ঢাকা বিভাগ
অসহায় প্রতিবন্ধীদের স্বপ্ন নির্মাতা ফরিদপুরের বিপ্লব
জীবন বড়-ই বহুরুপী । কখন যে কি হয় জীবন নামের এই ছোট্ট শব্দটিতে তা বলাটা বোধহয় বড়-ই দুঃসাধ্য । এই যে ভালো থাকা আবার কখনওবা জীবনের কষাঘাতে নিশ্চল হয়ে পঙ্গুত বরণ করা । সবই যেন জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ । তবে,পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ আছেন যারা শুধু নিজেদের কথাই নয়, ভাবেন অসহায় প্রতিবন্ধী ও বস্তির ঝরে পড়া ছেলে-মেয়েদের বিদঘুট জীবনের কথাও ।
এমনই একজন সহানুভূতিময় মানুষ যিনি সর্বদা সমাজের অবহেলিত প্রতিবন্ধীদের স্বপ্নের কথা ভেবে ভেবে দিন কাটান তিনি হলেন ফরিদপুরের বিপ্লব । যার পুরো নাম বিপ্লব কুমার মালো । কাজ করেন গ্রাম উন্নয়ন সংস্থার (ভিডিও) নির্বাহী পরিচালক হিসেবে । ১৯৯০ সালে বস্তির নিরক্ষর ও প্রতিবন্ধীদের শিক্ষাদানের মাধ্যমে আত্মকর্মস্থান সৃষ্টি করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটির আত্মপ্রকাশ করে । জানা যায়, পবন কুমার আচার্য নামে স্থানীয় এক ব্যক্তির ৪ বন্ধু এ.কে.এম সামচুল আলম,রুবেল বিশ্বাস,শামিমা সুলতানা ও অশোক কুমার সিংহ মিলে ফরিদপুর শহরের পাশ্ববর্তী আদর্শ নগর নামক বস্তিতে অবহেলিত বয়স্কদের নিরক্ষরতা দূর করার লক্ষ্যে প্রথমত প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন । আর সে সময় প্রতিবন্ধীদের অবহেলা করে বলা হতো “পঙ্গু” ।
স্থানীয়রা জানায়, ছাত্রাবস্থা থেকেই পবন কুমারসহ তাঁর চার বন্ধু হকি খেলায় অত্যন্ত পারদর্শী ছিলেন । তাঁরা বিভিন্ন জেলাতে ভাড়ায় হকি খেলে যে অর্থ উপার্জন করতেন সে টাকা দিয়েই প্রাথমিক অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটিতে অর্থ সরবরাহ করতেন । বয়স্ক শিক্ষা,দর্জি বিজ্ঞান,শিশু স্বাস্থ্য সেবা ও প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির মহসী উদ্যোগও তাঁরা এ ছাত্রাবস্থাই হাতে নেন । তবে, পরবর্তীতে পবন কুমারসহ তাঁর চার বন্ধুর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থায় চাকরী হওয়াতে অর্থ সংকট ও পৃষ্ঠপোষকার অভাবে ২০০৩-২০০৮ পর্যন্ত গ্রাম উন্নয়ন সংস্থা কিছুটা মুখ থুবড়ে পড়ে । কিন্তু ২০১২ সালে বিপ্লব কুমার মালো নির্বাহী প্রধান হিসেবে বিনা পারিশ্রমিকে প্রতিষ্ঠানটিতে যোগদান করেন । এর পর-ই বিপ্লবের একাগ্র প্রচেষ্টায় সার্বিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন (সিএসআইডি) সেন্টার ফর সার্ভিসেস এন্ড ইনফরমেশন অন ডিজঅ্যাবিলিটি নামক একটি বেসরকারি সংস্থা ।তার কিছুদিন পরেই তাদের কাজে অনুপ্রাণিত হয়ে এগিয়ে আসেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের ফরিদপুর জেলা শাখা । এরপর কিছুটা হলেও প্রাণ ফিরে পায় গ্রাম উন্নয়ন সংস্থা ।
প্রতিষ্ঠানটি থেকে সুবিধা পাওয়া শিমুল খাঁন নামে এক প্রতিবন্ধী যুবক জানালেন, বিপ্লবের সাথে তাঁর পরিচয় হয় ২০০৩ সালে । তখন তিনি ফরিদপুর শহরের জর্জ কোর্ট প্রাঙ্গণে একটি চায়ের দোকানে কাজ করতেন । সেখান থেকে বিপ্লব তাঁকে নিয়ে একটা কর্মস্থানের ব্যবস্থা করে দেন । এখন তিনি অনেকটা সাবলম্বী বলেও জানালেন ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফরিদপুর শহরতলীর পুলিশ লাইনের পাঁশে ব্যাপিষ্ট চার্জ মিশন হাউজের মধ্যে ফরিদপুর সোসাইল ক্রেডিট ইউনিয়নের দেয়া একটা অস্থায়ী রুমে প্রতিষ্ঠানটি তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে । তাদের কার্যক্রমে খুশি হয়ে সোসাইল ক্রেডিট ইউনিয়ন ঐ রুমটি ছেড়ে দেন । ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ৭০ জন প্রতিবন্ধী যুবককে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মস্থানের ব্যবস্থা করে দেন গ্রাম উন্নয়ন নামক এ সংস্থাটি ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৯৭ সালে বিপ্লব ফরিদপুর বহুমুখী প্রতিবন্ধী কল্যাণ সংস্থা নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন । ২০১১ সাল পর্যন্ত সেখানে কর্মরত ছিলেন ।
২০১২ সালে তিনি গ্রাম উন্নয়ন সংস্থায় (ভিডিও) নির্বাহী পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন ।
গ্রাম উন্নয়ন সংস্থায় নির্বাহী পরিচালক হিসেবে কাজ করা বিপ্লব কুমার মালো এ প্রতিবেদককে জানান, মানুষ মানুষেরই জন্য । প্রতিবন্ধীরাও তো মানুষ । তারপরেও প্রতিবন্ধীরা সমাজে বারবার নিগৃহিত হচ্ছে । কেউই খবর নেয় না তাঁদের ।
বিপ্লব আরো জানান, ফরিদপুরের প্রতিবন্ধীদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে ফিরে নিয়ে আসাই তাঁর ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা ।
তিনি বলেন, আমরা প্রতিবন্ধীরা নিজেরাই আমাদের সব সমস্যার সমাধান করতে চাই । তবে, কোন প্রতিষ্ঠান সহায়তা করলে হয়তো দ্রুত স্বনির্ভর হতে পারবো ।
বিপ্লব আরো বলেন, তাঁদের একটা ব্যাংক এ্যাকউন্টও রয়েছে । প্রয়োজনে বিত্তবানরা প্রতিবন্ধীদের পাঁশে দাঁড়াতে পারেন । ব্যাংক এ্যাকাউন্ট নং-১১৪৯৮/৩ জনতা ব্যাংক, ফরিদপুর ষ্টেশন রোড শাখা ।