।” সংলাপের কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, “সন্ত্রাস বন্ধ ও সংলাপ- এ দুটো প্রক্রিয়া সমান্তরালভাবে এগোতে হবে। প্রথমে সন্ত্রাস বন্ধ করে জনগণকে শান্তি দিতে হবে। এরপরে সংলাপ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।”