জাতীয়
লাখো বাঙ্গালীর প্রাণের উৎসব- বইমেলার সূচনা
দুয়ার খুলেছে অমর একুশে গ্রন্থমেলার। কয়েক দশক ধরেই ফেব্র“য়ারির প্রথম দিন এভাবেই মাসব্যাপী এ বইমেলার দ্বার উন্মুক্ত হয়। মিলনমেলায় পরিণত হয় বাঙালির এ প্রাণের উৎসব। নব আঙ্গিকে সজ্জিত এবারের বইমেলায় ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে সম্মিলন ঘটেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনারও। তবে মেলার আয়োজক বাংলা একাডেমির নিজস্ব প্রাঙ্গণের সঙ্গে গতবারের মতোই যুক্ত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিধন্য পুণ্যভূমি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। শীতের বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষ হতেই বইপ্রেমীদের আগমনে সরব হয়ে ওঠে গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গন। এখানে প্রাণ ও মননের মেলার সঙ্গে আত্মসংযোগ ঘটিয়েছেন গ্রন্থানুরাগীরা। নতুন বইয়ের সন্ধানে স্টলে স্টলে ঘুরতে দেখা গেছে বইপ্রেমীদের। খুঁজেছেন পছন্দের লেখকের গল্প, কবিতা কিংবা উপন্যাস। কোনো কোনো পাঠক আবার গবেষণাধর্মী কিংবা প্রবন্ধের বই তালাশ করেছেন। বইপ্রেমীদের মধ্যে কেউ কেউ প্রথম দিনেই বই কিনেছেন। আবার অনেকেই শুধু নতুন বইয়ের খোঁজ নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। মাসব্যাপী চলমান বইয়ের মেলায় সুবিধামতো সময়ে যেকোনো দিন এসে কিনে নেবেন নিজের আগ্রহের বইটি। মেলার প্রথম দিনেই গ্রন্থানুরাগীর ব্যাপক সমাগম না হলেও চোখে পড়ার মতো পাঠকের দেখা ঠিকই মিলেছে। মেলার দুই চত্ত্বর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মনের আনন্দে ঘুরে বেরিয়েছেন এসব পাঠক। তাই বলা যায়, লেখক-প্রকাশক ও আয়োজক- সবার মানসিক সংযোগ ঘটিয়ে যাত্রা শুরু করল মাসব্যাপী একুশের বইমেলা। রবিবার বেলা ৩টায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বসে অমর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্বোধনী আয়োজন। প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রন্থমেলা ও আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। সাহিত্য সম্মেলন এবারের গ্রন্থমেলার নতুন মাত্রা হিসেবে সংযোজিত হলো।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে বলেন, “সোমবার থেকে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এ পরীক্ষা শুক্রবার পর্যন্ত পেছানো হয়েছে। আমরাতো আর শিশুদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলতে পারি না।”
অনুষ্ঠানে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, “সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছে বিএনপি-জামায়াত। নিরাপরাধ মানুষকে পুড়িয়ে মারছে তারা। একুশ মানে মাথা নত না করা। একুশের বইমেলায় আমরা এ প্রতিজ্ঞা করবো যে পরিস্থিতি যতো প্রতিকূল হোক, আমরা কারো কাছে মাথা নত করবো না।” বইমেলার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সারা বছর আমাদের লেখক-প্রকাশক-পাঠক সাধারণ এ মেলার অপেক্ষায় থাকেন। এ গ্রন্থমেলা উপলক্ষে প্রকাশিত নতুন নতুন বই আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক অগ্রযাত্রার চালচিত্রই শুধু পরিস্ফুটিত করে না, বরং এর মধ্য দিয়ে আমাদের সাংস্কৃতিক জগতেও সৃষ্টি হয় ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার।
বাংলা একাডেমির সীমিত পরিসর ছাপিয়ে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গ্রন্থমেলা বিস্তারের মধ্য দিয়ে নতুন নতুন প্রকাশকদের যেমন সুযোগ করে দেওয়া সম্ভব হবে, তেমনি এ গোটা অঞ্চলে সাংস্কৃতিক প্রণোদনা সৃষ্টি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন মেলার আয়োজকবৃন্দ। অমর একুশে বইমেলার তথ্য কেন্দ্র থেকে জানা গেছে, যথারীতি মেলার প্রথম দিনে কোনো বই প্রকাশিত হয়নি। মেলার দ্বিতীয় দিন (সোমবার) থেকে নতুন বইয়ের নাম ঘোষণা করবে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ।