Connect with us

চট্রগ্রাম

সরকারের সকল সেবা সহজীকরণ ও অনলাইনের আওতায় আসবে

Published

on

2  (1)

চট্টগ্রাম নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম মাঠে বেলুন উড়িয়ে তিন দিনব্যাপী ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলার উদ্বোধন করছেন সরকারের মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) এন এম জিয়াউল আলম। পাশে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. খলিলুর রহমান ও জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন।

চট্টগ্রাম ব্যুরো: সরকারের মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) এন এম জিয়াউল আলম বলেছেন, বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তর, রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়ন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত রাষ্ট্র গড়তে ওয়াদা করেছিলেন। জনগণকে দেয়া প্রতিশ্র“তি বাস্তবায়নে সরকার ও অধীনস্থ মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমান সরকারের আমলে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (ইউডিসি) থেকে সকল দফতর ডিজিটাইজেশনের আওতায় এসেছে। ইউডিসিগুলো বর্তমানে সেবা গ্রহনের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে সরকারের ডিজিটাইজেশন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রীর অধীন মন্ত্রণালয় ও তার আওতাধীন অধিদপ্তরগুলো ডিজিটাইজেশন কার্যক্রমে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। বর্তমান সরকার গত অর্থ বছর থেকে প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের সাথে একটি বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি করেছে। প্রত্যেক মন্ত্রণালয় মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের সাথে এ চুক্তি সম্পাদন করে সে চুক্তিতে কোন্ কোন্ বিষয়ে আগামী বছর ঐ মন্ত্রণালয় কাজ করছে তার ফিরিস্তি থাকবে এবং কার্যক্রমগুলো বছর শেষে মূল্যায়ন হবে। চুক্তিটি দু’ভাগে বিভক্ত। একটি হচ্ছে- মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তরের যে কোন একটি সেবাকে সহজীকরণ ও অন্যটি হচ্ছে- যে কোন একটি সেবাকে অনলাইন সার্ভিসে রূপান্তর করা। এরই ধারাবাহিকতায় প্রত্যেকটি অধিদপ্তরের আওতাধীন মাঠ পর্যায়ের অফিসগুলো এ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছে। মাঠ পর্যায়েসহ সরকারের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা ডিজিটাইজেশন কার্যক্রমকে আরো ত্বরান্বিত করলে জনগণের দোরগোড়ায় সরকারি সকল সেবা সহজীকরণ ও অনলাইনের আওতায় আসবে এবং ভিশন ২০২১ বাস্তবায়ন হবে। এ লক্ষ্যে প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয় ও আওতাধীন অধিদপ্তরগুলোর মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্তরিকভাবে কাজ করে যেতে হবে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম মাঠে অনুষ্ঠিত তিন দিনব্যাপী ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা-২০১৬ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ইনোভেশন নামে একটি ফেসবুক আছে। সেখানে সরকারের ইনোভেশন সংক্রান্ত বিভিন্ন আলাপচারিতা আমরা দেখতে পাই। সরকার ইনোভেশন ওয়ার্ক ফোর্স তৈরি করার জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে। ইনোভেশন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রশিক্ষক বা রিসোর্স পার্সন তৈরি করে আরো বেশি প্রশিক্ষণ ক্ষেত্র গড়ে তুলতে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। একই সাথে সরকার ইনোভেশন ফান্ডে প্রচুর পরিমাণে বরাদ্দ দিচ্ছে। এ কার্যক্রম গ্রহনের ফলে সেবার কাজে নিয়োজিত বিভিন্ন দপ্তরের দাপ্তরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে ইনোভেশনের একটি কালচার তৈরি হয়েছে। একটি সেবা গ্রহীতাদের জন্য একটি অন্যতম সুযোগ। যেহেতু সরকার সেবা সহজীকরণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে এবং পর্যায়ক্রমে ঐ দপ্তরের সকল সেবায় সহজীকরণের আওতায় আসবে অথবা অনলাইন সেবার আওতায় আসবে সেহেতু প্রত্যেকটি সেবা জনসাধারণকে সহজগম্য করার জন্য সরকার এই পদক্ষেপগুলো নিচ্ছে। সেবা সহজীকরণ বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও বিভিন্ন ক্যাটাগরির শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলায় স্টল বসিয়ে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করছে। উদ্ভাবনী চর্চায় এ মেলা আগামীতে আরো বেশি প্রসার লাভ করবে।
ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেন, সরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন ধরনের নতুন উদ্ভাবন তৈরিকারীদের সুবিধার্থে সার্ভিস ইনোভেশন ফান্ড (এসআইএফ) করা হয়েছে। কোন সেবাকে সহজীকরণ করার জন্য কোন প্রকল্প গ্রহণ করলে সরকার এতে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা ও সর্বনিম্ন ৫ লাখ টাকা সহযোগিতা করবে। সে ক্ষেত্রে একটি বোর্ড থাকবে এবং বোর্ডের বিবেচনামতে উদ্ভাবনী প্রকল্পের কার্যক্রম সন্তোষজনক মনে হলে তা চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত নেবে বোর্ড কর্তৃপক্ষ। ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলার মাধ্যমে সরকারের বিভিন্ন ইনিশিয়েটিভ ও উদ্ভাবন বিষয় সফল চর্চার মাধ্যমে আগামীতে আমাদের সেবা গ্রহীতারা আরো বেশি উপকৃত হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুরাইয়া আক্তার সুইটির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. খলিলুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) দেবময় দেওয়ান। অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আবদুল জলিল, জহুর আহমদ চৌধুরী ফাউন্ডেশনের পরিচালক শরফুদ্দীন চৌধুরী রাজু, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল­াহ আল মনসুর, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তামিম আল ইয়ামিন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনিসুল ইসলামসহ জেলা প্রশাসনের বিভিন্নস্তরের কর্মকর্তা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ফিতা কেটে ও বেলুন উড়িয়ে তিন দিনব্যাপী ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলার শুভ উদ্বোধন করেন মন্ত্রী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) এন এম জিয়াউল আলম। পরে তিনি মেলায় আগত বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন। এদিকে, আজ ২৫ ফেব্র“য়ারি ২০১৬ ইং বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় “ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার : প্রযুক্তি দেশ জুড়ে” শীর্ষক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এ সেমিনারের আয়োজন করে। এছাড়া সন্ধ্যা ৬টায় জেলা শিল্পকলা ও শিশু একাডেমির প্রশিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। মেলার দ্বিতীয় দিন আগামীকাল ২৬ ফেব্র“য়ারি ২০১৬ ইং শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় আউটসোর্সিং বিষয়ক সেমিনার, সকাল ১১টায় রচনা প্রতিযোগিতা, বিকেল সাড়ে ৩টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে “নাগরিক সেবার উদ্ভাবন” শীর্ষক সেমিনার এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। মেলার ৩য় দিন ২৭ ফেব্র“য়ারি ২০১৬ ইং শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হবে। “রূপকল্প ২০২১ : আমাদের অগ্রযাত্রা” শীর্ষক সেমিনার। বিকেল সাড়ে ৪টায় অনুষ্ঠিত হবে পুরস্কার বিতরণ ও সমাপনী অনুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) ও এটুআই প্রোগ্রামের প্রকল্প পরিচালক কবির বিন আনোয়ার ও বিশেষ অতিথি থাকবেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) এর কম্পিউটার প্রকৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মীর মু: সাক্বী কাওসার। অনুষ্ঠানগুলোতে সভাপতিত্ব করবেন জেলা প্রশাসক। এছাড়া সমাপনী দিনে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত মেলায় সরকারি ও বেসরকারি ৬০টি প্রতিষ্ঠানের ৭২টি স্টল বসেছে। স্টলগুলো মেগা প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন ও সাধারণ স্টলে বিভক্ত থাকবে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা এ মেলায় এসে বেশি উপকৃত হবে। মেলায় স্টলগুলোর মধ্যে রয়েছে-ব্যাংক জোন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জোন, সরকারি প্রতিষ্ঠান জোন, টেলি কমিউনিকেশন জোন, ইউডিসি জোন, এনজিও জোন, কম্পিউটার, ই-শপ, অনলাইন নেটওয়ার্কিং জোন, ফ্রিল্যান্সার জোন, ফুড জোন ও গেমিং জোন।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সরকারি-বেসরকারি সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ই-সেবা সম্পর্কে জনসাধারণকে অবহিত করার লক্ষ্যে ২০১০ সালে প্রথম বারের মত ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলার আয়োজন করা হয়। মেলায় সাধারণ মানুষ এবং সেবা প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও জেলায় এ ধরনের মেলা আয়োজনের নির্দেশ না প্রদান করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১১ থেকে ২০১৫ সালে দেশের বিভাগীয় এবং জেলা শহরে ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলার আয়োজন করা হয়। সরকারের “রূপকল্প ২০২১” বাস্তবায়ন এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সকল ক্ষেত্রে কাজের স্বচ্ছতা, গতিশীলতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ এবং জনগণের দোরগোড়ায় সরকারি সেবা প্রদানে গৃহীত পদক্ষেপ সমূহ তুলে ধরতে ২৫ ফেব্র“য়ারি থেকে ২৭ ফেব্র“য়ারি ২০১৬ ইং তিন দিনব্যাপী ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলার আয়োজন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার খলিলুর রহমান বলেন, এ মেলার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছেÑ ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সরকারি-বেসরকারি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ই-সেবা সম্পর্কে জনসাধারণকে অবহিত করা। এ মেলা আয়োজনের ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে ই-সেবা সম্পর্কে উৎসাহ ও উদ্দীপনা সৃষ্টি উদ্ভাবনী, পুরস্কার প্রদানের ফলে সেবা প্রদানকারীর মধ্যে সেবা প্রদানে সুস্থ প্রতিযোগিতা, তরুণ উদ্ভাবকদের মধ্যে উদ্দীপনা সৃষ্টি, রুরাল ই-কমার্স এবং শিক্ষা বিষয়ক বিভিন্ন কার্যক্রম সমূহকে অত্যন্ত গুরুতত্বের সাথে উপস্থাপন, ডিজিটাল সেন্টার ও সরকারি বিভিন্ন সেবা সহজীকরণ কার্যক্রমকে একই ছাদের নিচে জনগণের সামনে তুলে ধরা।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন বলেন, সরকারের রূপকল্প- ২০২১ বাস্তবায়নের পথে অগ্রযাত্রা নিশ্চিত করতে এ ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলার আয়োজন। মেলায় বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ১৪টি প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করা হবে। এগুলো হচ্ছে- শ্রেষ্ঠ ডিজিটাল সেন্টার ২টি, শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৩টি, শ্রেষ্ঠ জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা ২ জন, শ্রেষ্ঠ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ১ জন, শ্রেষ্ঠ তরুণ উদ্ভাবক ৩ জন, শ্রেষ্ঠ স্টল ১টি, শ্রেষ্ঠ ই-সেবা প্রদানকারী দপ্তর ১টি এবং শ্রেষ্ঠ পোর্টালের দপ্তর ১টি।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *