Connect with us

দেশজুড়ে

শরীয়তপুর পৌরমেয়র জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি দুর্নীতির দায়ে বরখাস্ত

Published

on

Mayorশেখ জাবেদ, শরীয়তপুর, বাংলাদেশেরপত্র ডট কম: শরীয়তপুর পৌরসভার মেয়র জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুর রব মুন্সিকে  দুর্নীতির দায়ে বরখাস্ত করা হয়েছে। আংগারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের জমি বিক্রির টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের দায়ের করা মামলায় শরীয়তপুর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও পৌরসভার মেয়র আব্দুর রব মুন্সী সহ ১২ জনের বিরুদ্ধে গত ৩০ জুন গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করেন আদালত। দীর্ঘ দিন যাবৎ পলাতক থাকায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ পৌর-১ শাখা হতে সোমবার সাময়িক বরখাস্তের আদেশ জারি করা হয়।

স্থানীয় সরকার বিভাগের চিঠির সূত্র জানায়, দুদকের মামলার অভিযোগপত্র আদালতে গ্রহণ করায় পৌরসভার মেয়রের ক্ষমতা প্রয়োগ পৌরসভা তথা জনস্বার্থের পরিপন্থি। এ কারণে সরকার শরীয়তপুর পৌরসভার মেয়রের পদ হতে আব্দুর রব মুন্সিকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন, ২০০৯ এর ৩১(১) ধারার বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে উপ সচিব মোঃ খলিলুর রহমান বরখাস্তের চিঠিতে স্বাক্ষর করেন। তিন দিনের মধ্যে প্যানেল মেয়র-১ এর নিকট পৌর মেয়রের দায়িত্ব হস্তান্তর করার নির্দেশ দেয়া হয়।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও মামলার বিবরণে জানা যায়, শরীয়তপুর সদর উপজেলার আঙ্গারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নিজস্ব রেকর্ডভুক্ত উত্তর মধ্যপাড়া মৌজার ৪৩৮নং খতিয়ানের ২০,২১,২৭ ও ২৮ নং দাগের ৩ একর ৭১শতাংশ জমি বিক্রি করা হয়। সরকারি হিসাব অনুযায়ী যার সর্বনি¤œ বাজার দর ছিল ৪কোটি ৫৭ লাখ ৪২ হাজার ৪৪৫ টাকা। উক্ত জমি বিক্রির জন্য আঙ্গারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার কামাল ২০১২ সালের ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দরপত্র আহবান করেন। ৩টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নামমাত্র মূল্য দেখিয়ে দরপত্র দাখিল করে। ওই তিনটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে জে সরদার কর্পোরেশন নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি প্রকৃত মূল্য ৪ কোটি ৫৭ লাখ ৪২ হাজার ৪৪৫ টাকার পরিবর্তে মাত্র ১ কোটি ৫০ লাখ টাকায় জমিটি বিক্রি করে।

২০১২ সালের ৩০ ডিসেম্বর শরীয়তপুর সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন কামাল দাতা হিসেবে জে সরদার কর্পোরেশনের মালিক জাহাঙ্গীর আলম ও তার ভাই আবদুস সালামের নামে জমিটি রেজিস্ট্রি করে দেয়। দলিলে জমি বিক্রির টাকা বুঝে পেয়ে জমি বুঝিয়ে দেয়ার কথা উল্লেখ থাকলেও বিদ্যালয়ের তহবিলে কোন টাকা জমা দেয়া হয়নি। ২ মাস ১৮ দিন পরে জমি গ্রহীতাগণ ৭০ লাখ ও ৮০ লাখ টাকার ২টি চেক প্রদান করে। ওই চেক দুটি বিদ্যালয়ের তহবিলে জমা করা হলে চেকের স্বাক্ষর মিল না থাকায় এবং গ্রহীতার ব্যাংক হিসাব নম্বরে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ চেক দুটি ফেরত প্রদান করে। দুর্নীতি দমন কমিশনের ফরিদপুর আঞ্চলিক কার্যালয় বিষয়টি তদন্ত করে। গত বছর ৬ আগষ্ট দুদকের উপ-পরিচালক মলয় কুমার সাহা বাদী হয়ে পালং মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক গাজী মোঃ শামসুল আরেফিন তদন্ত শেষে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও শরীয়তপুর পৌর মেয়র আব্দুর রব মুন্সি, বিদ্যালয়ের সদস্য সচিব প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন কামাল, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আবদুস সালাম হাওলাদার, মজিবুর রহমান হাওলাদার, আইউব আলী মল্লিক, আব্দুল কুদ্দুস মোল্যা, বেগম আলফাতুন্নেছা, সুজন সাহা, সংগীতা সাহা, রনজিৎ কুমার সাহা, জমি গ্রহীতা জাহাঙ্গীর আলম ও আবদুস সালামকে মামলায় অভিযুক্ত করে গত ২৮ মে শরীয়তপুর মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে দুদক চার্জশিট দাখিল করেন। ৩০ জুন আদালত অভিযুক্তদের উপস্থিতির জন্য দিন ধার্য করেন। অভিযুক্তরা কেউ আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় দুরর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর দাখিল করা অভিযোগ পত্রটি আমলে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন। এর পর থেকে পৌরসভার মেয়র আব্দুর রব মুন্সিসহ অভিযুক্ত ১২ জন পলাতক রয়েছেন।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক রাম চন্দ্র দাস বলেন, শরীয়তপুর পৌরসভার মেয়র আব্দুর রব মুন্সিকে পৌরসভা থেকে বরখাস্তের একটি পত্র স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় থেকে পাওয়া গেছে। পত্রের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তি পদক্ষেপ নেয়া হবে। প্রকৃত অর্থে পৌর মেয়র আব্দুর রব মুন্সির বিরুদ্ধে সংবাদটি শোনার পড়ে শরীয়তপুরে এখন বেপারটি টপ অব দি টাউন-এ পরিণত হয়েছে।

বাংলাদেশেরপত্র/এডি/পি

 

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *