Connect with us

ফরিদপুর

বোয়ালমারীতে মাদকের অভয়ারণ্য,ধ্বংসের মুখে যুবসমাজ

Published

on

ফরিদপুর থেকে হারুন-অর-রশিদ ঃ

মাদকের নেশায় ডুবে থাকছে বোয়ালমারীর উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্নবিত্ত শ্রেণীর হাজারো মানুষ। মাদকের নেশার তালিকায় রয়েছেন উঠতি বয়সী যুব সমাজ,স্কুল ও কলেজ ছাত্র, সরকারী কর্মকর্তা, শিক্ষক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ। বর্তমানে বোয়ালমারীতে হাত বাড়ালেই মিলছে বিভিন্ন ধরনের মাদক দ্রব্য। তবে ফেনসিডিল, ইয়াবা এবং গাঁজাসহ হিরোইনের চাহিদা বোয়ালমারীতে বেশী বলে এক অনুসন্ধানে জানা গেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের নাকের ডগায় এই মাদকদ্রব্য বিক্রি ও সেবন হলেও তারা দেখেও না দেখার ভান করে থাকেন। ক্ষমতাসীন দলের নাম ব্যবহার করে কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বোয়ালমারীতে মাদকের ব্যবসা করছেন এমন কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। এসব মাদক বিক্রির তালিকায় প্রভাবশালী পরিবারের সন্তানেরা জড়িত বলে জানা গেছে। প্রভাবশালীদের কারণেই প্রশাসন রয়েছে ‘নীরব’। দিনের পর দিন প্রকাশ্যে মাদক ব্যবসা চলে আসার কারণেই গোটা বোয়ালমারীজুড়ে এখন মাদকে সয়লাব হয়ে আছে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে মাদকসেবীর সংখ্যা। এবং এসব মাদকের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে স্কুল, কলেজের তরুণ ছাত্ররা। যার ফলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় অভিভাবকেরা।

মাদক বিক্রি ঠেকাতে কয়েকজন উদ্যোগ নিলেও প্রভাবশালীদের কারণে তা ভেস্তে গেছে। বোয়ালমারীর ‘ময়না’ ইউনিয়নকে মাদকের আখড়া বলে অভিহিত করেছেন অনেকেই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি বলেছেন, বোয়ালমারীতে কমপক্ষে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি মাদকের ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছে। তাছাড়া মাদকের ব্যবসায় লগ্নি আছে বেশ কয়েকজনের। মূলত প্রভাবশালী কয়েক ব্যক্তির টাকায় কেনা হয় মাদক। আর ডেলিভারী ম্যানের সাহায্যে মাদক বিক্রি হয় বিভিন্ন স্পটে। প্রতিদিন গড়ে কয়েক লাখ টাকার মাদক বিক্রি হয় বোয়ালমারীতে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বোয়ালমারীতে মাদক দ্রব্য আসে যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা থেকে। যশোর-ঝিনাইদহ এবং মাগুরা থেকে নড়াইল হয়ে মধুমতি নদী পার হয়ে বোয়ালমারীতে আসছে মাদক। যশোর অঞ্চল থেকে ফেনসিডিল বেশী আসলেও ফরিদপুর থেকে যায় ‘ইয়াবা’ আর ‘গাঁজা’। বোয়ালমারীতে ফেনসিডিলের চেয়ে এখন ইয়াবার বিক্রি বেশী বলে এক অনুসন্ধানের মাধ্যমে জানা গেছে।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, যারা কিছুটা বিত্তশালী তারাই ফেনসিডিলের দিকেই ঝুঁকে রয়েছে। আর ‘ইয়াবা’ ‘গাঁজা’র দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় এ দুটি মাদকের দিকে নজর ও আকৃষ্ট সবার। বোয়ালমারীর একাধিক স্পটে মাদক দ্রব্য বিক্রি হয় বলে জানা গেছে। উপজেলার ময়না ইউনিয়নের হাটখোলার চরসহ আশেপাঁশের কয়েকটি গ্রাম, এছাড়াও পৌর এলাকার রায়পুর শশ্মান ঘাট, গুনবহা, নৌলপাড়া, জর্জ একাডেমীর পাঁশে, ছোলনা, ফায়ার সার্ভিস অফিসের সামনে, হাসপাতালের আশপাঁশে, রেলষ্টেশন সংলগ্ন এলাকা, আধারকোঠা, ওয়াপদা মোড়, মাইক্রোস্ট্যান্ড, বাসস্ট্যান্ডসহ একাধিক স্পটে প্রকাশ্যেই মাদকের ব্যবসা হচ্ছে। তাছাড়া অনেকেই পুলিশী ঝাঁমেলা এড়াতে ভ্রাম্যমাণ থেকে মাদক বিক্রি করে আসছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, ময়না ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাসির মোহাম্মদ সেলিম ও তার ভাতিজা দাহির মোহাম্মদ আরাফত,চাচাতো ভাই রিফাত মিয়ার সহযোগীতায় ছোলনার ৩ জন, কলারন গ্রামের ১জন, নৌলপাড়ার ৩ জন মাদক দ্রব্য বিক্রির নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন বলে তারা অভিযোগ করেন। তারা সাংবাদিকদের আরো বলেন, “ভাই আমরা যে আপনাদের কাছে তাদের নাম বলছি তা কাউরে বইলেন না,তাহলে ওরা আমাদের মেরে ফেলবে ভাই ।” অন্যদিকে পৌর এলাকারও বেশ কিছু ব্যক্তি মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছে বলে জানা যায়। পুলিশকে ম্যানেজ করে মাদক ব্যবসা চলে বোয়ালমারীতে এমন অভিযোগও রয়েছে। ফলে বোয়ালমারীতে মাদকে ছড়াছড়ি হলেও মাদক ব্যবসায়ীরা থাকেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। বোয়ালমারীতে মাদকের ভয়াবহতা দিনকে দিন বাড়তে থাকায় উদ্বিগ্ন রয়েছেন অভিভাবকেরা। মাদক ব্যবসায়ীদের ধরে আইনের আওতায় আনার দাবী সচেতন বোয়ালমারী বাসীর।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *