কুড়িগ্রাম
ভূরুঙ্গামারীতে সেতু নির্মাণে অনিয়ম এলাকাবাসীর বিক্ষোভ; কাজ ফেলে শ্রমিক-প্রকৌশলীর পলায়ন
জানাগেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রংপুর ডিভিশন রুরাল ইনফেকশন ইমপ্রæভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় ভূরুঙ্গামারী উপজেলার পাথরডুবি ইউনিয়নের থানাঘাট বাজার সংলগ্ন ফুলকুমর নদের উপর দুই কোটি ১১ লাখ ১৪ হাজার ৬০ টাকা ব্যয়ে ৪৫ মিটার দৈর্ঘ্যরে একটি সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এর মধ্যে এক কোটি ৬৩ লাখ চার হাজার টাকা চুক্তির টেন্ডারে কুড়িগ্রামের উজ্জল কুমার দে নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতুটির নির্মাণ কাজ করছে। বর্তমানে পাইলিং এর কাজ চলছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন উপজেলা জাতীয় পার্টির নেতা ওয়াহেদুজ্জামান। বৃহস্পতিবার ভোরের সূর্য্য ওঠার আগেই ৮১মিটার গর্তে ৩টি রডের খাঁচা ব্যবহার করার কথা থাকলেও সেখানে ৩০মিটার উচ্চতার একটি রডের খাচাঁ দেয়া হচ্ছে দেখতে পেয়ে পাইলিং এর কাজ নি¤œমানের অভিযোগ তোলেন স্থানীয়রা। খাচাঁতে যতসামান্য সিমেন্টের সাথে বালু আর পাথর দিয়ে হচ্ছিল পাইলিংয়ের কাজ। সঠিক পরিমান সিমেন্ট দিয়ে ঢালাই করা হয় মাত্র ছয় ফুট। ফলে বিক্ষুদ্ধ স্থানীয়রা কাজে বাধা দেয়। এতে ভয় পেয়ে কাজ ফেলে পালিয়ে যায় শ্রমিক ও এলজিইডির উপ-প্রকৌশলী মোবাইদুল ইসলাম। উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুন্নবী চৌধুরী খোকন সরেজমিনে গেলে স্থানীয়রা তাকে ঘিরে এসব অভিযোগ তোলেন। উপজেলা চেয়ারম্যান বিষয়টি এলজিইডির জেলা নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানালে নির্বাহী প্রকৌশলী সরেজমিনে পরিদর্শন করেন।
পাইলিং কাজে নিয়োজিত শ্রমিক রহিমসাদু সেতুর পাইলিংয়ে নি¤œমানের কাজের কথা স্বীকার করে বলেন, ঠিকাদার আমাদেরকে যে ভাবে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছে আমরা সেভাবে কাজ করেছি। এর আগে আরো ১৭টি পাইলিংয়ের কাজ করা হয়েছে।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান আলী ও আয়নাল হক জানান, ফুলকুমরের উপর একটি সেতুর কাজ চলছে। এখানে সেতুর কাজের জন্য কোন সাইনবোর্ড নেই। ঠিকাদারের প্রতিনিধি দলীয় প্রভাবে এলজিইডি’র অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে সেতুতে নি¤œমানের কাজ করছেন। তারা রাতে কাজ করেন। বৃহস্পতিবার ভোরে একটি পাইলিংয়ের কাজ দশ মিনিটে শেষ করেন। তারা আরো বলেন, প্রায় ৩০ বছর পূর্বে এখানে একটি সেতু নির্মিত হয়েছিল। সেতুর কাজ নি¤œমানের হওয়ায় নির্মানের মাত্র পাঁচ বছরের মাথায় সেটি ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়ে।
স্থানীয় আজিজুল হক, ইমদাদুল, শাহিন আলম, শরিফ আরো অভিযোগ করে বলেন, ঠিকাদার আর এলজিইডি’র কর্মকর্তারা যে সেতু তৈরি করছে তা ভবিষ্যতে আমাদের মরণ ফাঁদে পরিণত হবে। ঠিকাদার-প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে বিচারের আওতায় এনে শাস্তির দাবী জানান স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে ওয়াহেদুজ্জামান বলেন, সেতুর কাজ ঠিকই চলছিল। কিছু লোক সমস্যাটা তৈরী করেছে। এ ঘটনার পর তথ্য জানতে উপজেলা এলজিইডি অফিসে গেলে তথ্য দিতে গড়িমসি করেন ভূরুঙ্গামারী এলজিইডির প্রকৌশলী এন্তাজুর রহমান। সেতুর কাজে দায়িত্বরত উপজেলা সহকারি প্রকৌশলী মোবাইদুল ইসলাম গা-ঢাকা দিয়েছেন। তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে ভুরুঙ্গামারী এলজিইডির প্রকৌশলী এন্তাজুর রহমান বলেন, ইঞ্জিনিয়ার ছাড়া ঠিকাদার চুরি করতে গেছে। তাহলে তো এমন হবেই। কাজে একটু কমবেশি হয়। তাই বলে এত চুরি করলে তো সমস্যা। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এসেছেন তিনি পদক্ষেপ নেবেন।
এলজিইডির কুড়িগ্রাম জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী রুহুল আমিন বলেন, সরেজমিন তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। এতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অফিসিয়ালি ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তবে সেতুর কাজ চলবে।
উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুন্নবী চৌধুরী খোকন বলেন, উন্নয়ন কাজে ঠিকাদারদের এরকম করা উচিত নয়। কুড়িগ্রাম জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মহোদয় এসেছেন তিনি কথা দিয়েছেন অনিয়মে সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। আমরা চাই সেতুর কাজ যেন বন্ধ না হয়।