Connect with us

জাতীয়

৪৭ জেলার ৬২০ ইউপিতে ভোট আজ

Published

on

up
নিজস্ব প্রতিবেদক:
আজ দেশের ৪৭ জেলার ৬২০টি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) তৃতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তৃতীয় ধাপে তৃণমূল পর্যায়ের এই ভোট উৎসবকে নির্বিঘ্ন করতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ইতোমধ্যে সব ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
নির্বাচনকে ঘিরে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে সব ধরনের প্রচারণা বন্ধ হয়ে গেছে। মাঠে নেমেছে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনী। ব্যালট পেপার, ব্যালট বাক্সসহ সব ধরনের নির্বাচনী সামগ্রী বিশেষ নিরাপত্তায় আজই পৌঁছে যাবে কেন্দ্রে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এবারের নির্বাচন অবাধ করতে ইসিকে কঠোর হয়ে তাদের দায়িত্ব পালনের তাগিদ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাকে স্বাগত জানিয়ে ইসিও নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দিয়েছে। ইসির নির্দেশনায় ভোটকেন্দ্রে কোন ধরনের দাঙ্গা, সন্ত্রাস বা অনিয়ম সংঘটিত হলে কিংবা আইন ও বিধির কোন ব্যত্যয় ঘটলে তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে নির্দেশনায়।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পেয়ে নির্বাচন সুষ্ঠু করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রথম দুই ধাপের তুলনায় তৃতীয় ধাপে সুন্দর ভোট হবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে নির্বাচন কমিশনার শাহ নেওয়াজ বলেছেন, ‘অপরাধী যে পর্যায়ের হোক, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারা অবহেলা করলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সদা সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। তাদের কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যেন সন্ত্রাসী কার্যক্রম শক্ত হাতে হ্যাল্ডেল করা হয়।’
তিনি বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আরো শক্ত অবস্থানের কথা জানিয়ে আশ্বস্ত করেছে। আগের অভিজ্ঞতা নিয়ে তাদেরকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। তৃতীয় ধাপের ভোটে মোট ২ হাজার ৯৯২ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে মোট ১৪টি রাজনৈতিক দল ১ হাজার ৫৪৩ জন প্রার্থী দিয়েছে। অবশিষ্ট ১ হাজার ৪৪৯ জন প্রার্থী স্বতন্ত্র থেকে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগ ৬২১ জন, বিএনপি ৫৭৫ জন, জাতীয় পার্টি ১৮৪ জন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ ২৮ জন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ১৪ জন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ৯৩ জন, জাতীয় পার্টি-জেপি ২ জন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি ১ জন, খেলাফত মজলিস ৪ জন, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি ১ জন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি ৩ জন, ইসলামী ঐক্যজোট ৩ জন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ১৩ জন ও অন্যান্য ১ জন প্রার্থী দিয়েছে।
নির্বাচনকে ঘিরে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে মাঠে নেমেছে বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা। একইসঙ্গে আচরনবিধি লঙ্ঘন ও নানা অনিয়ম ঠেকাতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের পাশাপাশি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরাও অপরাধ তদারকিতে মাঠে থাকবেন।
ইসি সচিবালয়ের উপসচিব সামসুল আলম জানান, ভোটের দুই দিন আগে থেকে মাঠে নামছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সহিংসতা রোধে বাড়তি কোনো নিরাপত্তা নেয়া হয়নি বলেও তিনি জানান। তবে এবারের নির্বাচনে সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের পাশাপাশি অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় আরও কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটেলিয়ন আনসারের সমন্বয়ে প্রতি ইউনিয়নে একটি করে মোবাইল ফোর্স ও প্রতি তিন ইউপির জন্য স্ট্রাইকিং ফোর্স রাখা হয়েছে। অন্যদিকে প্রতি উপজেলায় ২টি করে র‌্যাবের মোবাইল টিম ও ১টি স্ট্রাইকিং টিম এবং প্রতি উপজেলায় ২ প্লাটুন বিজিবি মোবাইল ও ১ প্লাটুন স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকছে।
নির্বাচনে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় বৃহস্পতিবার বহিরাগতদের নির্বাচনী এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসি। ইসির উপ-সচিব মো. সামসুল আলম রিটার্নিং কর্মকর্তাদের এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠিয়েছেন। স্বেচ্ছায় এলাকা না ছাড়লে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে এবিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হয়েছে।
ভোটের মাঠের সার্বিক নিরাপত্তায় ভোটের দিনের পূর্ববর্তী রাত ১২টা থেকে ভোট গ্রহণের দিন মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত বেবিটেক্সি, অটোরিকশা, ইজিবাইক, ট্যাক্সি ক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, বাস, ট্রাক, টেম্পো প্রভৃতি যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ভোটগ্রহণের পূর্ববর্তী তিনদিন থেকে ভোটগ্রহণের দিন মধ্যরাত পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। এছাড়া ভোটের দিনের পূর্ববর্তী রাত ১২টা থেকে ভোট গ্রহণের দিন মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত লঞ্চ, ইঞ্জিনচালিত সব ধরনের নৌ-যান ও স্পিটবোট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে বলা হয়েছে। তবে ইঞ্জিনচালিত ছোট নৌযান বা জনগণ তথা ভোটারদের চলাচলের জন্য ক্ষুদ্র নৌযান চলাচল নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে।
নির্বাচনী পরিবেশ বাজায় রাখার ব্যর্থতায় বৃহস্পতিবার গাজীপুরের তিন পুলিশ কর্তকর্তাকে প্রত্যাহার করেছে ইসি। জেলার পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ এবং কাপাসিয়া থানার ওসি মীর রকিবুল হক ও শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামানকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার এ তিন কর্মকর্তাকে প্রত্যাহারের নির্দেশনা সংক্রান্ত চিঠি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ও পুলিশের মহা পরিদর্শকের কাছে পাঠানো হয়েছে।
ইসির উপ সচিব সামসুল আলম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, গাজীপুর জেলার ইউপি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে এসপি ও দুই ওসিকে প্রত্যাহার করে তদস্থলে উপযুক্ত কর্মকর্তা পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে ইসি।
এ পর্যন্ত দুই ধাপের ইউপি ভোট হয়েছে। ইতোমধ্যে অন্তত ৮ জন ওসিকে প্রত্যাহার করা হলেও এসপি প্রত্যাহারের ঘটনা এটিই প্রথম।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *