Connect with us

ঢাকা বিভাগ

শিবচরে দেড় মাস ধরে বাণিজ্য মেলায় চলছে অশ্লীল নৃত্য, র‌্যাফেল ড্র ও জমজমাট জুয়ার আসর

Published

on

মাদারীপুর প্রতিনিধি ॥DSC02649

মাদারীপুর শিবচরে পৌর বাণিজ্য মেলার নামে দেড় মাসের বেশি সময় ধরে র‌্যাফেল ড্র, অশ্লীল নৃত্য, জমজমাট জুয়ার আসর চলছে। এই মেলাকে কেন্দ্র করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সংঘবদ্ধ একটি চক্র। এলাকায় যুবসমাজ নেশা আর জুয়ার আসরে আসক্ত হয়ে পড়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ছাড়াও মেলায় র‌্যাফেল ড্র, জুয়ার আসর বসিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। পৌর বাণিজ্য মেলার ঐ চক্রটি প্রায় ৩ কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নেয়ার টার্গেট করেছে বলে জানা যায়।
মাদারীপুর জেলার শিবচর পৌর এলাকার দাদাভাই উপশহরে গত ২৪ জানুয়ারী থেকে এ মেলা চলছে। চলতি বছরের এসএসসি ও আসন্ন এইচ.এস.সি পরীক্ষাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া বিঘœ ঘটছে। শিবচর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক হারে চুরি, ছিনতাইসহ অসামাজিক কর্মকান্ড বেড়ে গেছে।
মেলা কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাদারীপুর জেলার শিবচর পৌর এলাকার দাদাভাই উপশহরে প্রায় দেড় মাসের বেশি দিন ধরে চলছে শিবচর পৌর বাণিজ্য মেলা। ঢাকা, নারায়নগঞ্জ ও সিলেটের ৫/৬ জন যুবক স্থানীয় নেতাকর্মীদের ম্যানেজ করে মেলা চালিয়ে যাচ্ছে। মেলায় নামমাত্র ৩০ টি স্টল থাকলেও টাকা উপার্জন প্রধান আয়ের উৎস হলো র‌্যাফেল ড্র, ২টি জুয়ার আসর ও সার্কাস।
মেলায় আগত দর্শানাথী আবদুর রহিম মিয়া জানান, মেলার দি কমলা সাকার্সের বিকেল আর সন্ধ্যার পরের শোতে কিছুটা খেলাধুলা চলে। রাতের শো-তে চলে অশ্লীল নৃত্য। রাত ন’টার পর নারী দর্শকদের সার্কাসে প্রবেশ নিষেধ। ফরিদপুর ও রাজবাড়ির দৌলতদিয়া থেকে আনা হয় অসংখ্য যৌনকর্মী। সার্কাসের এ যৌনকর্মী নর্তকীদের খোলামেলা পরিবেশ সকল অশ্লীলতাকে হার মানায়। আবার ওই নৃত্যের ছবিও মোবাইর কিংবা ক্যামেরায় ভিডিও ধারণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। কৌতূহল বশত কেউ ভিডিও ধারণ করলে ওই দর্শকের ভিডিও কিংবা মোবাইল ছিনিয়ে নেয় এবং বাজেয়াপ্ত করছে কর্তৃপক্ষ। এ সকল যৌন কর্মীদের অশ্লীল নৃত্যা স্ব-পরিবারে তো দুরের কথা বিভিন্ন শ্রেণীর বয়সের পুরুষ দর্শকরাও উপভোগ করতে পারছে না। শুধুমাত্র সমবয়সী ছেলেরা দর্শকরা মঞ্চে মাতিয়ে তুলছে। এমনকি প্রতি রাতেই যৌন কর্মীদের সঙ্গে স্কুল, কলেজ শিক্ষার্থীসহ ও উঠতি বয়সের ছেলেদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটছে অহরহ। এক শ্রেণির দর্শকরা নেশা করে মাতলামিও করছে। মেলার মাঠে মদ, ইয়াবা ও ফেনসিডিল খোর বখাটে যুবকদের পদচারণা বেড়ে গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নলগোড়া গ্রামের বাসিন্দ জানান, আবার প্রায় রাতেই সাকার্সের শো শেষে এবং দিনের বেলা যৌন কর্মীদের সঙ্গে নানা অসামাজিক কর্মকান্ডের ঘটনা ঘটছে। যুব সমাজ নানা অবক্ষয়ে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। এমনকি রাতভর জুয়া খেলায় অংশ নিয়ে টাকা হেরে নিঃস্ব হচ্ছে যুবকরা। গত কয়েকদিন ধরে শিবচরের যাদুয়ারচর, কেরানীবাট, গুয়াতলা, পাচ্চর-শিবচর সড়কের নলগোড়া, খানকান্দি বাহাদুরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রতি রাতেই ছিনতাই এর ঘটনা ঘটছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, বিভিন্ন এলাকায় সংঘটিত চুরি-ডাকাতি ও ছিনতাই এর মাধ্যমে ঐ টাকা যাচ্ছে শিবচর পৌর মেলার জুয়ার আসরে। এ ব্যাপারে শিবচর থানা পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন নির্বিকার বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছে।
র‌্যাফেল ড্রতে দিনভর শতাধিক ভ্যান ও অটোরিক্সা মাইক দিয়ে প্রচার করে ২০ টাকা মূল্যের টিকিট বিক্রি হয়। রাত ১০ টার পরে ড্র অনুষ্ঠিত হয়। র‌্যাফেল ড্রটি স্থানীয় ক্যবল টিভি (ডিশ লাইনে) সরাসরি প্রচার করা হয়। এ সময় টিকিট ক্রেতা স্কুল কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার পড়াশুনা বন্ধ করে টিভির সামনে বসে থাকে। র‌্যাফেল ড্র’র প্রথম পুরস্কার থাকছে নগদ ৫ লাখ টাকা। আর স¦র্ণের সেট, মেবাইল, রান্না-বান্নার জিনিস, অটোরিস্কা, মোটরসাইকেলসহ ৬০-৬৫টি আকর্ষণীয় পুরস্কার। আবার অনেকেই পুরস্কার জিতে নিচ্ছে। নি¤œ আয়ের মানুষ প্রতিদিন টিকিট কিনে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। র‌্যাফেল ড্র’র টিকিট বিক্রি হয় প্রতিদিন প্রায় কয়েক লাখ টাকার। পুরস্কার দেয়া হয় সর্বোচ্চ ৭ থেকে ৮ লাখ টাকার। এছাড়া সাবান ও গুটি খেলার নামে দুইটি জুয়ার আসর খেকে প্রতি রাতে ১৫/২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় মেলা কর্তৃপক্ষ।
নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, মেলার আয়োজকরা হলো সুমন মিয়া, জুয়েল, এলাহীসহ ঢাকা, নারায়নগঞ্জ ও সিলেটের ৫/৬ জন যুবকসহ একটি চক্র। তারা দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে এ মেলার অয়োজন করে আসছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মেলার অন্যতম সুমন জানান, এ বছর মেলার ব্যবসা খারাপ যাচ্ছে। জুয়ার আসর কিংবা সার্কাস থেকে তেমন আয় নেই। তাই নায়ক নায়িকা দিয়ে শো করানো হয়। যৌনকর্মী আনার কথা সে অস্বীকার করেন।
শিবচর পৌর বাণিজ্য মেলার সমন্বয়কারী শিবচর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. তোফাজ্জেল হোসেন খান ওরফে মো. তোতা খানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
শিবচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. এমরান আহমেদ জানান, মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের অনুমতি সাপেক্ষই শিবচর পৌর বাণিজ্য মেলা চলছে। তবে জুয়া ও অশ্লীল নৃত্যের ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেনা না বলে তিঁনি জানান।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *