দেশজুড়ে
শিক্ষক হত্যার বিচারের দাবিতে উত্তাল রাবি
এদিকে অধ্যাপক হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে বাগমরায় এক ঈমামসহ দুইজনজে আটক করেছে পুলিশ। তবে পুলিশ আটকের বিষয়টি অস্বীকার করেছে।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, অধ্যাপক রেজাউল করিম হত্যার বিচার দাবিতে সকাল থেকে দলে দলে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে সমবেত হতে থাকেন। আজ মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ১২ টার দিকে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে কাজলা থেকে বিনোদপুর পর্যন্ত প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এসময় রাস্তার দুই ধারে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আটকে পড়ে শত শত যানবাহন।
বিক্ষোভকারীরা এসময় শিক্ষক রেজাউল হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে প্রতিবাদে ফেটে পড়েন। প্রচন্ড রোদ আর গরম উপেক্ষা করে প্রতিবাদিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাড়কও উত্তাল করে রাখেন। তাদের কণ্ঠে উচ্চারিত হতে থাকে শিক্ষক রেজাউল হত্যাকারীদের বিচার চাই, করতে হবে, খুনিদের ফাঁসি চাই, দিতে হবে স্লোগানে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ ক্লাস-পরীক্ষা চলার কথা থাকলেও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন কর্মসূচির কারণে প্রায় বিভাগেই তেমন কাস হচ্ছে না। এছাড়া পূবঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী কাস-পরীক্ষা বন্ধ রেখে ইংরেজি বিভাগ তাদের বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছেন।
অন্যদিকে বাগমারা ওই শিক্ষকের গ্রাম থেকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এক ইমামসহ দুজনকে আটক করেছে বলে আটককৃতদের পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
আজ ভোররাতে তাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে বাগমারার সেই দরগামাড়িয়া গ্রামের জামে মসজিদের ইমাম ও স্থানীয় এক মাদ্রাসার শিক্ষককে ধরে নিয়ে গেছে বলে জানা গেছে। তবে পুলিশ আটকের বিষয়টি অস্বীকার করেছে। আটকৃতরা হলেন- খাজাপাড়া গ্রামের মাদ্রাসার শিক্ষক মুনসুর রহমান (৪৮) ও দরগামাড়িয়া জামে মসজিদের ইমাম রায়হান আলী (৩২) ।
দরগামাড়িয়া গ্রামের জামে মসজিদের ইমামের রায়হান আলীর স্ত্রী শাহারা খাতুন বলেন, ‘ভোররাত ৪টার দিকে ৫/৬ জন সাদাপোশাকের লোক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে বাড়িতে ঢুকে আমার স্বামীকে ধরে নিয়ে যান। কী কারণে তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সে বিষয়ে তারা কিছুই জানায়নি।
খাজাপাড়া গ্রামের মাদ্রাসা শিক্ষক মুনসুর রহমানের স্ত্রী ফজিলাতুন্নেসার ভাষ্য অনুযায়ি, তারও স্বামীকেও একই কায়দায় ভোররাতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ইমাম ও মাদ্রাসা শিক্ষকের দুই স্ত্রী বলেন, সকালে তারা থানা ও স্থানীয় র্যাব ক্যাম্পে খোঁজ নিয়েছেন। কোথাও তাদেও কোনো হদিস পাননি। দরগামাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দারা জানান, রায়হান আলীর বাড়ি বাগমারা উপজেলার তালঘড়িয়া গ্রামে। তিনি দরগামাড়িয়া জামে মসজিদের ইমাম ও স্থানীয় ফোরকানিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রেজাউল করিম সিদ্দিকী গ্রামে বাড়িতে গেলে ওই মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতেন। হয়তো বা হত্যার ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রায়হানকে কোনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোক ধরে নিয়ে যেতে পারে বলে তাদের ধারণা।
এদিকে মুনসুর রহমান উপজেলার গোপালপুর ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার শিক্ষক। তিনি দরগামাড়িয়ার পাশের গ্রাম চানপাড়ার এক মসজিদের জুমা নামাজের ইমামতি করে আসছিলেন। বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিয়ার রহমান বলেন, ‘আমার থানার পুলিশ কাউকে আটক করেনি। আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না।’
উল্লেখ্য, গত শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে রাজশাহী নগরীর শালবাগান এলাকায় অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম সিদ্দিকীর নিজ বাসার সামনে তাকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে রাবিতে গত শনিবার, রোববার ও সোমবার সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ছিল। আজ কাস হওয়ার কথা থাকলেও সব বিভাগে নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি। হত্যকাণ্ডের দায়ের করা মামলার এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারছে না আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। ভোররাতে বাগমারা থেকে দুইজনসহ শিক্ষক হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে মোট চারজনকে আটক হলো।