জাতীয়
স্বাধীনতার চেতনাকে নস্যাৎ করতেই ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড: প্রধানমন্ত্রী
তিনি বলেন, ১৫ই আগস্ট শুধু একটি পরিবারকেই হত্যার উদ্দেশ্য ছিলো না। এ হত্যার পরিকল্পনা ছিলো বাঙালি জাতির বিজয়কে হত্যা করা। যে আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিলো সেই আদর্শকে হত্যার চেষ্টা।
মঙ্গলবার বিকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর প্রাঙ্গণে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ কৃষক লীগ আয়োজিত স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি এবং আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের পর আমরা দেখেছি যে শক্তিকে আমরা পরাজিত করেছিলাম সেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকেই দোসর বানাবার চেষ্টা করা হয়। যেটা সবসময় আমার জন্য দুঃখজনক এবং যেটা আমি সবসময় চিন্তা করি, সেটা হলো এই হত্যাকাণ্ড। যারা ঘটালো, তারা প্রতিনিয়ত আমাদের বাসায় যাতায়াত করতো।
খুনিরা কেউই অপরিচিত ছিলেন না। সেই পাকিস্তানি শত্রুরা যেটা পারে নাই, ঘরের আপনজন হয়ে, দিনরাত যারা ঘোরাঘুরি করতো তারাই বেঈমানি করলো। তিনটি বাড়িতে একইসঙ্গে হত্যাকাণ্ড ঘটালো। তিনি বলেন, যেহেতু আমাদের বাসাটা ছিলো সকলের জন্য উন্মুক্ত। কাজেই যে কোন সময় এসেই সোজা ঘরে ঢোকা বা বসে থাকা, জিয়াউর রহমান এবং তার স্ত্রী খালেদা তারাও প্রতিনিয়ত এই কাজটিই করতো। তারা প্রায়ই এ বাসায় যাতায়াত করতো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভাবা যায়, এতো কাছে থেকে, স্নেহ পেয়ে, এতকিছু পাবার পরও এতো বড় বেঈমানি তারা কিভাবে করলো! মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কামাল দেরাদূনে প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যায়। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তাকে জেনারেল ওসমানীর এডিসি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। মেজর নূর এবং কামাল দু’জনেই ছিলেন ওসমানীর এডিসি এবং একসাথে তারা কাজ করেছেন। কর্নেল রশিদ খুনি মোশতাকেরই আত্মীয়। আর খুনি মোশতাক আওয়ামী লীগেরই নেতা, ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন গঠিত হয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক বঙ্গবন্ধুকে করা হয় সেই সাথে খন্দকার মোশতাকও যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। তিনিও একই কেবিনেটের মন্ত্রী ছিলেন যিনি বেঈমানি করেন।
জিয়াউর রহমান সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মেজর জিয়াকে পদোন্নতি দেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু। তিনি মেজর থেকে মেজর জেনারেল পর্যন্ত পদোন্নতি পান জাতির জনক বঙ্গবন্ধুরই হাতে। তার (জিয়ার) পারিবারিক সমস্যা ছিলো তার স্ত্রী সাথে। সেটাও জাতির পিতাই সমাধান করে দিয়েছিলেন। মাসের মধ্যে দুবার, তিনবার স্ত্র্রীকে নিয়ে আমাদের বাসায় চলে আসতো (বঙ্গবন্ধু ভবন ধানমন্ডি ৩২ এ)।
তিনি বলেন, হয়তো এই কথাগুলো আপনারা অনেকে জানেন না, আমি মনে করি এই কথাগুলো আপনাদের জানা উচিত। বাংলাদেশের মানুষের জানা উচিত, যে কিভাবে কতবড় বেইমানি হয়েছে। পাকিস্তানিরা যে বারবার চেষ্টা করেছে জাতির পিতাকে হত্যার, মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসি দিতে, এই পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে, এমনকি ’৭১ এর ২৬ মার্চ যখন তিনি (বঙ্গবন্ধৃ) স্বাধীনতার ঘোষণা দেন, তখন তাকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। তার (বঙ্গবন্ধুর) ফাঁসির হুকুম হলো- তার সেলের কাছে কবর খোড়া হলো, তারপরেও বিশ্বজনমতের চাপে ও ইয়াহিয়া খানের পতনের ফলে বঙ্গবন্ধু প্রাণে বেঁচে যান। এমনকি স্বাধীনতা ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনী যখন বঙ্গবন্ধুর বাড়ি আক্রমণ করে তখনই তাদের লক্ষ্য ছিলো বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করবে, কিন্তু পারে নাই।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহউদ্দিন নাছিম এবং এনামুল হক শামীম, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলি এবং কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামসুল হক রেজা অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন
সভাপতিত্ব করেন কৃষক লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী কৃষক লীগের প্রকাশনা ‘কৃষকের কন্ঠ’র মোড়ক উন্মোচন করেন। বাসস