Connect with us

দেশজুড়ে

রংপুরে ঈদের কেনাকাটায় ভারতীয় পোশাকের বাহার

Published

on

Ronjit-photo-5......07-07-15

আমিরুল ইসলাম,রংপুর # আর ১০  দিন পরেই ঈদ। তাতেই জমে উঠেছে বিভাগীয় নগরী রংপুরের ঈদ বাজার। বিভিন্ন শ্রেণিপেশারনানা বয়সের মানুষের পদভারে টইটম্বুর নগরীর বিপনী বিতানগুলো। ভারতীয় টিভি সিরিয়ালের নায়ক নায়িকাদের নামে যে সমস্ত পোষাক রয়েছে সেগুলোর কদর এখানে বেশি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের ঈদের বাজারের প্রায় পুরোটাই ভারতীয় পোশাক আশাকের দখলে। অবৈধভাবে সীমান্ত গলিয়ে আসা ভারতীয় শাড়িসহ বিভিন্ন ধরনের পোশাক প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে এ অঞ্চলের বাজারগুলোতে। বাহারী ডিজাইন, ভারতীয় অভিনেতা অভিনেত্রী ও সিরিয়ালের নামে পোশাকগুলোর চাহিদা বেশি। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভারতীয় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সঙ্গে এদেশীয় এজেন্টরা সীমান্ত গলিয়ে চোরাই পথে প্রতিদিনই আনছেন ভারতীয় পোশাক।

সরেজমিনে ও অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য মতে,  রংপুরসহ এ অঞ্চলের বড় ছোট সব ধরনের দোকানেই ঈদের বাজারের পোশাক আশাকসহ সকল সামগ্রী ভারতীয় ব্রান্ডের দখলে।  আর এসব কিছু রয়েছে ভারতীয় অভিনেতা, অভিনেত্রী ও সিরিয়ালের নামেই। এ বছর এ অঞ্চলের বাজারে শাড়ির মধ্যে জলনুপুর, টাপুর টুপুর, বাহা, জামদানী, গোপি বৌ ব্রান্ড ৩ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা, মেয়েদের পাগলু,  বিপাশা বসু, জান্নাত-টু, আশিকী-২, জিপসি ৩৫০ থেকে ২৮ হাজার ৫০০ টাকা, ছেলেদের কার্গো জিন্স, থাই, ডিসকার্ড-২, সিøম ফিট, ফরমাল টি শার্ট ৭৫০ থেকে ৩ হাজার ৪০০ টাকা, ছোটদের লেহেঙ্গা, মাসাক্কালী, সিঙ্গেল টপ, টপসেট, গেঞ্জিসেট ১ হাজার ২০০ থেকে ৭ হাজার টাকা, পাঞ্জাবীর মধ্যে বড়দের ছোটদের ধুতি কাতান, ৩৫০ টাকা থেকে ৫ হাজার এবং আকর্ষণীয় শেরওয়ানী ৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত দোকানীরা দাম হাঁকাচ্ছেন। ভারতীয় পোশাক আশাকের আড়ালে হারিয়ে গেছে এবারের ঈদের বাজারে দেশীয় তৈরি উত্তরাঞ্চলের পাবনা, সিরাজগঞ্জের বিখ্যাত তাঁতের শাড়ি, লুঙ্গি, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত রাজশাহী সিল্ক, রংপুরের গঙ্গাচড়ার বেনারশী, শতরঞ্জির মতো বিখ্যাত সব ব্রান্ডের দেশীয় কাপড়ের নাম।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভারতীয় কাপড়ের বাহারী ও চটকদার ডিজাইন, অপেক্ষাকৃত কমমূল্য এবং বাংলাদেশে ভারতীয় টিভি চ্যানেলের প্রভাব দেশীয় কাপড় মার খাওয়ার অন্যতম কারণ।

সূত্র জানায়, এ অঞ্চলে ঈদ উপলক্ষে এ বছর ভারতীয় মহাজনদের টার্গেট শুধু কাপড় থেকেই ১০ হাজার কোটি টাকার ওপরে উপার্জন করা। এজন্য তারা রমজান শুরুর এক সপ্তাহ আগে থেকেই এদেশীয় দালালদের মাধ্যমে সীমান্ত গলিয়ে এসব কাপড় পার করে দেয়া শুরু করেন। আর সেগুলো কখনও ভূয়া কাগজ আবার কখনও সরাসরি অবৈধভাবে দোকানেই তুলছেন দোকানীরা। বিক্রিও করছেন দেদারছে।

অনুসন্ধানে প্রকাশ, ভারতীয় একটি সংঘবদ্ধ চোরাই সিন্ডিকেট এখন এই অঞ্চলের সীমান্তসহ বিভিন্ন হাটবাজারে অবস্থান করছেন। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন এদেশীয় মুনাফাখোর দালাল ও ফড়িয়াগোষ্ঠী। দ্বি-দেশীয় চোরাকারবারী সিন্ডিকেটটি সীমান্ত গলিয়ে বাংলাদেশে আনছেন ভারতীয় এ সব পণ্য। প্রতিদিনই শত শত কোটি টাকার ভারতীয় কাপড়সহ বিভিন্ন পণ্য কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি, নাগেশ্বরী, ভুরঙ্গামারীর বঙ্গ সোনাহাট, শালজোর, উত্তর ধরলা, কাশিয়া বাড়ি,  রৌমারী, লালমনিরহাটের মোগলহাট, পাটগ্রাম, বড়খাতা, নীলফামারীর  ডোমার, চিলাহাটি, পঞ্চগড়ের তেতুলিয়া, দেবীগঞ্জ, বোদা,  ঠাকুরগাঁওয়ের রুবিয়া, দিনাজপুরের হাকিমপুর, হিলি,  বিরামপুর, নবাবগ, রাজশাহীর গোদাগাড়ি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ, শিবগঞ্জ, ভোলাহাটসহ বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে এদেশে আসছে।

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ির দাসিয়ারছড়া ছিটমহল এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চোরাকারবারী চক্রটি সক্রিয় হয়ে উঠে। ভোর পর্যন্ত চলে তাদের এই ভারতীয় কাপড়সহ পণ্য আনা নেয়ার মহোৎসব। এছাড়াও, বাংলাবান্ধা, হিলি, বুড়িমারী, মোগলহাট, সোনামসজিদ স্থলবন্দর ও এর আশেপাশ দিয়েই অবৈধপথে আসছে ভারতীয় কাপড়। যা এদেশের মুনাফাখোর গোষ্ঠি পৌঁছে দিচ্ছে দোকানে দোকানে। অনেক সময় সীমান্তরক্ষী বাহিনী, কাস্টমস এবং আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব বাহিনীকে ম্যানেজ করেই ভারতীয় কাপড়সহ বিভিন্ন সামগ্রী প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে এই অঞ্চলের মার্কেটগুলোতে।

সূত্র জানায়, এক গাইড কাপড় পার করতে সীমান্তরক্ষী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ১২০ থেকে ১৩০  টাকা ও লাইনম্যানকে ৭০ থেকে ৮০ টাকা বখরা দিতে হয় চোরাকারবারীদের। তাছাড়া দলীয় ও প্রভাবশালীদের চাঁদা দিতে হয় একবারেই থোক হিসেবে।

বিভাগীয় কমিশনার দিলওয়ার বখত সাংবাদিকদের জানান, ঈদ উপলক্ষে অবৈধভাবে যাতে কোন পণ্যই বাজারজাত হতে না পারে সেজন্য সীমান্তে নজরদারী ছাড়াও বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। এজন্য তিনি জনগণেরও সহযোগিতা কামনা করেন

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *