Connect with us

দেশজুড়ে

হুমকির মুখে চিনি শিল্প কুষ্টিয়া চিনিকলে ২৬ কোটি ৬৪ লক্ষ টাকার চিনি অবিক্রিত!

Published

on

জেলা প্রতিনিধি, কুষ্টিয়া:
রাজস্ব আয়ের অন্যতম উৎস চিনি শিল্প। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আজ সেই চিনি শিল্প প্রায় হুমকির মুখে। এর প্রভাব পড়েছে চিনিকলগুলোতেও। কুষ্টিয়ার ঐতিহ্যবাহী জগতী চিনিকলের দশাও এমনটাই।
২০১৪-১৫ মৌসুমের আখ মাড়াই শুরু হয়েছে গত ২ ডিসেম্বর। ধারণা করা হচ্ছে চলতি মাসের ১৪ ফেব্র“য়ারি ২০১৫ মৌসুমের আখ মাড়াইয়ের কাজ শেষ হবে। চলতি মৌসুমে ২ হাজার ৮শত মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের আশা করছে চিনিকল কর্তৃপক্ষ।
সূত্রে জানা যায়, বাজারে চিনির মূল্য কম থাকায় এবং চিনি বিক্রি না হওয়ার দরুন আখচাষিরা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না যার ফলে সাধারণ আখচাষিরা উৎপাদন খরচের কম মূল্যে পাওয়ায় দিন দিন আখ চাষের উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে। কেজি প্রতি আখ চাষিরা ২.৫০ টাকা দরে পেয়ে থাকেন যা টন প্রতি ২ হাজার ৫ শত টাকা পেয়ে থাকেন।
গত তিন মাড়াই মৌসুমের মোট ৭ হাজার ২০০ শত মেট্রিক টন চিনি এখনও কুষ্টিয়ার চিনি কলের গোডাউনে পড়ে আছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য ২৬ কোটি ৬৪ লক্ষ টাকা। ২০১৩-১৪ আখ মাড়াই মৌসুমে ১ হাজার ২০০শ’ মেট্রিক টন, ২০১২-১৩ আখ মাড়াই মৌসুমে ৪ হাজার ৫০০ শ’ মেট্রিক টন ও ২০১১-১২ আখ মাড়াই মৌসুমের ১ হাজার ৫০০ শ’ মেট্রিক টন চিনি আজও অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে আছে। পূর্বে টন প্রতি ৫০ হাজার টাকা থেকে কমাতে কমাতে বর্তমানে ৩৭ হাজার টাকা প্রতি টনের মূল্য নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে না আমাদের এই দেশিও চিনি। এদিকে গত তিন মৌসুমের উৎপাদিত চিনি থাকতেই আবার চলতি মৌসুমের নতুন করে যোগ হচ্ছে ২ হাজার ৮ শত টন।
মিল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, আমাদের দেশিও চিনির উৎপাদনের প্রাচুর্য্য থাকা সত্ত্বেও বাইরে থেকে চিনি আমদানি করা হচ্ছে। অন্যদিকে কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ক্যামিক্যাল যুক্ত চিনি বাজারজাত করছে যার ফলসরূপ দেশিও উৎপাদিত চিনির চাহিদা কমে যাচ্ছে এবং সরকারকে লসের খাতা গুণতে হচ্ছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুষ্টিয়া চিনিকলের অধিকাংশ যন্ত্রাংশ ৫০ বছরেরও বেশি পুরাতন যা ব্যবহারের প্রায় অযোগ্য হয়ে পড়েছে। চিনি উৎপাদনের যন্ত্রাংশ চালনাকারীদের সাথে কথা বললে তারা জানান, অধিকাংশ যন্ত্রপাতি অনেক পুরাতন যার ফলে একাধারে তা চালনা করা যায় না। মাঝে মাঝে বিরতি দিয়ে চালাতে হচ্ছে। যার ফলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না। ধ্বংসপ্রায় এই শিল্প রক্ষা করতে হলে সরকারের সঠিক পদক্ষেপ এবং অতিসত্বর আধুনিক যন্ত্রাংশ সংযোজন না করলে অল্পদিনেই তা একেবারেই ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়বে।
আখচাষি ফেডারেশনের সদস্যদের সাথে কথা বললে তারা জানান, আমরা আখ চাষে লাভবান হতে পারছি না। লাগানো থেকে শুরু করে মিলে আনা পর্যন্ত আমাদের যে খরচ হয় সেই অনুপাতে লাভের পরিমাণ অতি সামান্য। এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে আখচাষি অনেক কম হয়ে যাবে। আমাদের লাভের পরিমাণ বেশি এবং ন্যায্য মূল্য পাওয়ার জন্য এখন পর্যন্ত আন্দোলন করে যাচ্ছি। এদিকে মিল কর্মচারী-কর্মকর্তাদের দুই মাসের বেতন-ভাতা বকেয়া থাকায় তারা মানবেতর জীবন যাপন করছে।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া চিনিকল শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ চিনিকল শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম জানান, শুধু কুষ্টিয়া চিনিকলের এই অবস্থা নয়, সারা বাংলাদেশের প্রত্যেক চিনিকলেই কোটি কোটি টাকার চিনি অবিক্রিত অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া যে সব কৃষকেরা আখচাষ করছে তারা আজ সঠিক মত মূল্য না পাওয়ায় আখচাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। অনেক চড়াই উৎরায়ের মাঝেও এখন পর্যন্ত কুষ্টিয়ার চিনিকল চলছে। অতিসত্বর সঠিক ব্যবস্থাগ্রহণ না করা হলে অল্প সময়ের মধ্যেই তা ধ্বংস হয়ে যাবে। আমরা ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকার ঋণ নিয়ে বিগত সময়ে এবং চলতি মৌসুমে বর্তমান সরকার শিল্পবান্ধব, ইতোমধ্যেই সরকার পে- কমিশন ঘোষণা করেছেন। সরকার মহাদয়ের নিকট আমাদের উদাত্ত আহ্বান এই যে, যে সব কর্মচারী কাজ করছে তাদের জন্য মজুরি কমিশন ঘোষণা করা হোক।
কুষ্টিয়া চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহসান সিদ্দিক’র সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, চিনিকলের অব্যবহারযোগ্য যন্ত্রাংশ পরিবর্তন এবং গত তিন মৌসুমের চিনি বিক্রি না হওয়ার বিষয়টা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট জানানো হয়েছে। চিনি এখন অনেক ভাল রয়েছে। আমরা এই চিনি বাজারজাত করার চেষ্টা করছি। আমরা ঠিকমত কোন ক্রেতা পাচ্ছি না। এ বিষয়ে সবার সার্বিক সহযোগিতা পেলে অনেক ভাল হয়। অন্যদিকে উৎপাদিত চিনির মূল্য কম হওয়ায় আখের মূল্যও অনেক কম যার ফলে আখচাষিরা কম লাভ হওয়ায় আখ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *