Connecting You with the Truth

শরণখোলায় অপহরণ আতঙ্কে সাধারণ মানুষ

Atonkoবাগেরহাট (শরণখোলা) সপ্রতিনিধি: শরণখোলায় আবারো বিভিন্ন স্থানে অপরিচিত লোকদের আনাগোনা বেড়ে চলেছে। দক্ষিণাঞ্চলের সুন্দরবন ঘেঁষা সর্বশেষ উপজেলা শরণখোলার বিভিন্ন পল্লীতে হঠাৎ করে অপরিচিত লোকদের ভিন্ন ভিন্ন পেশায় লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

সম্প্রতি উপজেলার বিভিন্ন বাজারে গ্রামে-গঞ্জে ব্যাপকভাবে অপরিচিত লোকদের বিচরণ সচেতন মহলকে ভাবিয়ে তুলেছে।

কাউকে রাতের বেলায় ফেরি করে ভাজি, পুরি, বিক্রি করতে দেখা যায়। আবার কাউকে বিভিন্ন আড্ডায় ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। সম্প্রতি পুলিশের দেয়া তথ্যে এলাকা থেকে মেহেদী হাসান (১৫), ইবনে তাইবসহ (১৪),  বেশ কয়েকজনের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা জানা যায়। ইতোপূর্বে উপজেলার টি টি এ্যান্ড ডিসি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির দুইজন ছাত্রীকে স্কুল থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে অপহরণ করে ইজিবাইকযোগে নিয়ে যাওয়ার পথে পল্লীমঙ্গল এলাকায় জনতার হাতে ধাওয়া খেয়ে অপহরণকারীরা পালিয়ে যায়। পরে এলাকাবাসী তাদের উদ্ধার করে বাড়িতে পৌঁছে দেয়। উদ্ধারকারী শিশু দুটি গোলবুনিয়া গ্রামের ইব্রাহিম ও নুর ইসলাম হাওলাদারের কন্যা। এলাকা ঘুরে এ ছাড়াও অনেক শিশু-কিশোরের নিখোঁজের ঘটনা জানা গেছে। কিন্তু এর সঠিক হিসাব থানা পুলিশের জানা নেই। এতে জনমনে ব্যাপক আতঙ্ক বিরাজ করছে।

এলাকাবাসী জানান, অতীতে একাধিক অপরিচিত সংঘবদ্ধ চক্র বিভিন্ন পরিচয়ে ভিন্ন ভিন্ন পেশা নিয়ে এলাকায় ঢুকে পড়ত। কেউ ভাঙ্গারীব্যবসা, ফেরিওয়ালা, মাছব্যাবসায়ী, মোটরসাইকেল ড্রাইভার, কেউবা বৈদ্ধ, ওঝা ও পাগল বেশে যার যেমন প্রয়োজন তারা তেমন রূপ ধারণ করত। এলাকার লোকজনের সাথে সু-সম্পর্ক গড়ে তুলত। একেকটি চক্র ভিন্ন ভিন্ন ভয়াবহ উদ্দেশ্য নিয়ে একেক জায়গায় অবস্থান করত। নজরদারিতে রাখত প্রশাসনসহ এলাকাবাসীকেও।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অতীতে অপরিচিত চক্রের দ্বারা উপজেলার রাজৈর গ্রামে কথিত পিলার নামক বস্তু নিয়ে ৪ ব্যক্তিকে হত্যার ঘটনা ঘটে। একই উপজেলায় টাকা ছিনতাইকে কেন্দ্র করে  লাকুড়তলা গ্রামে ৪ ব্যক্তি ও উত্তর তাফালবাড়ি গ্রামে ২ ব্যক্তিকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এছাড়াও এলাকায় তৎকালীন সময় ব্যাপক চুরি-ডাকাতি-ছিনতাইসহ নারী ও শিশু পাচারের ঘটনা ঘটত বলে এলাকাবাসী জানায়।

বেশ কয়েকদিন ধরে বঙ্গোপসাগরে বনদস্যু ও জলদস্যুদের বেপরোয়া গণডাকাতি ও মুক্তিপনের দাবি ও অপহরণের ঘটনায় সর্বশান্ত হয়ে ফিরে এসে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলেরা জানিয়েছে। জেলেদের বরাত দিয়ে উপজেলা জেলে সমিতির সভাপতি দুলাল ফরাজী ও জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি আ. রহিম হাওলাদার জানান, অনেক জেলেরা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসে সাগরে মাছ শিকার করছে। তাদের কেউ কেউ জেলে ছদ্মবেশ ধারণ করে এ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটাতে পারে। এ ধরণের দুর্ঘটনা এড়াতে সাগরে টহল বৃদ্ধি করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান তিনি।

কোস্টগার্ডের শরণখোলা কন্টিনজেন্ট কমান্ডার সামসুল হক জানান, বিষয়টি তার জানা নেই, তবে খোঁজ নিয়ে মুখোশধারী জেলেদের সনাক্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য বাদল জোমাদ্দার জানান, কয়েক বছর আগে এই অপরিচিত লোকেরাই আমার ওয়ার্ডে স্বপরিবারে ৪ জনকে হত্যা করেছিল। ইদানীং আবার অপরিচিত লোকের আনাগোনা দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে জনগণকে সচেতন করার পাশাপাশি অপরিচিতদের নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান দুলাল জানান, আমড়াগাছিয়া, রাজাপুর, বান্ধাঘাট এলাকায় ব্যাপকভাবে অপরিচিত লোকের আনাগোনা বেড়েছে। আমার ইউনিয়নে গত দু’মাসে চুরি, ওঝা সেঝে প্রতারণা, অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। অপরিচিতদের জিজ্ঞাসা করলে তারা এলাকার প্রভাবশালী লোকের আত্মীয় বলে পরিচয় দেয়। ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিলন জানান, অপরিচিতদের সনাক্ত করে তাদের কর্মকাণ্ডের উপর প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো উচিত। বাগেরহাট পি সি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তার জানান, বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক, প্রশাসন এদেরকে ঠেকাতে না পারলে বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তিনি প্রশাসনকে বহিরাগত লোকদের উপর নজরদারি বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন।

শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম জানান, কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ প্রশাসন সজাগ রয়েছে। পাশাপাশি জনগণকেও সজাগ থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

Comments
Loading...