Connect with us

বিশেষ নিবন্ধ

সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে

Published

on

সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে- Is conspiring to create communal riots

মসীহ উর রহমান
গেন্ডারিয়ায় নির্মাণাধীন মসজিদ থেকে মুসুল্লিদেরকে বের করে দেওয়ার ঘটনাটিকে নিয়ে সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে বিরাট একটি সংখ্যা এই ঘটনাটিকে ধর্মীয় দাঙ্গার দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য সক্রিয়ভাবে চেষ্টা করছে। তারা হিন্দু ধর্মের অনুসারীদের বিরুদ্ধে হামলা করার জন্য প্ররোচনা আর ফতোয়া প্রদান করছে। বিভিন্ন আয়াত, হাদীস ইত্যাদির অপব্যাখ্যা করে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টির জন্য তারা মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে আমাদের কথা হচ্ছে, আমাদের দেশে প্রতিদিন হাজার হাজার মসজিদ থেকে আযান হচ্ছে, বহু নতুন নতুন মসজিদ নির্মাণ হচ্ছে, কিন্তু সেগুলোর কোনোটাতে সরকার বাধা দেয় না, পুলিশও বাধা দেয় না। কিন্তু এখানে কেন বাধা দিল সেটা অবশ্যই জনগণকে চিন্তা করতে হবে। কেবল অন্ধ আবেগে ক্ষেপে উঠলেই হবে না। ধর্মীয় দাঙ্গা সৃষ্টি কখনোই কাম্য নয়। কিন্তু গেন্ডারিয়া নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেমন উন্মাদনার বিস্তার ঘটানোর অপচেষ্টা চলছে তা একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির আভাস দিচ্ছে। এসব দাঙ্গা করে এই উপমহাদেশে ব্রিটিশ যুগে লক্ষ লক্ষ মানুষ নিহত হয়েছে। এই বিষবাষ্প যদি প্রশ্রয় পায় তাহলে তাতে ইসলামের কোনো উপকার হবে না।
একটি বড় প্রশ্ন হচ্ছে, বিতর্কিত জায়গায় মসজিদ নির্মাণ কেন করা হবে? ইসলাম কি বিতর্কিত জায়গায় মসজিদ নির্মাণের অনুমতি দেয়? কখনোই না। ইসলামের প্রাথমিক যুগে ইসলামের একটি কর্তৃপক্ষ ছিল। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত হতো কোথায় মসজিদ হবে কি হবে না। দখল করা জমিতে মসজিদ হয় না। আল্লাহ পবিত্র কোর’আনে জিদের বশে ও মুমিনদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির জন্য নির্মিত মসজিদে সালাত আদায় করতে রসুলকে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, তুমি কখনো সেখানে দাঁড়াবে না, তবে যে মসজিদের ভিত্তি রাখা হয়েছে তাকওয়ার (আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে) উপর প্রথম দিন থেকে, সেটিই তোমার দাঁড়াবার যোগ্য স্থান। [সুরা তাওবা: ১০৮]। আল্লাহর রসুল মসজিদে নববীর জমিটুকু দানসূত্রে গ্রহণ করেন নি, যদিও সেটা নিষিদ্ধ হতো না। তিনি জমির মূল্য পরিশোধ করে তারপর সেই জমিতে মসজিদ নির্মাণ করে আমাদের জন্য আদর্শ রেখে গেছেন যেন কোনো মসজিদের স্থান নিয়ে কোনোদিন কোনো বিতর্ক ওঠার সুযোগও না থাকে।
আজকে যেমন যার খেয়াল হলো আর মসজিদ দিয়ে দিলাম এমন ব্যবস্থা ইসলামে ছিল না। কারণ মসজিদ তো কেবল উপাসনালয় নয়, এটি ছিল সরকারী কার্যালয়। সরকারী কার্যালয় কি যে যার মতো তৈরি করতে পারে? বর্তমানে আমরা দেখি কোনো জমিকে জবরদখল করার জন্য সেখানে মসজিদ নির্মাণ করে ফেলা হয়, যেন জমির মালিক কোনোভাবেই জায়গাটির দখল গ্রহণ করতে না পারে। মসজিদ ভেঙে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করার সাহস কেউ করবে না। এদেশে হাজার হাজার মসজিদ আছে বিতর্কিত জমির উপর। তেমনি ভারতে বহু মন্দির আছে বিতর্কিত জায়গায়, মুসলিমদের জায়গা দখল করে। বাবরি মসজিদ ভেঙ্গেই তাদেরকে মন্দির বানাতে হবে কেন? এত বড় ভারতে জায়গার কি অভাব ছিল? না। আসলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধাতে হবে, রাজনীতি করতে হবে, শক্তি প্রদর্শন করতে হবে, স্বার্থ হাসিল করতে হবে – এটাই বড় কথা। প্রকৃত মোমেনরা ধর্মকে ধারণ করে আর ধর্মব্যবসায়ীরা ধর্মকে ব্যবহার করে। কাজেই এ সব বিষয়ে সকল বিবেকসম্পন্ন মানুষকে সুচিন্তিতভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। খুব বিপদজনক সময় পার করছে মানবজাতি।
সরকারের দমন পীড়নে কোনঠাসা ইসলামি দলগুলো রাজনৈতিক হোক বা জঙ্গিবাদী হোক, তারা সবাই মরিয়া হয়ে ইস্যু সন্ধান করছে। যে কোনো বিষয় নিয়ে হোক সরকারকে কোনঠাসায় ফেলে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। এখন তা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হোক, এয়ারপোর্ট নিয়ে হোক, কয়লা খনি নিয়ে হোক, সেলিম ওসমান নিয়ে হোক, বিদ্যুৎ, রাষ্ট্রধর্ম, শিক্ষা ব্যবস্থা ইত্যাদি যা খুশি নিয়েই হোক এটা ইস্যু তাদের লাগবে। তাদের এই অভিসন্ধি অসৎ তথাপি ধর্মানুভূতি জাগ্রত হওয়ার ভয়ে তাদেরকে তোয়াজ করতে করতে সরকার বেসামাল।
মুসলিম জাতির ধর্মীয় সেন্টিমেন্টকে বার বার অপ্রয়োজনীয় সহিংসতায় ব্যবহার করা হচ্ছে, অপচয় করা হচ্ছে, ভুল খাতে প্রবাহিত করা হচ্ছে। কিন্তু এতে করে জাতির কোনো উপকার হচ্ছে না। দিনকে দিন শুধু ঘৃণার বিস্তার হচ্ছে। মুসলমানরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হবে না, সুশৃংখল হবে না, দীনের বিষয়ে তাদের আকিদা ঠিক করবে না, একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে তারা পরিচালিত হবে না, শিরক-কুফর ত্যাগ করবে না, সত্যদীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করবে না – কাজের কাজ কিছুই করবে না শুধু যে যেদিক থেকে পারে ফতোয়াবাজি করে, উত্তেজনা সৃষ্টি করে সেটাকেই জেহাদ বলে চালাতে চাইবে আর ঝাঁকে ঝাঁকে ধর্মান্ধ জনতা উন্মাদের মতো হৈ চৈ লাগিয়ে দেবে – এটা মুসলিম দূরে থাক কোনো সুস্থ জাতির চরিত্র হতে পারে না। কিন্তু জেহাদ আর হুজুগ, দাঙ্গা এক কথা নয়। জোর যার মুল্লুক তার – এই নীতিতে যেখানে হিন্দুরা সংখ্যায় কম সেখানে তাদেরকে জবাই দেওয়ার জন্য তলোয়ার শানানো হচ্ছে, আর যেখানে মুসলমান সংখ্যায় কম সেখানে তাদেরকে বলি দেওয়ার জন্য খড়গ ধারানো হচ্ছে। মনে হচ্ছে যে উন্মাদনাই ধর্ম। এভাবে হিন্দুদেরকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাবাজ বানানো হয়েছে, মুসলমানদেরকও সাম্প্রদায়িক জঙ্গি বানানো হচ্ছে। বানাচ্ছে উভয় ধর্মের ধ্বজাধারীরা, আলেম ও পুরোহিতরা। কিন্তু ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা তাদের কারো মধ্যেই নেই, কোনো নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষও নেই।
প্রকৃত সত্য হচ্ছে হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ খ্রিষ্টান সবাই একই বাবা-মা আদম হাওয়ার সন্তান। তারা সবাই ভাই ভাই। আমি মানুষ হয়ে মানুষকে ঘৃণা করতে পারি না। আমি ঘৃণা করব অন্যায়কে, পাপকে। কোনো হিন্দু-নাস্তিক-খ্রিষ্টান যদি সত্যকে আলিঙ্গন করে সে অমুসলিম হলেও প্রশংসার যোগ্য, যে মুসলিম হয়েও সত্যকে অস্বীকার করে সে নিন্দনীয়। আর যে সত্যের বিরুদ্ধে দাড়ায় সে আলেম হোক কি খ্রিষ্টান হোক অথবা নাস্তিক হোক সে আল্লাহর ভাষায় কাফের। তার বিরুদ্ধেই সবার সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তোলাই হচ্ছে জেহাদ। ফলপ্রসূ কিছু করার ক্ষেত্রে কারো উৎসাহ নেই, সবাই মিথ্যাকে ধারণ করে বসে আছে এবং হুজুগ আর উন্মাদনায় গা ভাসাচ্ছে। এই পরিস্থিতির অবসান হোক-এটা কামনা করি।

লেখক: আমীর, হেযবুত তওহীদ

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *