ঠাকুরগাঁও
রাণীশংকৈলে শেষ হলো জমিদার বাড়ির বৈশাখী মেলা
আনোয়ার হোসেন আকাশ, রাণীশংকৈল: ঠাকুরগাওয়ের রাণীশংকৈল জগদল জমিদার বাড়ির তিন দিন ব্যাপী ৩য় বর্ষের বৈশাখী মেলা রবিবার সন্ধ্যায় শেষ হয়েছে। পহেলা বৈশাখ শুক্রবার বিকালে সাহিত্যিক হুমায়ন আহম্মেদ মঞ্চে আলোচনার সভায় এ মেলার উদ্বোধন করেন ঠাকুরগাও-৩ সাংসদ অধ্যাপক মো. ইয়াসিন আলী। রাণীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ বাজার থেকে প্রায় ১২ কিঃমিঃ পশ্চিম-উত্তরে জগদল জমিদার বাড়ি। দক্ষিণ দিক থেকে নাগর নদী ও উত্তর দিক থেকে বয়ে আসা তিরনই নদী পশ্চিম প্রান্তে মিলিত হয়ে ভারত সীমান্তে প্রবেশ করেছে। এই দুই নদীর মোহনায় জমিদার বীরেন্দ্র কুমারের সুদৃশ্য অট্রালিকার ভগ্নাবেশ রাজ প্রাসাদ দাঁড়িয়ে আছে। সাথে আরো দু’টি রাজপ্রাসাদের ভগ্নাবেশ বর্তমান। জমিদার বীরেন্দ্র কুমার সুশিক্ষিত বই প্রেমিক ছিলেন। রাজপ্রাসাদে একটি লাইব্রেরীর মুল্যবান গ্রন্থগুলো দেশ বিভক্তির পর ১৯৪৮ খ্রীষ্টাব্দে তৎকালিন দিনাজপুর সুরেন্দ্রনাাথ কলেজ বর্তমান দিনাজপুর সরকারি কলেজে দান করেন। তৎকালিন সময়ে যার মূল্য নির্ধারণ করা হয় পঞ্চাশ হাজার টাকা।
হুমায়ন আহম্মদের বাল্য কালে তাঁর বাবা ১৯৫৬ সালের পুলিশের এসআই পদে চাকুরী নিয়ে জমিদার বাড়িতে দায়িত্ব পালন করেন। এই সাহিত্যিক পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন। লেখকের বাল্য কালের স্মৃতি আর তিনার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এখানে হুমায়ন আহম্মেদ নাট্য মঞ্চ তৈরী করা হয়েছে। অধ্যক্ষ মো. তাজুল ইসলামের উদ্যোগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল ইসলামের আর্থিক সহযোগিতায় ২০১৫ সালে এ মঞ্চ নির্মান করা হয়। দুর দুরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসে এ মেলায়। এ নাট্য মঞ্চ আর মেলার স্বপ্নদ্রষ্টা অধ্যক্ষ মো. তাজুল ইসলাম। মেলা আয়োজনের মাধ্যমে জমিদার বাড়ির ইতিহাস মানুষের মাঝে তুলে ধরাই আসল উদ্যেশ্য। গ্রাম বাংলার পল্লীর এক নির্জন প্রান্তে মেঠো পথের মানুষের মাঝে এ আয়োজন এলাকার মানুষকে গর্বিত করে তুলেছে। গ্রামের মানুষ শহরের মেলায় যেতে না পারলেও এ মেলায় এসে নিজেকে খুব ধন্য মনে করছে। বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য’র মাঝে মুক্ত হাওয়ায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ পল্লী বাংলার মানুষের মেজাজকে আরো ফুরফুরে করে দেয়।
জগদল জমিদার বাড়ির বৈশাখী মেলার উদ্ভাবক অধ্যক্ষ মো. তাজুল
ইসলাম বলেন, এই বৈশাখী মেলায় বাংলার চিরন্তন রূপটি খুজে পাওয়া যায়। বিশাল আম্র কাননের মাঝে ছায়া ঘেরায় অবারিতভাবে মানুষ ঘুরে বেড়ায়। পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্য়ে আবৃত দুই নদীর মিলন ছাড়াও ওপার বাংলার নৈসর্গিক দৃশ্য চা বাগান মানুষকে বিমোহিত করে তুলে। প্রকৃত পক্ষে জগদল জমিদার বাড়ির বৈশাখী মেলা বাংলার আসল রূপ চিত্র মানুষের মাঝে গর্বের সাথে ভেসে আসে। আমি বিশ্বাস করি একদিন এই মেলার আয়তন আরো দির্ঘ থেকে দির্ঘায়িত হবে।
তিনি সকল বাঙালীদের এই বৈশাখী মেলায় এসে বাংলার আসল রূপ চিত্র উপভোগ করার আহবান জানান।
ঠাকুরগাও-৩ সাংসদ অধ্যাপক মো. ইয়াসিন আলী বলেন, এপার ওপার বাংলার সীমান্তবর্তী জগদল জমিদার বাড়িতে তিনদিন ব্যাপী বৈশাখী মেলা বাংলার ইতিহাসকে সাধারণ মানুষের মাঝে তুলে ধরেছে। প্রাকৃতিক রূপ বৈচিত্রের মাঝে এমন আয়োজন বাংলার আর কোথাও খুজে পাওয়া যায়না যা এখানে রয়েছে। মেলার আয়োজকদের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।