Connect with us

দেশজুড়ে

প্রধানমন্ত্রীকে সনদপত্র ফিরিয়ে দিলেন প্রতিবন্ধী মাহাফুজার

Published

on

mahfuzaলালমনিরহাট প্রতিনিধি: সরকারী চাকুরিতে প্রতিবন্ধী কোটা পূরণ না হওয়ায় রাষ্ট্রের দেয়া সর্বোচ্চ (স্নাতকোত্তর) ডিগ্রির সনদ রাষ্ট্রের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে অভিনব প্রতিবাদ জানিয়েছেন মাহাফুজার রহমান নামে লালমনিরহাটের এক শারীরিক প্রতিবন্ধী। বুধবার (২৪ফেব্রুয়ারী) দুপুরে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর তার সকল সনদপত্র ফিরত দিয়েছেন।
মাহাফুজার রহমান লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নের রতিপুর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোঃ সৈয়দ আলীর ছেলে।
এ সময় ওই প্রতিবন্ধী মাহাফুজার রহমান লিখিত একটি আবেদনসহ তাঁর শিক্ষা জীবনের অর্জিত সকল মূল সনদ জমা দেন। জেলা প্রশাসকের অনুপসি’তিতে অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রেজাউল আলম সরকার সনদগুলো গ্রহন করেন।
জানা গেছে, জন্ম থেকেই ডান হাত সম্পূর্ণভাবে অক্ষম (অনুভূতিহীন)। শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হলেও স্কুল জীবন থেকেই লেখাপড়ায় দারুণ মেধাবী ছিলেন মাহাফুজার রহমান। উত্তারাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীতে সম্মান ও পরে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
বিগত ২০১২ সালে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে প্রতিবন্ধী কোটায় নিয়োগ পরীক্ষা দেন। তাঁর রোল নম্বর ছিল ১৩২০। লিখিত পরীক্ষায় জেলার ৫টি উপজেলার ৪৫ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হন। উত্তীর্ণদের মধ্যে একমাত্র প্রতিবন্ধী হিসেবে মাহাফুজার লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিলেও তিনি নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হন।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর লেখা আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, উক্ত নিয়োগে প্রতিবন্ধী ছাড়া অন্যান্য সকল কোটা পূরণ করে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৪৫ জনের মধ্যে ১৩ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়। সে সময়ে মাহফুজারের বয়স ছিল ৩৩ বছর এবং বর্তমানে তাঁর বয়স ৩৬-এ এসে দাড়িয়েছে।
ডান হাত অক্ষম হওয়ার কারনে বর্তমানে সরকারী চাকুরি তো বটেই এমনকি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানেও তাঁর পক্ষে চাকুরি পাওয়া সম্ভব নয়। জীবিকা নির্বাহে সম্বল বলতে তাঁর আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।
এর আগে তিনি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংকসহ সরকারী বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরির আবেদন করেও চাকুরি পাননি। শিক্ষাগত যোগ্যতা আর প্রতিবন্ধী সুরক্ষা আইনে কোটা পূরণের বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও নিয়োগ বঞ্চিত হওয়ায় তিনি এখন সমাজের বোঝা স্বরূপ।
তাঁর স্ত্রী নাছরিন নাহার লাকিও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী শিক্ষিত বেকার। তিনিও বিভিন্ন দপ্তরে চাকুরির আবেদন করলেও চাকুরী নামক সোনার হরিন তিনিও শিকার করতে পারেন নি।
তাঁদের দু বছর বয়সী লামীম নামের একটি ছেলে রয়েছে। এমন বাস্তবতায় তিনি নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রতিবাদ স্বরূপ রাষ্ট্রের দেয়া সকল শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ প্রধানমন্ত্রীর তথা ও রাষ্ট্রের কাছেই জমা দিলেন।
মাহফুজার রহমান জানান, প্রতিবন্ধী কোটা পূরণ সাংবিধানিকভাবে বাধ্যতামূলক হলেও তাঁর বেলায় সেই আইন মানা হয়নি। এই ঘটনার প্রতিবাদ স্বরূপ এবং দেশে যে প্রায় এক কোটি ২০ লক্ষ প্রতিবন্ধী রয়েছে তাঁরা যাতে ভবিষ্যতে এই বঞ্চনার শিকার না হন তারই দাবী স্বরূপ তিনি এই সনদগুলো জমা দিলেন।
লালমনিরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রেজাউল আলম সরকার বলেন, মাহাফুজার রহমানের দেয়া আবেদন ও সনদগুলো যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করা হবে।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *