Connect with us

কুড়িগ্রাম

রৌমারীর নতুনবন্দর স্থলবন্দর: ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান যেখানে

Published

on

Rowmari (Kurigram) Photos (2) 11-06-16শাহাদত হোসেন, রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি: এক সময় দু’বেলা খেয়ে তিন বেলার রান্না করে দিতেন করিমন বেওয়া। এতে তার নিজের পেট কোনমতে চললেও সংসারের অন্য সদস্যদের উপোশ থাকতে হতো প্রায়ই। পঙ্গু স্বামীসহ ৭ সদস্যের সংসারে কর্মক্ষম কোন ব্যক্তি নেই। তাই তিন বেলা রান্না করে যা খাবার পেতেন তাই ভাগ করে খেতেন সবাই। এতে দিন যেন আর চলে না। কি করবেন চোখে অন্ধকার দেখতে শুরু করলেন তিনি। বড় ছেলে নাজমুল ৯ম শ্রেণি থেকে লেখাপড়া চুকিয়ে গার্মেন্টেস যেতে প্রস্তুত। ছোটগুলো সবাই স্কুলে যায়-না যাওয়ার মতো। কলম খাতা কেনা টাকা নেই। স্কুলে যাওয়া শধু বিস্কুটের জন্যে। প্রাইমারীতে দেয়া বিস্কুট দিয়ে নাস্তার অভাব পূরণ হয় তাদের। এমন সময় রৌমারীর নতুনবন্দর স্থলবন্দর চালু হয়। ভারত থেকে নেমে আসে কয়লা, পাথর আর আদা। প্রতিদিন শতশত ভারতীয় ট্রাক ঢুকে এখানে। কর্মক্ষেত্র তৈরি হয় করিমন বেওয়া ও তার স্বামী মোকছেদ আলীর।
ক্রেসার মেশিনে পাথর ভাঙা হয়। সেখানেই কাজ করেন করিমন। মোকছেদ আলী সেই পাথরের হিসেব করেন। এতে প্রতিদিন তারা পান প্রায় ৫’শ টাকা। এতে সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরে না এলেও অন্তত উপোস করতে হয় না তাদের। বড় ছেলে নাজমুলসহ অন্যরা এখন আগের মতো লেখাপড়ায় মন দিয়েছে। তারা স্বপ্ন দেখছে আগামীতে লেখাপড়া করে বড় হওয়ার। শুধু করিমন বেওয়া বা মোকছেদ আলী নন, এমন হাজারও পরিবার এখন কাজ খুঁজে পেয়েছেন স্থলবন্দরে।
চর নতুনবন্দর ইম্পোটার এÐ এক্সপোটার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাবেক এমপি জাকির হোসেন বলেন, নতুনবন্দর স্থলবন্দরটির খুবই প্রয়োজন ছিল আমাদের। শুধু মানুষের কর্মসংস্থান নয়,এখান থেকে লাখ লাখ টাকা রাজস্ব পাচ্ছে সরকার। তিনি এ অ্যাসোসিয়েশনের সকল সদস্যদের দ্বিধাদ্ব›দ্ব ভুলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এ ব্যবসাকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার আহŸান জানান। ব্যবসা এগিয়ে গেলে আরও অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে সরকার পাবে বিপুল অংকের রাজস্ব এবং এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন সম্ভব হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাসোসিয়েসনের সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ তুহিন বলেন, প্রতিদিন শতাধিক ট্রাক্টর স্থলবন্দর থেকে পাথর বহনের কাজ করছে। অর্ধশতাধিক ক্রেসার মেশিন রাতদিন পাথর ভাঙ্গছে। তুরা সড়ক, ডিসি সড়কসহ আশপাশের অনেক সড়কের পাশে অন্তত ১শ একর জমি ভাড়ায় রয়েছে। জমির মালিক প্রতি শতাংশ জমি থেকে ভাড়া পাচ্ছেন মাসে ১ হাজার টাকা। ভারত থেকে আসা ট্রাকগুলো থেকে মালামাল আনলোড করতে ৫ শতাধিক কুলি রাতদিন কাজ করছে। সব মিলে প্রায ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে নতুন বন্দর স্থলবন্দর ঘিরে।
বিজিবি’র জামালপুর-৩৫ ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার (সিও) রফিকুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, চলতি বছরের মার্চ মাসে ১ হাজার ৬৩৩ ট্রাক পাথর এসেছে। আদা এসেছে ২৪ ট্রাক। অপরদিকে রপ্তানি হয়েছে ৪ ট্রাক ম্যালামাইন ও ২ ট্রাক প্রিন্ট বই। এর বিপরীতে ৬০ লক্ষ ৫৯ হাজার ৯৮১ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে।’
রৌমারী-রাজিবপুর ট্রাক্টর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম শালু বলেন, তুরা সড়কের কার্পেটিংয়ের কাজ দ্রæত এগিয়ে চলেছে তাই ওই সড়কে ট্রাক্টর চলাচল দুরহ হয়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি ফুলবাড়ি-রৌমারী সড়কটির সামান্য কাজ দ্রæত শেষ করতো তাহলে স্থলবন্দরের মালামাল বহন আরও সহজতর হতো। এছাড়াও প্রায়ই ট্রাক্টরের ধুরি ভেঙে যায়। এতে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হন মালিক তেমনি শ্রমিকদেরও মৃত্যুঝুকি থাকে।
এ বিষয়ে রৌমারী উপজেলা প্রকৌশলী নাজমুল হক বলেন, চর ফুলবাড়ি-রৌমারী এলসি সড়কটির কাজ এ বছরের জুনের মধ্যেই শেষ করা হবে।
ঠিক কত সালে চর নতুনবন্দর স্থলবন্দর স্থাপিত হয় তা এখন ধোঁয়াসা। তবে বিভিন্ন তথ্যমতে বৃটিশ সরকারের শেষের দিকে স্থাপন করা হয় স্থলবন্দরটি। তখন পাকিস্তান পরে বাংলাদেশ ও ভারতীয় নাগরিকদের আগমন-প্রত্যাগমনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল এর কার্যক্রম। ৯০’র দশকে এসে স্থলবন্দর চালু করণের তোড়জোড় শুরু হয় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের। ২০০০ সালের দিকে এসে এলসি’র মাধ্যমে এ রুটে কয়লা আমদানী করেন ঢাকার কয়েকটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। ফলে স্থলবন্দরটির গুরুত্ব বুঝতে শুরু করেন স্থানীয় প্রশাসনসহ রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক ও লেখক-সাংবাদিকরা। ফলে ওই সময়ের রৌমারী হতে প্রকাশিত সাপ্তাহিক দ্বীপদেশসহ বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় ব্যাপক লেখালেখি হয় এ বিষয়ে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালের ৬ মার্চ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন উদ্বোধন করতে রৌমারীতে আসেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাড. ফজলে রাব্বী মিয়া (এমপি)। তিনি চর নতুনবন্দরকে স্থলবন্দর হিসেবে ঘোষণা দেন। তবে পূর্ণাঙ্গ ঘোষণার বিষয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেয়ে যোগাযোগ করতে বলা হয় সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে। এ থেকে শুরু হয় স্থলবন্দরটির নানাবিধ কার্যক্রম।
এ বিষয়ে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও আওয়ামীলীগ নেতা বীরমুক্তিযোদ্ধা চরবন্ধু হাজী মুরাদ লতিফ বলেন রৌমারী নদী ভাঙ্গান কবলিত এলাকার দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্ঠিসহ আর্থসামাজিক উন্নতি হবে। খুব সহজে রৌমারী থেকে পাথর, কয়লাসহ প্রয়োজনীয় দ্রবাদি সারা সরবারহ করা যাবে।
রৌমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা মো: মজিবুর রহমান বঙ্গবাসী বলেন পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর চালু হলে নদী ভাঙ্গান কবলিত রৌমারী এলাকার দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্ঠি হবে। পাশা পাশি সরকারের রাস্ব বাড়বে। উত্তর অঞ্চলের মঙ্গা নামের পরির্বতন ঘটবে। আমি আশা করি বর্তমান সরকার উন্নয়নের সরকার খুব দ্ররুত পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দ চালুর ব্যবস্থা গ্রহন করবে।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *