Connect with us

ঠাকুরগাঁও

বিএসটিআই’র অনুমোদন ছাড়াই ঠাকুরগাঁওয়ে তৈরি হচ্ছে ভেজাল ও নিম্নমানের সেমাই

Published

on

Thakurgaon Vermicelli Pic-3ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: আসন্ন ঈদ উল ফিতরকে সামনে রেখে ঠাকুরগাঁওয়ে বিএসটিআই এর অনুমোদন ছাড়াই অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে শতাধিক ভেজাল ও নিম্নমানের সেমাই কারখানা। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরী এসব ভেজাল সেমাই ভোক্তাদের বিপদ ডেকে আনার আশংকা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
রোজার শুরু থেকে ঠাকুরগাঁওয়ে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে বেশ কিছু সেমাই তৈরির কারখানা। ঠাকুরগাঁও বিসিক শিল্প নগরী ও আশপাশের এলাকা জুড়ে গড়ে ওঠা এসব কারখানায় খাদ্যদ্রব্য তৈরীর জন্য বিএসটিআই-এর কোন অনুমোদন নেই। স্টিল, প্লাস্টিক, লোহাসহ বিভিন্ন কারাখানার ২/১টি রুম অস্থায়ী সেমাই তৈরীর কারখানা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী ওইসব মৌসুমী কারখানা গড়ে তুলে ভেজাল ও নিম্নমানের লাচ্ছাসহ নানা ধরনের খাবার প্রস্তুত ও বিপনন করে চলেছেন।
উৎপাদনে যাওয়া এসব অস্থায়ী কারখানায় গড়ে দৈনিক ২৫ থেকে ৮০ খাঁচি (প্রতি খাঁচিতে ১৮ কেজি) সেমাই উৎপাদন হচ্ছে। স্থায়ী কারখানাগুলোতে উৎপাদিত হচ্ছে গড়ে প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ খাঁচি। এসব কারখানায় উৎপাদিত লাচ্ছা ও সেমাই রাতের আধারে চলে যাচ্ছে ঠাকুরগাঁও জেলাসহ বিভিন্ন বাজারের খুচরা ও পাইকারি দোকানগুলোতে। সেখানে প্রতি খাঁচি লাচ্ছা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকায়। পরে তা সেখান থেকে বিভিন্ন এলাকার ছোট ছোট দোকানে চলে যাচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এসব কারখানাগুলোতে খুব গোপনে সেমাই তৈরি করা হচ্ছে। যারা সেমাই তৈরীর কাজ করে তাদের পোশাক আশাক ময়লাযুক্ত। কাজের সময় শ্রমিকদের হাতে গ্লোবস ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও কোন শ্রমিককে গ্লোবস ব্যবহার করতে দেখা যায় না। কাজ করতে করতে অনেকের ঘাম খামিরে প্রায় ঝড়ে পড়ে। এছাড়াও খোলা আকাশের নীচে সেমাই শুকানোর কারনে উড়ন্ত পাখির মলমূত্রও অনেক সময় সেমাইয়ে মিশে যাওয়ার সম্ভাবনা ব্যাপক। পামওয়েল বা ব্যবহৃত তেলে ভাজা হয় সেমাই। এতেই শেষ নয়, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে উৎপাদিত এসব লাচ্ছা ও সেমাই ভোক্তাদের কাছে আকষর্নীয় করে তুলতে মেশানো হচ্ছে মানবদেহের ক্ষতিকারক রং।
শহরের হাজীপাড়া এলাকার বাসিন্দা সামিউল ইসলাম জানান, ভেজাল সেমাই খেলে শরীরের অনেক ক্ষতি হয়। এদিকে সরকারপাড়া মহলল্লার বাসিন্দা মোমেনা আক্তার বলেন, বিএসটিআই অনুমোদন ছাড়া শহরে অনেক ভেজাল সেমাই কারখানা গড়ে উঠেছে এবং সেখানে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সেমাই তৈরি করা হয়। তাই সাধারণ মানুষের দাবি এসব অবৈধ কারখানা দ্রুত বন্ধ করা হোক।
ঠাকুরগাঁও থ্রি ষ্টার ফুড লিঃ এর ম্যানেজার তৌহিদুল ইসলাম বাবু জানান, শ্রমিকদের কাজের সময় ব্যবহার করার জন্য সকল প্রকার সামগ্রী দেওয়া আছে। কিন্তু একনাগাড়ে ৫/৭ ঘন্টা গ্লোবস পড়ে কাজ করলে অনেক সময় ডালডা ও তেল ভেতরে ঢুকে শ্রমিকদের চামড়ার ক্ষতি করে। তাই তারা মাঝে মাঝে গ্লোবস ছাড়া কাজ করে।
ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জন ডা. নজরুল ইসলাম জানান, রং ও অন্যান্য কেমিক্যাল মানুষের শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। খাদ্য দ্রব্যে মেশানো রং মানুষের পেটে গেলে তা গ্যাষ্ট্রিক, আলসার থেকে ক্যান্সারের কারন হতে পারে। এছাড়াও যাদের হার্টের সমস্যা রয়েছে তাদের হার্টের আরো বাড়তে পারে । যাদের কিডনীর সমস্যা রয়েছে তাদের কিডনী ডেমেজ হতে পারে এবং ব্রেনেরও ক্ষতির পাশাপাশি অকাল মৃত্যু ডেকে আনতে পারে।
এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মূকেশ চন্দ্র বিশ্বাস জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিয়ে এসব ভেজাল কারখানায় নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে এবং জরিমানা করা হচ্ছে।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *